বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

এতিমখানার পাঁচ সহস্রাধিক শিশু শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কুমিল্লায় সরকারি আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্ত প্রায় পৌনে তিনশ’ এতিমখানা বিপাকে পড়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নতুন নিয়মে আর্থিক বরাদ্দ বাতিল হওয়ায় বাসিন্দাদের এতিমখানা ছাড়তে হবে। এতে এতিমখানাগুলোর পাঁচ হাজারের বেশি অসহায় শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। অবহেলিত এসব শিশুদের দায়িত্ব কারা নেবেন, এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় নতুন নিয়ম সংশোধন এবং এতিম এসব শিশুদের আর্থিক সহায়তার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বেসরকারি এতিমখানা কল্যাণ পরিষদ।
জানা যায়, কারো মা নেই, কারো বাবা নেই। আবার কারো মা-বাবা কোনটি নেই। এমন প্রায় পাঁচ হাজার অসহায় অভিভাবকহীন শিশুদের দায়িত্ব নেন কুমিল্লায় ২৭৩টি ক্যাপিটেশনপ্রাপ্ত বেসরকারি এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। ২০১৩ সালের নীতিমালায় ১৪ ধরনের শিশুকে দুস্থ অসহায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের নতুন নীতিমালা করে অধ্যায়নরত ৫০ ভাগ শিশুর ক্যাপিটেশন বাদ দেয়া হয়। ফলে বিপাকে পড়ে দেশের অধিকাংশ এতিমখানা। সম্প্রতি সমাজসেবা অধিদপ্তর আবার নতুন নিয়ম চালু করে। যেখানে এতিম ছাড়া অন্য দুস্থদের ক্যাপিটেশন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নতুন এ নিয়মে ১৪ প্রকার দুস্থ অবহেলিত শিশুর কলামটি বাদ দেওয়া হয়। এর ফলে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার ২৭৩টি এতিমখানায় এতিমদের অধ্যায়নরত পাঁচ হাজারেরও বেশি দুস্থ অবহেলিত শিশু ক্যাপিটেশন সুবিধা থেকে বাদ পড়ে। দুস্থ, অবহেলিত শিশুদের ক্ষেত্রে সরকারি এ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমান দ্রব্যমূল্যের দামের উর্ধ্বগতিতে এসব এতিম শিশুদের পরিচালনা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত ২৭৩টি এতিমখানায় এতিম শিশুদের চেয়ে দুস্থদের সংখ্যাই বেশি। নানা কারণে পরিবারে তাদের ঠাঁই না হওয়ায় সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে এতিমখানায় আশ্রয় মিলে এসব দুস্থ অসহায় শিশুদের। ক্যাপিটেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের ছাড়তে হবে এতিমখানা। অভিভাবকহীন এসব দুস্থ শিশুরা এতিমখানা ছেড়ে কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে, কারা তাদের খাওয়া-পড়ার দায়িত্ব নেবে, কোথায় হবে তাদের শেষ আশ্রয়ের ঠিকানা? গণমাধ্যমের সামনে এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে দুস্থ শিশুদের মুখ থেকে। বেসরকারি এতিমখানা কর্তৃপক্ষও বিচলিত হয়ে উঠেছেন এসব অসহায় দুস্থ শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
বেসরকারি এতিমখানা কল্যান পরিষদের কুমিল্লা শাখার সভাপতি হাফেজ বাশারত ভূইয়া বলেন, নতুন নিয়মে আমরা আর দুস্থদের রাখতে পারবো না। যার ফলে অধিকাংশ এতিমখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কাজী লোকমান বলেন, ২০১৫ এবং সদ্য প্রনীত নতুন নিয়ম সংশোধন করে এসব এতিমখানায় অধ্যায়নরত ৮০ ভাগ নিবাসীকে ক্যাপিটেশনের আওতায় আনা না হলে সমাজে দুস্থদের চাপ অনেক বেড়ে যাবে।
কুমিল্লার সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, সমাজে অভিভাবকহীন দুস্থরা এতিমদের চাইতেও অসহায়। নতুন যে নিয়মটি চালু করা হয়েছে সেটি নীতিমালা নয়, এটি নতুন একটি ছক। এ ছকে সমাজের দুস্থরা বেসরকারি এতিমখানায় আর ক্যাপিটেশন সুবিধা পাবে না। যার ফলে অনেক দুস্থ বিপাকে পড়তে পারে। বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরে আলোচনা চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন