মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

সেতুর গর্তে আটকায় গাড়ি বাড়ে দুর্ভোগ-দুর্ঘটনা

প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী কালুরঘাট সেতুর উপর দেয়া বিটুমিন উঠে গেছে অনেক আগেই, বর্তমানে ইট-সুড়কি উঠে গিয়ে সেতু জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। এসব গর্তে আটকে যাচ্ছে গাড়ি। দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ। পায়ে হেঁটে সেতু পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ। নষ্ট হচ্ছে শ্রম ঘণ্টা, অপচয় হচ্ছে সময়। গ্রামের অনেক মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে শহুরের উন্নত শিক্ষা থেকে, প্রভাব পড়ছে অনেকের আয় রোজগারেও। এটাই এখন মেয়াদ উত্তীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্ণফুলীর কালুরঘাট সেতুর প্রতিদিনকার ও প্রতি মুহূর্তের বাস্তব চিত্র। এতে দিনকে দিন পিছিয়ে পড়ছে সমৃদ্ধ বোয়ালখালীসহ দক্ষিণের বেশ কিছু এলাকা। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে বাড়ছে ক্ষোভ-যার থেকে শুরু হতে পারে যে কোন সময় বিক্ষোভ। জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহা সড়কে ১৯৩০ সালে কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত হয় কালুরঘাট সেতু। যেটি অনেক আগেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়ে। ২০১০ সালে ২য় কর্ণফুলী সেতু (শাহ আমানত সেতু) চালুর পর ৮৫ বছরের আগের কালুরঘাট সেতুটি স্থানীয়দের কাছে পুরানো সেতু হিসাবে পরিচিতি পেতে থাকে। দীর্ঘদিন যাবৎ ধরে সংস্কার কাজে হাত না দেয়ায় সেতুটি আরো পুরানো হয়ে এখন অধিক মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অবকাঠামো নড়বড়ে ও নাজুক অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। সেতুর গার্ডার, ফিস প্লেট, রেলের স্লিপার ও পাথরের পিচ উঠে সেতু জুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে আটকে যাচ্ছে গাড়ি। কর্তৃপক্ষ এসব গর্তে ইটের টুকরো ফেলে কোন মতে দায় সারতে চেষ্টা করলেও এসব গর্তের কারণে গাড়ি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে প্রতিনিয়ত। লাগছে দীর্ঘ যানজট। যা থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বাড়ছে দুর্ভোগ, পায়ে হেঁটে পার হতে গিয়ে হতে হচ্ছে দুর্ঘটনার শিকার। প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যেতে হচ্ছে হাসপাতালে। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি বোয়ালখালীর কামাল উদ্দীন নামের এক মিল শ্রমিককে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে কাতরাতে হচ্ছে এখনও। ফলে নষ্ট হচ্ছে শ্রম ঘণ্টা, অপচয় হচ্ছে সময়। গ্রামের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছে শহরের উন্নত শিক্ষা থেকে, সময়মত কর্মক্ষেত্রে যেতে পারে না বলে এর প্রভাব পড়ে অনেকের আয় রোজগারেও। সেতুর উপর সহ এর উভয় পাড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে অফিসগামী ও ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলে প্রায় সময়। স্থানীয়দের অভিযোগ কোন কারণে শাহ-আমানত সেতু বন্ধ হলে তো কথাই নেই। তখন চাপ বাড়ে জোড়াতালির কালুরঘাট সেতুর উপর। রেলের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে- সর্বশেষ ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ১ কোটি ব্যয়ে সেতুটিতে সংস্কারকাজ হয়েছিল। এরপর গত ৩ বছর এই সেতুটিতে বড় ধরনের সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যার কারণে দিনকে দিন জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটির অবস্থা এখন নাজুক অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। এমতাবস্থায়, যানজটে পড়ার ভয়ে এখানকার অনেক গাড়ি সেতু পাড় হতে রাজি হয় না। যারা রাজি হয় তারা ২-৩ গুণ বাড়তি ভাড়া দাবি করে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে বাড়ছে ক্ষোভ-যার থেকে শুরু হতে পারে যে কোন সময় বিক্ষোভ। এলাকাবাসী জরুরি ভিত্তিতে নতুন সেতু নির্মাণ এবং আপদকালীন হিসেবে বর্তমান কালুরঘাট সেতুটির সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকার ও রেল কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাসদের কার্যকরি সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল ঝুঁকিপূর্ণ কালুরঘাট সেতুর পাশে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য জাতীয় সংসদে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করার ফল হিসেবে কর্ণফুলীর উপর বর্তমান কালুরঘাট সেতুর ৩শত মিটার উজানে ১০৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২০মিটার দীর্ঘ রেল কাম রোড সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেন। যা ইডিসিএফ কোরিয়া আলোচ্য প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হালনাগাদ করার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেছেন। শীগ্রই পরামর্শকবৃন্দ প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই নিয়মানুযায়ী ডিপিপি প্রণয়ন করা হবে। এ প্রকল্পে ইডিসিএফ কোরিয়া ৯০.০৬ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করার কথা রয়েছে। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত চীফ ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুল জলিল বলেন, সংস্কার কাজতো চলমান আছে। যদি এর মধ্যে সেতুটির অবস্থা আরো বেশি খারাপ হয় তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন