নাছিম উল আলম : ব্যয় সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজসমূহ বসিয়ে রেখে ব্যয়বহুল স্ক্রু-হুইল নৌযান চালানোর কারণে ঢাকা-বরিশাল-খুলনা রকেট স্টিমার সার্ভিসের দ্বিতীয় ট্রিপেও প্রায় ৩ লাখ টাকা পরিচালন লোকসান গুনল বিআইডবিøউটিসি। প্রথম ট্রিপে লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ লাখ টাকা। প্রায় ৬১ মাস পর গত ২ ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহে একদিন ঢাকা-বরিশাল-খুলনা রকেট স্টিমার সার্ভিসটি চালু করে রাষ্ট্রীয় নৌবাণিজ্য প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমিকভাবে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে বুধবার ও খুলনা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় সার্ভিসটি চালু করা হলেও এক ট্রিপ পরই তা ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার ও খুলনা থেকে শুক্রবার রাত ৩টায় চালানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। মংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেলটি বন্ধ থাকায় ঐতিহ্যবাহী ঢাকা-বরিশাল-খুলনা রকেট স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ করে দেয়া হয় ২০১১ সালের ১ নভেম্বর। গত মাসেই ঐ চ্যানেলটি চালু করার পর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইতঃপূর্বের দৈনিক সার্ভিসটি সপ্তাহে একদিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে সংস্থাটি।
কিন্তু শুরুতেই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ক্রমাগত লোকসানে পড়তে হচ্ছে। ফলে অদূরভবিষ্যতে সার্ভিসটির স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় রয়েছে ওয়াকিবহাল মহলে। মধ্য ব্রিটিশ যুগে বাষ্পীয় প্যাডেল হুইল জাহাজ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর-বরিশাল হয়ে খুলনা পর্যন্ত রকেট স্টিমার সার্ভিসটি চালু করা হয়। স্বাধীনতার পর নারায়ণগঞ্জের পরিবর্তে ঢাকা থেকে সার্ভিসটি পরিচালিত হতে থাকে। পরবর্তীকালে বাষ্পীয় নৌযানসমূহকে মেরিন ডিজেল ইঞ্জিনে রূপান্তর করে সার্ভিসটি ‘না লাভ না লোকসান’ ব্যবস্থায় পরিচালিত হচ্ছিল। সংস্থার হাতে এখনো ‘পিএস মাহসুদ, পিএস অস্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্ন’ নামের ৪টি প্যাডল জাহাজ রয়েছে। ১৯৯৫ সালে আধুনিকায়ন ও পুনর্বাসনের পর এসব নৌযান চালু করা হলেও তার প্রয়োজনীয় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে দুর্নীতির পাশাপাশি অবহেলাও রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
কিন্তু গত দুই বছরে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বিআইডবিøউটিসি ‘এমভি মধুমতি ও এমবি বাঙালী’ নামের যে দু’টি স্ক্রু-হুইল যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করেছে তার জ্বালানি ব্যয় পুরনো প্যাডেল হুইল জাহাজগুলোর তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। অভিযোগ রয়েছে, এরপরও সংস্থাটির একটি মহল অত্যধিক পরিচালন ব্যয়ের এসব নৌযান চালাতে অধিক আগ্রহী। এমনকি নানা অজুহাতে প্যাডেল জাহাজগুলোকে বসিয়ে রেখে ব্যয়বহুল নৌযান চালিয়ে সংস্থার যাত্রীবাহী সেক্টরের লোকসানের মাত্রা বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সংস্থার ৪টি প্যাডেল জাহাজের দু’টিই বন্ধ ছিল। অথচ নতুন সংগ্রহ করা নৌযান দু’টি যাত্রীবান্ধব না হওয়ায় তা যাত্রীদের কাছে তেমন কোনো গ্রহণযোগ্যতাও পায়নি।
২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল ‘এমভি বাঙালী’ ও গত বছর ১৪ জুলাই ‘এমভি মধুমতি’ যাত্রী পরিবহনে আসার পর চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত প্রায় সোয়া ৫ কোটি টাকা পরিচালন লোকসান গুনেছে। এর সাথে দু’টি নৌযানের ৭০ জন ক্রু’র বেতন-ভাতা বাবদ আরো প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা গুনতে হয়েছে। ফলে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সংগৃহীত এ দু’টি নৌযান চালু হবার পর থেকে সংস্থার নিট লোকসানের পরিমাণ ইতোমধ্যে প্রায় ৮ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। জুলাই-পরবর্তী মাসগুলোতে এ দু’টি নৌযানের পেছনে আরো প্রায় ৫০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এসব নৌযানের জ্বালানি ব্যয়সহ পরিচালন ব্যয় প্যাডেল নৌযানগুলোর দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে এসব নৌযান স্বল্প দূরত্বে অধিক যাত্রী বহনের কোনো বিকল্প নেই। নচেৎ লোকসান বাড়বে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। বিশেষ করে ঢাকা থেকে বরিশালের পর মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত এত দিন যে নিয়মিত রকেট স্টিমার সার্ভিসে এসব নৌযান চলেছে তাতেও প্রতি ট্রিপে গড়ে জ্বালানি পুড়ত ৬ হাজার ৮০০ লিটার। আর খুলনা পর্যন্ত প্রথম ট্রিপে মধুমতির জ্বালানি প্রয়োজন হয় ৯ সহ¯্রাধিক লিটার।
এ ব্যাপারে গতকাল সংস্থার পরিচালক-বাণিজ্য জানিয়েছেন, ‘আমরা আগামী মাস থেকে এ রুটে বিকল্প চিন্তা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন