বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে আরো অনেক বেকার যুবক

প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে নুরুল আলম বাকু : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় গাড়ল (উন্নত জাতের ভেড়া) পালন এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এলাকায় গাড়ল পালন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক বেকার যুবক গাড়ল পালন করে স্বাবলম্বী হওযার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। কোমরপুর গ্রামের নাজিবার গাড়ল পালন করে এখন স্বাবলম্বী। এই গাড়ল লালন-পালন পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার নতুন দুয়ারের সন্ধান পেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করছেন। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে নাজিবার রহমান লেখাপড়া বেশি একটা না জানলেও মিষ্টিভাষী। ভেড়া পালনের কথা জানতে চাইলে নাজিবার বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বেকার হয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করে আসছিলাম। নিজের বেকারত্ব দূর করতে পথ খুঁজতে থাকি। চিন্তা করি নতুন কিছু করার। নতুন দুয়ারের সন্ধানে এদিক ওদিক প্রতিদিন ছুটতে থাকি। হঠাৎ করেই এক স্থানে রাস্তার ধারে একপাল গাড়ল চরতে দেখতে পেয়ে আগ্রহ জাগে। কথা হয় গাড়ল পানকারীর সাথে। মনে ধরে গাড়ল পালনের বিষয়টি। তাই অন্যের উপর নির্ভর না করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য বুকভরা আশা নিয়ে খুবই তড়িঘড়ি করে গাড়ল পালনের পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করি। উপজেলার চারুলিয়া গ্রাম থেকে ২০ হাজার টাকায় ৪টি গাড়লের মেড়া-মেড়ী খরিদ করে পালন শুরু করে দেই। এই ভাবেই এই কাজ পাঁচ বছর ধরে করছি। হাতে খড়ি যাই হউক না কেন গাড়ল বেশ প্রভুভক্ত। তাদের লালন পালনে তেমন একটা অসুবিধা হয়না। এখন তার পালে ছোট বড় মিলিয়ে ৩০টি মেড়া মেড়ী রয়েছে। রোজ সকাল ৮/৯ টার দিকে গাড়লের পাল নিয়ে রাস্তার ধারে, পতিত জমি, ফসল কাটা জমিতে পাল ছেড়ে দিয়ে চরাই। গাড়ল পালনের একটা সুবিধা যে এর রোগ-বালাই কম। সারদিন তাদের পিছনে শ্রম দিতে সময় কেটে যায়। গ্রামের ব্যাপারীরা ডাক হাক দিয়ে মেড়া-মেড়ী কিনে নিয়ে যায়। কয়েকদিন আগে এক জোড়া মেড়া ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। বর্তমানে আমার পালে ছোটবড় মিলে প্রায় ২ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ল রয়েছে। আমার একমাত্র সন্তান শাহীন স্থানীয় স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। এ টাকা সংসারে বাড়তি খরচ মিটিয়ে আরও জমা হয়। নিজের বাড়িতে টিনের চালা দিয়ে ঘর তৈরি করে রাতে সযতেœ রাখি। কখনো বাড়তি খাবার হিসেবে ভুট্টাসহ নানা ধরনের ঘাস-পাতা দেয়া হয়। প্রতিদিন কঠোর তদারকির ফলে উপযুক্ত বয়স হওয়ায় কোনটা একজোড়া আবার কোনটা ১টি করে বাচ্চা দিতে শুরু করেছে। মেড়ীরা তাদের বাচ্চা লালন-পালন করছে আপন মনে। কোন সময় টাকার দরকার হলে হাটে তুললে নগদ টাকায় দ্রæত বিক্রি হয়ে যায়। স্থানীয় হাট-বাজারে গাড়লের বেশ চাহিদা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দৃঢ় মনোবল ও পরিশ্রমের কারণেই আমার বেকারত্ব দূর হয়েছে। আজ আমি গাড়ল পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করছি। প্রায় প্রতিদিনই উৎসাহী অনেকেই আমার গাড়লের পাল দেখতে আসে। আমি তাদেরকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করি। এটা এখন লাভজনক ব্যবসা। রোগ বালাইয়ের ব্যাপারে একটু সজাগ থাকলেই তেমন একটা সমস্যা হয় না। একটু ভালভাবে এ ব্যবসা করতে অনেক পুঁজির দরকার হয়। সরকারিভাবে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে ঘরে বসেই অনেক বেকার যুবক-যুবতীরা গড়ল পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা বলেন, গাড়ল একটি গৃহপালিত প্রাণি। সাধারণত বাড়িতে ছাগলের মতই ঘর তৈরি করে গড়ল পালন করা হয়ে থাকে। তবে বাণিজ্যিকভাবে খামার করে পালন করলে ব্যবস্থা একটু ভিন্ন। এ জাতের ভেড়ার রোগবালাই কম এবং পালনেও তেমন একটা ঝামেলা নেই। তাই এই ভেড়া পালন লাভজনক। কেউ খামার করে পালন করতে চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন