শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রমরমা বাণিজ্য

প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ

মো. দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

গাজীপুর জেলা সদরে অবৈধভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রমরমা বাণিজ্য। অনেক সময় রোগীরা ভুল রিপোর্টের কারণে পঙ্গুত্ববরণসহ অকালে জীবন হারাতে হয় অনেকের। ডাক্তারদের সেবা দিতে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুর সদরে বিভিন্নস্থানে গড়ে উঠেছে ১৫টির অধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল ও ক্লিনিক। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সরকারি নিয়ম-নীতিকে উপেক্ষা করে বছরের পর বছর অবৈধভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে বছরের পর বছর এসব প্রতিষ্ঠানে সেবার নামে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে নেই কোন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ টেকনোলজিস্ট। ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠানের ভুল প্যাথলজি রিপোর্টের গ্লানি টানতে হচ্ছে রোগীকে। একই পরীক্ষা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভিন্ন ভিন্ন ফলাফলে দিশেহারা হচ্ছেন দরিদ্র রোগীরা। একাধিকবার পরীক্ষা করে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন সরকারি হাসপাতালে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাসপাতালের ডাক্তারা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য তাদের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান। অনুসন্ধানে জানা গেছে এসব পরীক্ষা থেকে ডাক্তারা ৫০-৬০% পর্যন্ত কমিশন পেয়ে থাকেন।
হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নেই কোন গুরুত্ব। হাসপাতালের রাসায়নিক বর্জ্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ছাড়া দেয়া হয়না পরিবেশ ছাড়পত্র, আর পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া মেলেনা প্রাতিষ্ঠানিক রেজিস্ট্রেশন। তাই সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের নেই বৈধ কোন লাইসেন্স। অবৈধ চিকিৎসা কেন্দ্রে কতটা সঠিক চিকিৎসা দেয়া যায় সেটাও নিয়েও সুশীল সমাজের রয়েছে নানা প্রশ্ন।
অনুসন্ধানে ওঠে আসা গাজীপুর সদরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো হল, মনিপুর বাজারে আল-মদিনা হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মনিপুর মডেল হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, গ্যালাক্সি হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক ল্যাব, এসকে ডায়াগনস্টিক ও কনসালটেশন সেন্টার, ভাওয়াল মির্জাপুর ও বাংলাবাজার এলাকায় আলী আকবর ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হেলথ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কাজীমুদ্দিন জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ স্কয়ার হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক ল্যাব, বাংলাবাজার সেন্টাল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ছায়াপথ ক্লিনিক এন্ড হাসপাতাল, লাইফ কেয়ার মেডিকেল সেন্টার, ভাওয়াল মির্জাপুর লাইফ কেয়ার। এদের মাঝে শুধুমাত্র মনিপুর পপুলার হাসপাতাল ও জয়দেবপুর থানার সামনে সানফ্লাওয়ার হাসপাতাল ছাড়া বাকি সবাই পরিবেশের ছাড়পত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিজ নিজ সাইনবোর্ডে দেওয়ার নির্দেশনা থাকার পরও উল্লিখিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনোটাতেই দেখা মেলেনি রেজিস্ট্রেশন নম্বর।
এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ জানান, লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সরকারের নির্ধারিত ফি জমা দেওয়ার পরও গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে মিলছে না পরিবেশগত ছাড়পত্র। ছাড়পত্রের জন্য সরকারের নির্ধারিত ফি’র বাইরেও মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছেন গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। যার জন্য রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এমনটাই দাবি করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ।
স্বাস্থকর পরিবেশ নেই, পরিচালিত হচ্ছে পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া হাসপাতাল এসব বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুর জেলা উপ-পরিচালক মো. নয়ন মিয়া বলেন, তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকা এবং প্রিজমের সাথে চুক্তিপত্র নেই, নেই ইন্সুলেটর, যার জন্য তারা পরিবেশগত ছাড়পত্র পাচ্ছেন না। ছাড়পত্রের জন্য সরকারের নির্ধারিত ফি’র বাহিরেও মোটা অঙ্কের টাকা দাবি প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, পরিবেশের ছাড়পত্র পেতে হলে ইএমপি ইআইএ রিপোর্ট করতে হয়। এগুলো আমরা করি না উদ্যোক্তাদের কোন ইঞ্জিনিয়ার বা কোন ফার্মের কাছে গিয়ে করতে হয়। এইটার জন্য যদি তারা তাদেরকে কোন টাকা দেয় সেইটার দায়-দায়িত্ব তো আমার না।
সঠিকভাবে নিবন্ধন ও সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের উদ্যোগের ব্যাপারে গাজীপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. খাইরুজ্জামান বলেন, সরকারি নির্দেশনা মতে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া কোন নতুন হাসপাতাল নিবন্ধন পাবেনা। তবে পুরাতন ও চলমান হাসপাতাল মালিকদের দ্রুত ছাড়পত্র গ্রহণের জন্য সময় প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। অবৈধ হাসপাতাল ও অব্যবস্থাপনা ঠেকাতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। তাছাড়া প্রভাবশালী মহলের সুপারিশ নিয়েও আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। গাজীপুরে স্বাস্থ্যসেবায় অব্যবস্থাপনাকে কঠোর হস্তে দমন করা হচ্ছে এবং এ ধারা চলমান থাকবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন