শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সীরাত : মানব জীবনের সর্বোত্তম নমুনা-২

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সূরাতুল আহযাবের এই (২১ নং আয়াত) বিখ্যাত আয়াতে ‘তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মাঝে উত্তম আদর্শ’। এতে শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর এই মহান বৈশিষ্ট্য উল্লিখিত হয়েছে। তিনি আল্লাহর বাণী ও বিধান মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আর তাঁর গোটা জীবন ও কর্ম ছিল তারই বাস্তব নমুনা। তাঁর অনুকরণের মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করা সম্ভব। এরপর বলা হয়েছে, এই আদর্শ তাদের জন্য, অর্থাৎ এই আদর্শ দ্বারা তারাই উপকৃত হবে, যারা আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশা করে। আর শেষ দিবসকে ভয় করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে। নবী-আদর্শ দ্বারা উপকৃত কারা হয় তিনি সবার ‘উসওয়া’ ও আদর্শ।

কিন্তু বাস্তবে এই উসওয়া দ্বারা উপকৃত তারাই হবে, যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং আখেরাতকে ভয় করে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশা করে এবং আখেরাতে নাজাতের প্রত্যাশা করে। আর সে কারণে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে। দেখুন, কুরআন মাজীদের ক্ষেত্রেও এই কথা। কুরআন নাযিল হয়েছে সকল মানুষের জন্য। কিন্তু কুরআন দ্বারা উপকৃত হয় তারাই, যাদের মনে আল্লাহর ভয় আছে।

সুরাতুল বাকারার শুরুতে কুরআনের বৈশিষ্ট্য উল্লিখিত হয়েছে : ‘হুদাললিল মুত্তাকীন’, অর্থাৎ এই কিতাব মুত্তাকীদের জন্য হেদায়েত; কুরআন যদিও নাযিল হয়েছে সকল মানুষের হেদায়েতের জন্য কিন্তু বাস্তবে এই কুরআনের মাধ্যমে তারাই হেদায়েত পাবে যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে। হযরত শায়খুল হিন্দ রাহ. বলেছেন, এর কারণ হচ্ছে, যার অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে সেই তো আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দ তালাশ করবে আর তখন সে কুরআনে পেয়ে যাবে কোন কাজ আল্লাহর পছন্দ আর কোন কাজ অপছন্দ।

অন্তরের খোদাভীতি ও আল্লাহর রেযামন্দির অন্বেষার কারণে সে কুরআনের বিধান মোতাবেক চলবে এবং দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ লাভ করবে। তো কুরআন যদিও নাযিল হয়েছে সকল মানুষের হেদায়েতের জন্য কিন্তু বাস্তবে তারাই কুরআন দ্বারা সুপথপ্রাপ্ত হবে, যাদের মনে আল্লাহর ভয় আছে। কুরআন সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে, রাসূলে কারীম (সা.) সম্পর্কেও একই কথা। কুরআন দ্বারা যেমন শুধু তারাই সুপথপ্রাপ্ত হয়, যারা আল্লাহকে ভয় করে তেমনি আল্লাহর রাসূলের উসওয়া দ্বারাও তারাই উপকৃত হয়, যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের সাফল্য প্রত্যাশা করে। এখান থেকে কয়েকটি বিষয় বের হয়ে আসে।

প্রথম বিষয় হলো, কুরআনের বাণী সঠিকভাবে উপলব্ধি করার জন্য, কুরআন থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য, তেমনি রাসূলে কারীম (সা.) এর সীরাত ও জীবনাদর্শ সঠিকভাবে উপলব্ধি করার জন্য, সীরাত থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে ঈমান ও তাকওয়া। আল্লাহর প্রতি ঈমান, আখেরাতের প্রতি ঈমান, আল্লাহর ভয়, আখেরাতের ভয়। কুরআন মাজীদ যখন নাযিল হচ্ছিল তখন কিছু মানুষের অবস্থা এই ছিল যে, কুরআনের আয়াতসমূহ নাযিল হচ্ছে আর তাদের ঈমান বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কুরআনের নতুন নতুন বাণী ও বিধান আসছে আর তাদের আনুগত্য বাড়ছে, ইলম ও হিকমতের নতুন নতুন দিগন্ত তাদের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে। আল্লাহর রাসূল (সা.) এর একেকটি বাণী, একেকটি কর্ম, তাঁর পবিত্র জীবনের একেকটি অধ্যায় তাঁদের সামনে প্রকাশিত হচ্ছে আর তাদের ঈমান বাড়ছে। এরা হচ্ছেন ওই সকল সৌভাগ্যবান, যাঁদের আল্লাহ ঈমান দান করেছিলেন, ফলে ঈমানের আলোয় তাদের হৃদয় ও মস্তিষ্ক উন্মুক্ত ও আলোকিত ছিল। অন্যদিকে কিছু লোক এমনও ছিল, যখনই কুরআন মাজীদের কোনো আয়াত নাযিল হয়েছে তাদের কুফর বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাসূলে কারীম (সা.) এর কোনো বাণী ও কর্ম সামনে এসেছে, তাদের কুফর বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই আয়াতকে তারা অস্বীকার করেছে, আল্লাহর রাসূল (সা.) এর বাণী ও কর্মকে অবজ্ঞা করেছে, এভাবে তাদের কুফর উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই পেয়েছে। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন জায়গায় এই দুই সম্প্রদায়ের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। কাজেই কিতাব ও সুন্নাহ থেকে উপকৃত হওয়ার সবচেয়ে বড় উপাদান হচ্ছে, ঈমান ও তাকওয়া। ঈমান ও তাকওয়া থাকলে কুরআন তাকে পথ দেখাবে। সীরাত ও সুন্নাহ তাকে পথ দেখাবে। এজন্য ঈমান শিখতে হয়, অর্জন করতে হয়। সাহাবায়ে কেরাম বলেছেন : আমরা ঈমান শিখেছি। এরপর কুরআন শিখেছি। ফলে আমাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৬১)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Md Parves Hossain ৪ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১৯ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে মুসলমানদেরকে রাসূল ও রিসালাতের উপর বিশ্বাস স্থাপনের সাথে সাথে তার পূর্ণ অনুসরণ ও আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।
Total Reply(0)
Antara Afrin ৪ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১৯ এএম says : 0
তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর বার্তাবাহক উম্মী নবীর প্রতি যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা সঠিক পথ পাও।-সূরা আরাফ (৭) : ১৫৮
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ৪ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১৯ এএম says : 0
এই মহামানবের শান ও মর্যাদা, জগৎখ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতার স্বাতন্ত্র ও ভিন্নতার এটিও এক বিরাট দলিল যে, আজ পর্যন্ত তার মুবারক ব্যক্তিত্বকে যে পরিমাণ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সাথে দেখা হয় তার শতভাগের একভাগও অন্য কারো ভাগ্যে জুটেনি!
Total Reply(0)
রাসুল সাঃ হলেন সব বিষয়ে একমাএ পালনীয় উত্তম নমুনা। যে রাসুল সাঃ কে জীবনের সব বিষয় অনুসরণ করবে তার সফলতা ১০০%
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন