শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র গর্জন

ক্স দেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে আগামীকাল : শক্তিশালী হবে আজ ক্স চর-উপকূল-দ্বীপাঞ্চলে বড় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা : ভয়-আতঙ্ক : দুর্যোগের প্রস্তুতি ক্স সাগর উত্তাল বন্দরে ৪ নম্বর হুশিয়ার

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরো ঘনীভূত হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর নাম ‘সিত্রাং’। থাইল্যান্ডের দেয়া এ নামের মানে ‘পাতা’। পূর্ব-মধ্য ও এর কাছাকাছি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরো উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এটি একই এলাকায় অবস্থান করছে। ‘সিত্রাং’ উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও আরো ঘনীভূত হতে পারে। আজ সোমবার ঘূর্ণিঝড়টি আরো প্রবল ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে বলে গতকাল রাতে জানায় ভারতের আবহাওয়া বিভাগ। প্রায় ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে একদিনেই এটি দ্রুত সময়ে নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়। এটি গতকাল ঘণ্টায় ১১ থেকে ১৮ কি.মি. গতিতে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগুতে থাকে এবং গতি বৃদ্ধি পায়। এর আগে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপ উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে গতকাল সকালে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। এটি পরবর্তী ধাপে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এ রূপ নিয়ে বঙ্গোপসাগরে গর্জন করছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। আজ সোমবার ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলের দিকে আরও এগিয়ে এলে সঙ্কেত বাড়ানো হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার দ্বিমুখী প্রভাবে দেশের সমুদ্র উপকূলীয় চর ও দ্বীপাঞ্চলে ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা ঘোষণা করা হয়েছে।
জলোচ্ছ্বাস হতে পারে ব্যাপক। এর ফলে উপকূলে বন্যা হতে পারে। উপকূলজুড়ে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। ১৯টি উপকূলীয় জেলার কোটি বাসিন্দার মাঝে সাইক্লোন-দুর্যোগের ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে। চলছে দুর্যোগে জানমাল রক্ষার প্রস্তুতি ও সতর্কীকরণ। দেশের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। কেমন গতিবেগ ও শক্তি নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করবে তা এখনই নিশ্চিত নয়। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস জোরালো হতে পারে। আবার, অতি বৃষ্টি হলে ‘সিত্রাং’ কম-বেশি দুর্বলও হয়ে যেতে পারে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ উত্তর, উত্তর-পূর্বমুখী বাঁক নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে বরিশাল-সন্দ্বীপ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পুরো উপকূলে এর প্রভাব পড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ পরিস্থিতি ও প্রস্তুতি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান গতকাল সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতির খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
গতকাল রাতে আবহাওয়া সতর্কবার্তায় আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরো উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এ পরিণত হয়। এটি পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭শ’ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র কেন্দ্রের গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিমি’র মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ কি.মি. বেগে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সাথে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মি.মি. থেকে ঊর্ধ্বে) বর্ষণ হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ পূর্বাভাস বুলেটিনে জানায়, নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে আজ রোববার সকাল নাগাদ পূর্ব-মধ্য ও এর কাছাকাছি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এটি ক্রমেই উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে গতিমুখ নিয়ে আগামীকাল সোমবার সকাল নাগাদ মধ্য-বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এরপর ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক বা মোড় নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল নাগাদ বাংলাদেশের বরিশাল-সন্দ্বীপ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরসমূহের জন্য আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পুর্ব, দক্ষিণ-পূর্বদিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কি.মি. বেগে বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি ও অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ০২ নম্বর নৌ হুশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব-প্রস্তুতি হিসেবে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ, পোল্ডার রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোকে সক্রিয় ও সতর্ক রাখা হয়েছে।
সুপার সাইক্লোন?
আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ‘গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম’ (জিএফএস)-এর বরাত দিয়ে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ^বিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ইতিপূর্বে জানান, ২৫ অক্টোবরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে সুপার সাইক্লোন সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। এর গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ২১০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের অন্দ্রপ্রদেশ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন উপকূলের যে কোন স্থান দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করতে পারে। আবহাওয়াবিদরা ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ সম্পর্কে এখনও কোন আভাস দেননি। তবে এটি সুপার সাইক্লোন হতে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন। আঘাতের সময়ে বৃষ্টিপাত হলে ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়েও পড়তে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় খেপুপাড়ায় ৭ মি.মি.। দেশের অধিকাংশ জায়গায় আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৫.২ এবং সর্বনিম্ন রাজারহাটে ১৮.৫ ডিগ্রি সে.। ঢাকায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩০.৩ ও সর্বনিম্ন ২৬.৩ ডিগ্রি সে.।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ৩ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Maksuda Akther Munny ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:০৮ এএম says : 0
আল্লাহ ভরসা,,, আল্লাহ রহমত করবেন,,,, ইনশাআল্লাহ,,,
Total Reply(0)
Mominul Haque Arafat ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:০৭ এএম says : 0
· রক্ষাকারী একমাত্র মাহান আরশের মালিক। ইয়া রব! আমার পরিবার ও আামাদেরকে এই দূর্যোগ থেকে রক্ষা করুন।
Total Reply(0)
এম. শামীম আহমদ ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:০৭ এএম says : 0
· আরো বড় বড় গজব আসবে যদি আলেম ওলামাদের মুক্তি দেওয়া না হয়!!
Total Reply(0)
Md Nurul Amin ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:০৭ এএম says : 0
আল্লাহ তুমি হেফাজত করো। আমরা সবাই বেশি বেশি করে ইস্তেগফার পড়ি। আস্তাগফিরুল্লাহ।
Total Reply(0)
Mohammad Rashel Gazi ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:০৭ এএম says : 0
আল্লাহ সবাইকে বিপদ থেকে হেফাজতে রাখুন আমিন
Total Reply(0)
Kobi Tahar Tahar ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:০৬ এএম says : 0
আল্লা ভরসা তবে আগের মত ভয় নাই সব জায়গাই ৩/৪/৫ তলা বাড়ী আছে আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যাবহার করুণ আল্লাহ সবাইকে হেফাযত রাখ আমিন
Total Reply(0)
Anisuzzaman Dollar ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:০৭ এএম says : 0
৪ নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত: বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১-৬১ কি.মি.। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনও আসেনি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন