চলতি অক্টোবর অর্থাৎ আশ্বিন-কার্তিক মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে ২টি লঘুচাপ-নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের অতীত পর্যায়ক্রম থেকে জানা যায়, আশ্বিন-কার্তিক মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস এ অঞ্চলে আঘাত হানে ও ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এ মাসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩ দিন বজ্রঝড় বা কালবৈশাখী ঝড় এবং দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪ দিন বজ্রঝড় বা কালবৈশাখী ঝড় সংঘটিত হতে পারে। এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকতে পারে। এ মাসের দ্বিতীয়ার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে পারে।
গতকাল রোববার আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় অক্টোবর মাসের দীর্ঘমেয়াদি উক্ত পূর্বাভাস দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান। পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, অক্টোবর মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় পর্যালোচনায় জানা গেছে, গেল সেপ্টেম্বর অর্থাৎ ভাদ্র-আশি^ন মাসে সার্বিকভাবে সারা দেশে গড়ে স্বাভাবিক (৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি) বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বিভাগওয়ারি বৃষ্টিপাতের হার ও পরিমাণের ক্ষেত্রে তারতম্য বা অসঙ্গতি রয়েছে। রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৩৬.৫ শতাংশ কম, ঢাকা বিভাগে গড়ে ৩.২ শতাংশ কম, অথচ চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে গড়ে ২৫.৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি ঝরেছে। গত আগস্ট মাসে (শ্রাবণ-ভাদ্র) সারা দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৩৬.৪ শতাংশ কম, ভরা বর্ষাকালে গত জুলাই মাসে দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় গড়ে ৫৭.৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বছর ভরা বর্ষাকালে নজিরবিহীন খরা-অনাবৃষ্টির কবলে পড়ে দেশ। এর ফলে আমনসহ ফল-ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়।
গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জানা গেছে, গেল মাসে বঙ্গোপসাগরে তিনটি লঘুচাপ-নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। তবে সেগুলো ক্রমেই দুর্বল হয়ে ভারতের উপকূল হয়ে স্থলভাগের দিকে সরে গেছে। সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর এবং ১০ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর দেশের অধিকাংশ স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়।
এ সময়ে দেশের অনেক স্থানে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হয় এবং কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর তেঁতুলিয়ায় সর্বোচ্চ ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গত মাসে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, ঢাকা ও সিলেট বিভাগে মৃদু তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়। যার মূল কারণ বায়ুমণ্ডলে প্রচুর জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি, প্রখর সূর্যকিরণ এবং সর্বোপরি মৌসুমী বায়ুর দুর্বল উপস্থিতি। ৯ সেপ্টেম্বর সিলেটে সর্বোচ্চ ৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গেল মাসে দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১.৪ এবং ২.২ ডিগ্রি সে. বেশি ছিল।
সাগরে ফের লঘুচাপ : আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন মধ্য-বঙ্গোপসাগর এলাকায় আবারও একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হতে পারে। বৃষ্টির বাহক মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। নতুন করে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে দেশের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত, কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের সুবাদে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ৩ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেয়েছে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায়ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন