সাতক্ষীরায় কোনো ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না বাল্যবিয়ে। গোপনে বাড়িতে কিংবা অন্যত্র নিয়ে মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সাতক্ষীরার তালা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে যেসব বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছিলো, তার ৭৪ শতাংশই পরে বিয়ে হয়ে গেছে। জানা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের ২৭ জন সদস্য দিয়ে বন্ধ করা বাল্যবিয়ে সম্পর্কে একটি জরিপ চালানো হয়। জরিপ অনুযায়ী ২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বন্ধ করা ৮৮টি বাল্যবিয়ের মধ্যে ৬৫টি গোপনে বিয়ে হয়ে গেছে। এর মধ্যে আবার ছয়জনের বিচ্ছেদও ঘটেছে।
সূত্র জানিয়েছে, সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীরাই বেশি বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। এছাড়া, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া দারিদ্রে জর্জরিত পরিবারের অনেক মেয়েরাও বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছেন।
বাল্যবিয়ে বন্ধের পর বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েদের অভিভাবকেরা এই প্রতিনিধিকে জানান, তাদের অমতে ও অজান্তে মেয়েরা প্রেম করে বিয়ে করেছে। কেউ কেউ বলেছেন, তারা দারিদ্রতা, সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে ভালো পাত্র পাওয়ায় মেয়েকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের একজন অভিভাবক জানান, গত বছরের নভেম্বরে তার মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেন। কিন্তু মেয়ের বয়স ১৮ বছর না হওয়ায় উপজেলা মহিলা অধিদপ্তরের লোকজন এসে বিয়ে বন্ধ করে দেয়। ছেলেটি ভালো মনে করে বিয়ে বন্ধের দুই মাস পর মেয়েকে সেই ছেলের সঙ্গেই বিয়ে দেন। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই যৌতুকের দাবিতে মেয়ের ওপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। একপর্যায়ে তার মেয়েকে তালাক দেয়া হয়। ওই অভিভাবক আরো জানান, তালাক হওয়ার পর তার মেয়েকে তিনি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছেন। সে এখন লেখাপড়া করছে। তিনি নিজেই বাল্যবিয়ে না দেওয়ার জন্য সকল অভিভাবকের কাছে আহবান জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, শুধু তালা উপজেলাতেই নয়, অন্যান্য উপজেলাতেও বাল্যবিয়ের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, সরকারি কর্মকর্তারা বাল্যবিয়ে ঠেকানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো কোনো জায়গায় ভ্রাম্যমান আদালত বর-কনে বা তাদের অভিভাবকদের জরিমানাসহ সাজা প্রদানও করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন