আবদুল আউয়াল ঠাকুর : বিজয়ের মাস চলছে। এখন কেবলমাত্র ’৭১-এর বিজয়ই নয়, এ মাসে যুক্ত হয়ে আছে বিজয়ের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিন-তারিখ। এ মাসেই পালিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর ’৯০ সালে এ মাসেই ঘটেছিল জনগণের সবচেয়ে কাক্সিক্ষত গণতান্ত্রিক বিজয়। মাসের ৬ তারিখ ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে সামরিক ক্ষমতার জোরে উৎখাত করে সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ সামরিক শাসন জারি করেছিলেন। দীর্ঘ নয় বছর দেশের গণতান্ত্রিক শক্তি এবং তাদের সমর্থিত শ্রেণি-পেশার সমন্বিত আপসহীন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ৬ ডিসেম্বর জনগণের আন্দোলনের বিজয় হয়েছিল। প্রকাশ্যত, সেই বিজয়ের একটি দল ক্ষমতাসীন হলেও এ বছর দিনটি কেটেছে নিভৃতে। কোনো কোনো কাগজে দিবস সম্পর্কে আলোচনা প্রতিবেদন তুলে না ধরলে হয়তো নতুন প্রজন্ম জানতেও পারতো না যে এমন একটা দিন জাতির ছিল। এ কথা এ কারণে যে বর্তমান সময়ে সরকারের শীর্ষ মহল থেকেই প্রশ্ন উঠছে, গণতন্ত্র না উন্নয়ন। বোধকরি এটা নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই যে, উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রকে যারা আলাদা করে দেখেন বা দেখতে চান তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো বৈষম্যমূলক গণতন্ত্রবিরাধী স্বেচ্ছাতান্ত্রিক। কারণ গণতন্ত্র হচ্ছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র। আর সেই মানুষের জন্যই উন্নয়ন। সেই বৃটিশ উপনিবেশিক আমল থেকেই হয়তো এ কথা জনগণ শুনে আসছে যে, উন্নয়ন এবং মানুষের স্বাধীনতা কোনটি অধিকতর পছন্দনীয়। এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যত ধরনের কথাই বলা হোক, প্রকাশ্যে যে যা-ই বলুক, মানুষ মুক্তির পক্ষে। সে স্বাধীনভাবে পথচলার পক্ষে। গৃহপালিত বিশেষ বিশেষ কোনো প্রাণীর মতো গলায় দাসত্বের বেল্ট পরে কেবলমাত্র সময়মতো খাদ্যপানীয় নিয়ে ডাকে সাড়া দিয়ে সে বাঁচতে চায় না। এটা তার পক্ষে সম্ভবও নয়। কারণ মানুষই একমাত্র সৃষ্টি যে বিবেক দ্বারা পরিচালিত হয়। ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে পারে। সে বিবেচনায় যারা গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় তারা আসলে মতলববাজ। সেই মতলববাজির শৃঙ্খল ভাঙার গানই হচ্ছে গণতন্ত্র, যা সামরিক স্বৈরাচারের বুটের তলা থেকে জনগণ উদ্ধার করেছিল। এবার আবার নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, আসলে কি সেটা এখনো জনগণের কাছে রয়েছে নাকি অন্য কোথাও ছিনতাই হয়ে গেছে?
সঙ্গত বিবেচনা থেকেই বিবেক তাড়িত হয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকের মাননীয় সম্পাদক দিবসটির আলোচনা করতে গিয়ে বর্তমান চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে সেদিনের স্বৈরাচার আজকের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। তার স্ত্রী বিরোধী দলের নেতা এবং কয়েকজন সহযোগী মন্ত্রিসভার সদস্য। বাস্তবতা হচ্ছে, যারা একসময় সরকার ও বিরোধী দলে ছিল সেই বৃহত্তম রাজনৈতিক দল সরকারের অনুমতি ছাড়া দলীয় কোনো কর্মসূচি করতে পারছে না। পুলিশের নির্যাতন এড়িয়ে তাদের পক্ষে প্রকাশ্য মিছিল করাও সম্ভব নয়। এমনকি দলটির তৃণমূল থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত। অনেকেই গুম হয়ে গেছেন। এই আলোচনা অনেক বিস্তৃত। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে আমরা কি পেলাম? যদি উন্নয়নই বড় কথা হয়ে থাকে তাহলে ওই সময়ের উন্নয়ন কোনো অংশেই কম নয়। সে সময়েও কোনো নেতা গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। রাজনৈতিক দল ছেড়ে স্বৈরাচারের দলে জড়ো হয়েছেন। ব্যাপারটি যদি এমন হয় যে এটি একটি ইচ্ছাধীন বিষয় তাহলে ভিন্ন কথা। আর যদি এর পেছনে কোনো যুক্তি-বুদ্ধি থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই এটা মনে করতে হবে মানুষের মুক্তিই শেষ কথা। এই মুক্তির প্রয়োজনে বিপুল ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে একদিকে যেমনি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয়েছিল, তেমনি জীবন পণ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে। এ কথা যে কেউ স্বীকার করবেন সেদিন বিএনপি তথা সাত দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া যদি আপসহীন ভূমিকায় না থাকতেন তাহলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার কোনো মতেই সম্ভব হতো না। আজকে যিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সেদিন তিনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন একসময় তার রাজনৈতিক পার্টনার ছিল আওয়ামী লীগ। একসময়ে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দল বিলুপ্ত করে জাতীয় পার্টিতে যোগদানের বিনিময়ে মন্ত্রিত্বও পেয়েছিলেন। ’৮৬-র নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সে সময়ের সরকারকে এক ধরনের টাইম এক্সটেনশনও দেয়া হয়েছিল। অনুরূপভাবে বলা যায়, ২০১৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়ার পরও জাতীয় পার্টি প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চট করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এটাও এক ধরনের এক্সটেনশন। ’৮৬ নির্বাচনের সূত্র ধরে ওই সরকার টিকেছিল আরও প্রায় ৫ বছর। যদিও এই পাঁচ বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল। এরপরই আসে সেই শুভদিন। অনেক আস্ফালনের পর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিল সেই সরকার। সে সময়ের বিশ্লেষণ করলে বোধহয় এটা বলা যায় গাড়ি চাপা দিয়ে ছাত্র, রিকশাওয়ালাসহ সাধারণ মানুষ হত্যা, নির্বিচার নির্যাতন, হামলা-মামলা এসব যেমনি ছিল তেমনি ছিল উন্নয়নের প্রপাগান্ডা। দেশের মানুষকে বোকা বানানোর গাঁজাখোরি গল্প। কোনো উন্নয়নই কারো নিজের পকেটের টাকা থেকে হয় না বরং কথিত উন্নয়নের নামে জনগণের টাকা ক্ষেত্রবিশেষে লোপাট হয়ে থাকে। দিন দিন জনগণের ওপর করের বোঝা বাড়ছে আর সেই টাকায় কথিত উন্নয়ন হচ্ছে। কার্যত গণতন্ত্রহীন উন্নয়নের অর্থ হচ্ছে লুটপাটের কাহিনী চাপা দেয়া। সে জন্যই কমবেশি যাই হোক প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে জনগণকে সম্পৃক্ত করেই এগিয়ে যাওয়া। সে কারণেই আজ যখন উন্নয়নের নামাবলী শোনানো হচ্ছে তখন বাস্তবতা হচ্ছে জনগণ একপ্রকার গৃহবন্দী। হত্যা, গুম, সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণহীন। প্রতিদিন মানুষ হারিয়ে যচ্ছে সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলতে পারছেন না কারা এর সাথে জড়িত। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে কোনো কোনো প্রভাবশালী মহলের তা-ব। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে হেন প্রক্রিয়া নেই যা অনুসরণ করা হচ্ছে না। এখন প্রায় প্রতিদিনই বেগম জিয়াকে আদালতের এজলাসে থাকতে হচ্ছে। এমনটা সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের আমলেও ঘটেনি। সরকারের কোনো কোনো মহলের রাগ-ক্ষোভ সবকিছুই যেন উপচে পড়ছে গণতন্ত্রের আপসহীন নেতার বিরুদ্ধে। এটা কোনো বিবেচনাতেই গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির কাজ বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। কেবল ’৯০ সালেই নয়, ২০০৮ সালের সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সরানো সম্ভব হতো না যদি তিনি আপসহীন না থাকতেন। বেগম জিয়া তার রাজনৈতিক জীবনে কখনই গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির সাথে হাত মেলাননি। কতিপয় কল্পিত ধারণাপ্রসূত বক্তব্য দিয়ে কোনো কোনো মহল যা করতে চাচ্ছেন তার প্রকৃত পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বোধকরি সে ভাবনাই এখন জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।
সংবিধান অনযায়ী জনগণই দেশের মালিক। সে জন্যই দেশের নাম প্রজাতন্ত্র। বলা যায়, সরকারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের কল্যাণ করা। অন্যান্য আলোচনায় না গিয়ে সাম্প্রতিক দু-একটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে। সরকার বলছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে। দেখা যাচ্ছে দেশে বিনিয়োগের আক্রা থাকলেও ভারতীয়রা আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে চাইছে বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে। বাংলাদেশের মিডিয়া যখন বাংলাদেশ বৈষম্যের শিকার। বলা হচ্ছে, বিদেশি চ্যানেল সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় ভারতীয় চ্যানেলের কাছে প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ কেন দেখে? খোদ প্রধানমন্ত্রীর এ জিজ্ঞাসার জবাব দেয়া আমাদের মতো সাধারণের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এটুকু স্মরণ করিয়ে দেয়া বোধহয় বেয়াদবি হবে না যে, মাত্র সেদিনও ভারতীয় দর্শকরা বিটিভি দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ত। তবে তখন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ ছিল না। জাতীয় সংস্কৃতি লালনে সরকারি কার্যকর পৃষ্ঠপোষকতা থাকা না থাকার যে পার্থক্য বোধকরি হুমড়ি খেয়ে পড়া না পড়ার মধ্যেও পার্থক্য ততটা। যাই হোক চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে দুটো সাবমেরিন দেয়ার পর একই চিত্র দেখা গেছে। চটজলদি ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এলেন। পারিকরের ঢাকা সফর সম্পর্কে মিডিয়ায় বলা হয়েছে, ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেছেন, চীন বাংলাদেশকে যে ধরনের বিপুল অর্থনৈতিক এবং সামরিক সহায়তা দিচ্ছে তার সঙ্গে টক্কর দেয়ার সক্ষমতা ভারতের নেই। তবে ভৌগোলিক অবস্থান স্ট্যাটেজিক অ্যাডভান্টেজ এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কের নিরিখে প্রতিরক্ষা খাতে ভারতই বাংলাদেশের সবচেয়ে ন্যাচারাল পার্টনার বা স্বাভাবিক সঙ্গী চীন নয়।... আমি নিশ্চিত বাংলাদেশও অচিরেই সেটা বুঝতে পারবে, বলেছেন দিল্লির একটি নামি প্রতিরক্ষা থিঙ্কট্যাঙ্ক। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারত সরকার তড়িঘড়ি করে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক অঞ্চল যখন ভারতীয় জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত, বাংলাদেশ যখন তার সামুদ্রিক এলাকা রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে তখন চীনের সাবমেরিন সরবরাহকে এত সন্দেহের চোখে দেখার কারণ কী? আমরা প্রতিদিনই বন্ধুত্বের কথা বলছি। বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ তাদের উপহার দিচ্ছি। এমন কি বাড়ি বাড়ি গিয়ে পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার চিন্তা করছি। যদিও ফারাক্কা বাঁধ গলিয়ে এতটুকু পানিও বাংলাদেশ পায়নি। তিস্তার কোনো চুক্তি হয়নি। দেখার বিষয় হচ্ছে, চীনের সাবমেরিন দেয়ার পর ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশে যে উদ্বেগের সাথে তড়িঘড়ি সফর করলেন কই বাংলাদেশের জীবন-মরণ সমস্যা পানি পাওয়ার জন্য তো আমাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা দিল্লি ছুটে যাননি। বন্ধুত্বের অর্থ যদি হয় কেবল দেয়া তাহলে অন্য কথা, আর যদি এর সাথে পারস্পরিক স্বার্থের কোনো সম্পর্ক থাকে তাহলে অবশ্যই জাতীয় স্বার্থের যে সম্পর্ক রয়েছে তাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কার্যত আজ দেশ সম্পর্কে জনগণ ওয়াকিবহাল নয়। এর একটি বড় কারণ জাতীয় সংসদ। সরকারের ভাষায় তাদের কাজের সুবিধা হয়েছে। নজিরবিহীনভাবে বিরোধী দল সরকারের মন্ত্রিসভায় রয়েছে। সাধারণভাবে বলা হয় সরকারের ভুলত্রুটি তুলে ধরাই বিরোধী দলের কাজ। এক্ষেত্রে হচ্ছে তার উল্টোটি। সরকারকে বাঁচিয়ে রাখাই মনে হচ্ছে বিরোধী দলের কাজ। এটাই বোধহয় আজকের প্রেক্ষাপটে বড় প্রসঙ্গ। এখানে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং জাতীয় সম্পর্ক একাকার হয়ে গেছে। দেশে সামরিক শাসন তথা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার তথা দেশের স্বার্থসংরক্ষণ। আজ সময়ের পরিবর্তনে প্রমাণিত হয়েছে দেশে যখন গণতন্ত্র রুদ্ধ তখন মানুষের স্বাধীনতা তথা জাতীয় স্বার্থও পদদলিত। সে কারণেই বোধকরি পতিত স্বৈরাচার যখন রাজনৈতিক সঙ্গী তখন তারা গণতন্ত্রের কথা না বলে উন্নয়নের কথা বলেন। এ উন্নয়ন কাদের প্রয়োজনে সে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও জনগণের প্রতিনিধিদের নির্যাতনে নিপীড়নে রেখে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে সভা-সমাবেশ করতে না দিয়ে উন্নয়নের কথা বলার নাম গণতন্ত্র নয়। সামরিক বা বেসামরিক যে লেবাসেই হোক গণতন্ত্র হত্যাকারীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এরা অভিন্ন। সেই দিন সম্পর্কে বলতে গিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটি দৈনিকে লিখেছেন- ... ৬ ডিসেম্বর দিনটি আমাদের জন্য একদিকে ছিল হতাশা জড়িত আবার একদিকে ছিল দেশের সংবিধানকে রক্ষার গৌরবের। যেমন সন্তান জন্মদানে মায়ের প্রসব-বেদনার পরে ক্লান্ত শরীরে নবজাতকের কান্না শোনার পরিতৃপ্তি। সঙ্গত প্রশ্ন হচ্ছে, সেদিনটি যদি হবে সংবিধান সংরক্ষণ দিবস বা সন্তান জন্মদানের অনুভূতি তাহলে সামরিক শাসনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সাবালক সন্তান হত্যার দায়িত্ব কে নেবে? তিনি ওই লেখায় বলেছেন, ...তাই গণতন্ত্রের কাঠামোতে আজ ঘুণ পোকা বাসা বেঁধেছে। মূল বিষয় হচ্ছে, মানুষের মুক্তি। বিজয়ের মাসে মানুষ বিজয়ের আনন্দ করতে ভালোবাসে। দেশের অবস্থা এমন যে, সরকারের সাথে দ্বিমত রয়েছে এমন রাজনৈতিক দলের পক্ষে হয়তো সেটাও সমন্বয়। বিএনপি ৭ নভেম্বর পালন করতে সভা করার অনুমতি চেয়েও পায়নি। মনে হচ্ছে সরকার যা করবে তার সাথে তাল না মেলালে কোনো কিছুই করা যাবে না। এই যে একমুখীকরণ একে আর যাই বলা যাক গণতন্ত্র বলা যাবে না।
আজকের প্রেক্ষাপটে যখন সামরিক স্বৈরাচার নিপাতের কথা ওঠে তখন সঙ্গত বিবেচনাতেই আত্মসমালোচনার প্রসঙ্গ বড় হয়ে দেখা দেয়। গণতন্ত্র বুটের নিচে পিস্ট হলে তা যেমনি অনিষ্টকর তেমনি স্যান্ডেলে পিষ্ট হলেও অবস্থার কোনো হেরফের হয় না। আজ তাই গণতন্ত্র উদ্ধারের যে প্রসঙ্গ উঠেছে তখন অবশ্যই ভাববার রয়েছে, কেন গণতন্ত্র পুনরায় রুদ্ধ হয়ে পড়ল। বলার অপেক্ষা রাখে না, যে নির্বাচনী অব্যবস্থাপনার কারণে গণতন্ত্র উদ্ধার জরুরি হয়ে উঠেছিল এখনো সেখানেই আটকে রয়েছে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অন্তরায় দূর করতে না পারলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার অসম্ভব। ’৮২ সালের পরিস্থিতি আর বর্তমান পরিস্থিতি গুণগত দিক থেকে অভিন্ন নয়। সে যাইহোক আন্দোলন এক বাস্তবতা আর আলোচনা অন্য বাস্তবতা। বিএনপিসহ সকল গণতান্ত্রিক দল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কথা বলেছে। এ জন্য তারা সংলাপের প্রয়োজনীয়তাও জানিয়েছে। যেভাবেই হোক বিজয়ের এই মাসে প্রেসিডেন্ট নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংলাপ করবেন বলে বলা হচ্ছে। এ বৈঠক যদি সফল হয় তাহলে সেটিও আরো একটি বিজয় হবে গণতন্ত্রের। জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় গণতন্ত্র ফিরে আসুক মুক্তির সোপান হিসেবে।
awalthakur@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন