শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্র্থীসহ সাধারণ মানুষ

শিবালয়ে র‌্যাফেল ড্রর নামে যাত্রা-জুয়া

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আরিচা সংবাদদাতা : শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামে প্যান্ডেল-মঞ্চ তৈরি করে  সাদিকা র‌্যাফেল ড্রয়ের নামে চলছে লটারী, জুয়া, অশ্লীল-নৃত্যসহ যাত্রা। এতে এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকায় চুরি-ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- বেড়ে গেছে। বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলছে বার্ষিক পরীক্ষা। রাতভর মাইক ও বাদ্য যন্ত্রের উচ্চ শব্দে শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়া বিঘœ ঘটায় অভিভাবকদের মাঝে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্বাস আলী ও খোকন ভূইয়া সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের সহায়তায় বগুরার জৈনক কাজল সরকার এ জুয়ার আয়োজন করেছে। গত ১৩ দিন ধরে চলা অশ্লীল নৃত্যসহ যাত্রা উপভোগ ও প্রকাশ্য জুয়া, লটারিতে অংশ নিতে শত শত লোকের সমাগম ঘটছে। আকর্ষণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পিক-আপ ভ্যান, রিক্সা, সিএনজি অটোতে লটারির বিভিন্ন পুরস্কার দূর-দূরান্ত ঘুরিয়ে ব্যাপক প্রচার ও অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষভাবে নির্মিত জুয়ার আসরে ওয়ান-টেন, খঁড়গুটি, ডাব্বা, বউ-মাছ, চরচঁরি ও ফিতা  খেলার মাধ্যমে অভিনব কায়দায় মোটা টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত চলা এ সকল খেলায় দিনমজুর, ভ্যান-রিক্সা চালক, নি¤œ আয়ের লোকজনসহ অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনেকেই অংশ নিচ্ছে। উচ্চস্বরে মাইক ব্যবহার ও চটকদারী প্রচারে সববয়সী লোকজন বিরক্ত হচ্ছে। আসন্ন এসএসসি- এইচএসসি ও বার্ষিক পরিক্ষার্থীসহ ভুক্তভোগী অভিভাবকরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। উক্ত প্যান্ডেলে নানা রঙের নি¤œমানের উপহার সামগ্রী দিয়ে লটারি চালু করা হয়েছে। এসব লোভনীয় অফার দেখিয়ে জনগণসহ স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের বিপথে ফেলে দেয়া হচ্ছে। তারা লেখাপড়া বাদ দিয়ে এই খেলায় ঝুঁকছেন। এতে অভিভাবকরা বেশ চিন্তিত। বিশেষ করে উপজেলার মহাদেবপুর, শিমুলিয়া, ভবানিপুর, দুবলিয়া, বরংগাইল, সিঙ্গারডাক, বনগ্রাম ও ফলসাটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছে জুয়া খেলতে। এছাড়া গভীর রাতে মানিকগঞ্জ জেলার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও আসে গাড়ি নিয়ে জুয়াড়িরা। জুয়া খেলায় শুধু মানুষকে নিঃশেষ করে না, পাশাপাশি নানা অপরাধে জড়িয়ে ফেলে। সচ্ছল মানুষ শুধুই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মধ্যবিত্তসহ সকল পেশার মানুষ। লোভনীয় এ খেলায় পুরো এলাকায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। জুয়া খেলায় মানুষের সঞ্চিত অর্থকে হাতিয়ে নিয়ে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। ফলে মানুষ বিপদগামী হয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক পাচারসহ নানা ধরনের সমাজ বিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ জুয়ার আসর চালুর পর পার্শ্ববর্তী ফলসাটিয়া, সিঙ্গারডাক, বনগ্রাম, কলাগাইরা, দুবলিয়া, আলোকদিয়া পাগলপাড়া ও নিহালপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ও হাট-বাজারে ডাকাতি, ছিঁচকে চুরি, সিঁধেল চুরি বেড়ে গেছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার আলোকদিয়া পাগলপাড়া এলাকা থেকে লালন পাগল, মঙ্গল পাগল, নারু পাগল ও বাতেনের বাড়ি থেকে দুর্বৃত্তরা ১৬টি গরু নিয়ে যায়। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা জুয়া-যাত্রার প্যান্ডেলের পার্শ্ববর্তী দুবুলিয়া গ্রামের আজাদের বাড়ি থেকে ২টি গরু একই রাতে বনগ্রাম গ্রামের আলমগীরের বাড়িতে এবং কলাগাইরা  গ্রামে এক বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গত ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ৩ টার দিকে ফলসাটিয়া গ্রামের মাসুম আলীর বাড়িতে ডাকাতি সংঘঠিত হয়। ডাকাতরা নগদ ৩০ হাজার টাকা, দেড় ভরি স্বর্ণ, ৮ ভরি রুপার গহনা ও কাপড়-চোপর নিয়ে যায়। উক্ত র‌্যাফেল ড্রয়ের আয়োজকেরা এ খেলার জন্য চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধির বিষয় অস্বীকার করে বলেন, এখানে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নিয়মনীতি মেনেই এ র‌্যাফেল ড্র চলছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস জানান, শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জুয়াসহ অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)