সাউদিয়া সরকার (৩০)। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। চাকরির আড়ালে বিয়ে ও প্রেমের নামে মানুষকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ায় তার প্রধান কাজ। এমন অভিযোগ শংলেছেন সাউদিয়ার দ্বিতীয় স্বামী মোহাম্মদ বাদল। তার এই ফাঁদে শুধু বাদল একাই নয়। সুরেশ নামের এক ভারতীয় নাগরিকও রয়েছে বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে প্রেম ও বিয়ের নামে ফাঁদে ফেলে প্রতারণার মাধ্যমে কিয়াভবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সাউদিয়া। বেড়িয়ে আসে তার প্রেম ও প্রতারণার নানা গল্প।
২০২০ সাল। মোহাম্মদ বাদলের সঙ্গে পরিচয় হয় সাউদিয়া সরকারের। পরিচয়ের শুরু হয় সাউদিয়ার অনলাইন বিজনেস 'কল্পনা' নামের একটি পেইজ থেকে। সেই পেইজে সাউদিয়া থ্রি-পিচসহ বিভিন্ন কাপড়ের বিজ্ঞাপন দিতে লাইভে আসতেন। সেখান থেকেই পরিচয়ের সূত্রপাত। সাউদিয়ার সঙ্গে পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু বাদল তখনও জানতো না প্রেমিকা সাউদিয়া বিবাহিত। তার একটি সংসার রয়েছে। সাউদিয়ার প্রথম স্বামীর নাম মিন্টু। সেই সংসারে সায়ান হাসান নামের ১১ বছরের একটা ছেলে সন্তান রয়েছে। এদিকে বাদলের ও রয়েছে প্রথম সংসার। সেই সংসারে রয়েছে ২ মেয়ে। সব বাঁধা পেরিয়ে জমে উঠে বাদল-সাদিয়ার প্রেম।
প্রেম যত গভীর হতে লাগে সাউদিয়ার চাহিদা ততই বেড়ে যায়। বাদলকে বলা হয় ব্যবসা প্রসার করার জন্য তার টাকা প্রয়োজন। ২০২০ সালের দিকে ঋন হিসেবে বাদলের কাছ থেকে নগদ আট লাখ টাকা নেয় সাউদিয়া। ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি দুজনের সম্মতিক্রমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পরেই প্রকাশ পায় প্রতারণার ফাঁদ তবুও সংসার করতে চায় বাদল। এবার শুরু হয় নানা ভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল।
বাদল জানান, বিয়ের পর ব্যবসার অজুহাতে আরও তিন লাখ টাকা দাবি করেন। দেয়ার মতো এতো টাকা নেই জানালে সে আমাকে বিভিন্নভাবে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
এক পর্যায়ে বাদলের ব্যবসায়িক পরিচিত তৌহিদ মোল্লা নামের একজনের বিভিন্ন ব্যাংকের চেক আমার কাছে থাকার বিষয়টি জানতো সাউদিয়া। তিনি বলেন, এক পর্যায়ে ফাষ্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে সাউদিয়া তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন জাল স্বাক্ষর করেই।
বাদল আরও জানান, টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরে আমার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চাপ দেন। ডিভোর্স দিতে না চাইলে, সাউদিয়া সংসার করবে না বলে জানিয়ে দেয়। এবং বলে দেন, পাওনা টাকা ফেরতও দিবেন না। বেশি কথা বললে বা টাকার জন্য চাপ দিলে বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকি দেন। যা বনানী থানায় করা বাদলের অভিযোগে এসব উল্লেখ করা রয়েছে।
এক পর্যায়ে ২০২২ সালের জুনের ২১ তারিখে প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়।
শুধু প্রেমেই প্রতারণা করে ক্ষ্যান্ত থাকেনি সাউদিয়া : প্রতারণা করেছেন চাকরি নিতেও। ২০২২ সালের ১২ মে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। কোম্পানি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চাইলে প্রতারণার মাধ্যমে বনানী থানার ইন্সপেক্টর অপারেশনের নাম ব্যবহার করে সিল তৈরি করে জাল স্বাক্ষর করেন। এক পর্যায়ে থানায় অভিযোগ করে বাদল। জাল সার্টিফিকেটের প্রমাণ পাওয়ায় চাকরি চলে যায় তার।
ফের নতুন প্রেমে পরে নয়া কৌশল : প্রেমে পড়তে নেই বারুণ। তাই মাকসুদুল নামের একজনের সঙ্গে প্রেমে পড়ে সাউদিয়া। এবার সেই প্রেমিকের কাছে যেতে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার ও অকারণে খারাপ আচরণ করতে থাকে বাদলের সঙ্গে।
চলতি বছরের ৫ আগস্ট বাড্ডা নতুন বাজার ওয়াজউদ্দিন রোডের হাউস নং ১৫ রোড নং ২ এর বাসায় বাদলকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ মারধর করে লোকজন নিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন। পরে বাসার আসবাবপত্র নিয়ে তার বাপের বাড়ি চলে যান সাউদিয়া। গোপন সংবাদে বাদল জানতে পারে তার স্ত্রী গত ৬ অক্টোবর পরকিয়া প্রেমিকের সঙ্গে কক্সবাজারের একটি হোটেলে দুই রাত থাকেন। এর আগে নতুন প্রেমে পড়ার পরে ৬ আগষ্টে সাউদিয়া বাদলকে ডিভোর্স দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু হঠাৎ করে ১৫ আগষ্ট সাউদিয়া জানায় এক লাখ ১০ হাজার টাকা দিলে সে আবার ফিরে আসবেন।
বাদল জানান, সংসারের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে ১৬ আগষ্ট তার ব্যবসায়িক একাউন্টে ১ লাখ ১০ হাজার টাকাসহ তার বিকাশ একাউন্টে ২৭ হাজার ৫০০ টাকা দেন। এছাড়াও ২২ আগষ্ট স্বর্ণের গহনা বন্ধক ছাড়ানো বাবদ ২২ হাজার টাকা প্রদান করে। এখন সাউদিয়ার নিকট বাদলের পাওনা ১৭ লাখ ৫৯হাজার ৫০০ টাকা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে ২০০৮ সালে রকিবুল মিন্টু নামের একজনের সঙ্গে বিয়ে হয় সাউদিয়ার। পরে স্বামী রেখেই অফিস এর বসদের সঙ্গে দেশের বাহিরে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। যা জানতে পেরে ২০১৩ সালে ডিভোর্স দেয় প্রথম স্বামী।
ভারতীয় নাগরিকের প্রেমের ফাঁদ : নারায়ণগঞ্জের একটি ফেক্টরিতে চাকরি করতেন সুরেশ নামে এক ভারতীয় নাগরিক। ২০২১ সালের দিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে একাউন্ট পে এর মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় সাউদিয়া। পরে মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেয়।
এসব অভিযোগের সত্যতা জানতে সাউদিয়া সরকারের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায় নি। পরে অভিযোগের কথা তুলে ধরে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলে সে সিন করে কোন উত্তর দেয়নি। সিন করার পর আবারও কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন