রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক পলাশ বেপারীর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পূর্ব উজানচর জৈনুদ্দিন সরদার পাড়ায় নিহত পলাশের বাড়ির সামনের সড়কে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে পলাশের পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী অংশগ্রহন করেন।
২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল পাশের দরাপের ডাঙ্গী এলাকায় মরা পদ্মা নদীর পাড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় পলাশের মা ছকিনা বেগম বাদী হয়ে পরদিন গোয়ালন্দঘাট থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় ১নং আসামি করা হয় উজানচর ইউনিয়ন যুবলীগের তৎকালীন আহবায়ক জিন্দার আলীকে। অন্যান্য আসামিরা হলেন, জিন্দারের সহযোগী জব্বার, আতিয়ার, নান্নু, জহুরুল, পাসান, আওয়াল, মারফাতসহ অজ্ঞাতরা। মানববন্ধনে নিহত পলাশের বাবা এবি সিদ্দিক বেপারি ও মা ছকিনা বেগম বলেন, আমাদের ছেলে পলাশ উজানচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল। পরবর্তীতে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক হয়। সে খুবই সৎ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিল। যে কারণে জিন্দার বাহিনী তাদের পথের কাঁটা মনে করে পলাশকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
তারা বলেন, দীর্ঘদিন বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত থাকার পর বর্তমানে রাজবাড়ীর আদালতে পুনরায় এ হত্যাকান্ডের বিচার কার্যক্রম চালু হয়েছে। কিন্তু আসামিরা সাক্ষীদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাক্ষী দেয়া থেকে বিরত রাখছে। মামলা তুলে নিতে তারা আমাদের এবং আমাদের পরিবার-পরিজনের ওপরে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় টাকা-পয়সা দিয়েও আপস-রফার প্রস্তাব দিচ্ছে। যে কারণে আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে এ মানববন্ধনে দাড়িয়েছি। আমরা প্রধানমন্ত্রী ও দেশের বিচার বিভাগের কাছে এ নৃশংস হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচার দাবি করছি। আর যেনো কোন মায়ের এভাবে খালি করতে পারে না।
নিহত পলাশের মেয়ে সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী শানজিদা আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার বাবাকে যারা কুপিয়ে হত্যা করেছে, আমাকে এতিম করেছে, আমার মাকে বিধবা করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।’
এ প্রসঙ্গে এ মামলার প্রধান আসামি জিন্দার আলী জানান, আমি পলাশকে হত্যা করিনি। আমাকে সন্দেহ করে আসামি করা হয়েছে। পলাশ এলাকায় চাঁদাবাজ ও অস্ত্রবাজ হিসেবে চিহ্নিত ছিল। খুন হওয়ার প্রায় ৬ মাস আগে স্থানীয় একটি বেকারি মালিকের কাছে সে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। কিন্তু টাকা না পেয়ে সে ওই বেকারি মালিককে বেদমভাবে পিটিয়েছিল। আমি সে ঘটনার প্রতিবাদে পলাশকে কয়েকটি চর-থাপ্পর মেরেছিলাম। এর প্রতিশোধ নিতে সে গোয়ালন্দ বাজারে আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে চাকু দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। সে ঘটনায় আমি মারাত্মক জখম হয়ে কোন মতে বেঁচে যাই। ওই ঘটনার সূত্র ধরে আমাকে পলাশ হত্যা মামলার আসামি করা হয়। কিন্তু আমি তার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছুই জানি না। গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, পলাশ হত্যা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। বাদী বা তার পরিবারের কাউকে কোন ধরনের হুমকি দিলে বা নিরাপত্তা জনিত সমস্যা হলে অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন