নবগঙ্গা ও কুমার নদীতে চায়না দুয়ারী জালের ব্যবহার ক্রমশ বেড়েই চলছে। মাঝে-মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে জাল জব্দ ও অভিযুক্তদের জেল-জরিমানা করলেও থামছে না এ জালের ব্যবহার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে মাছসহ জলজপ্রাণি, প্রকৃতি যেমন হুমকির মুুখে পড়বে, তেমনি প্রকৃত মৎস্যজীবীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে মাছ ধরার জালের ফাঁসের অনুমোদিত পরিমাপ সাড়ে ৫ সেন্টিমিটার (সংশোধিত আইন)। জালের ‘ফাঁস’-এর চেয়ে কম হলে তা আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। দেশে নিষিদ্ধ জালের তালিকায় চায়না দুয়ারির নাম উল্লেখ না থাকলেও বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এটি নিষিদ্ধ। তাই এ ধরনের জাল ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চায়না দুয়ারি জাল নয়, এটি মূলত মাছ ধরার এক ধরনের ফাঁদ। এই জালের বুননে একটি গিঁট থেকে আরেকটি গিঁটের দূরত্ব খুব কম, যে কারণে এতে মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এটি নদীর একেবারে তলদেশ পর্যন্ত যায় এবং তলদেশের মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। ফলে কোন কিছুই জাল থেকে রক্ষা পায়না সব মাছই আটকা পড়ে। কম পরিশ্রমে বেশি মাছ ধরতে সক্ষম হওয়ায় কারেন্ট জালের চেয়েও বিপজ্জনক এই জাল জেলেদের কাছে জনপ্রিয়। জেলেরা জানায়, অল্প পুঁজিতে চায়না দুয়ারিতে অনেক মাছ পাওয়া যায়। এটা আইন বিরোধী, আইন বিরোধী এ কাজ কেন করেন? জেলেদের এমন প্রশ্ন করা হলে জেলেরা বলেন, ‘পেটের তাগিদে কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ কাজ করে বেঁচে আছি।’
মৎস্য গবেষকদের মতে, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনছে চায়না দুয়ারি জাল। এই জালে একবার ধরা পড়লে আর বের হতে পারে না, তাই অনেক বিপন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণি মারা পড়ে। সেগুলো বংশবৃদ্ধিতে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। দেশে গত কয়েক দশকে ১০০-এর বেশি দেশি প্রজাতির মাছ উধাও হয়ে গেছে।
এ জাল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো জেলেদের বোঝাতে হবে। তারা সামান্য লাভের জন্য জলজ পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করছে। মৎস্য সম্পদ বিপন্ন হলে তারাই প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ধরার মতো কোন মাছই আর অবশিষ্ট থাকবে না। এমনটাই জানান মৎস্য গবেষোকরা।
জেলেদের এসব ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন করতে হবে। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে চায়না দুয়ারি জাল ধ্বংস করতে হবে। এতেও কাজ না হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও তারা অভিমত ব্যক্ত করেণ।
চায়না দুয়ারি নামে পরিচিত এই জাল দেশেই উৎপাদিত হয় বলে জানিয়েছেন জেলেরা। এ জালের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে সংশ্লিষ্টদের কঠোর ও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন