কম্বোডিয়ায় সাইবার ক্রীতদাস হিসাবে মানবপাচারকারী চক্রের একজন অন্যতম মূলহোতা মো. হারুন মিয়াকে (৫৪) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
দালালদের মাধ্যমে শিক্ষিত, কম্পিউটার বিষয়ে পারদর্শী বেকার যুবক যুবতীদের কম্বোডিয়ায় পাঠিয়ে তাদের থেকে পাসপোর্ট নিয়ে নেয়া হয়। এরপর তাদের প্রশিক্ষণের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছদ্মনামে একাউন্ট পরিচালনা করে অন্যদের কিভাবে প্রতারণা করা যায়, ভুয়া ক্লোন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা আত্মসাৎ করার কৌশল, ভুয়া নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে বা চ্যাটিং করা, ভয়েস কল ও ভিডিও কল রেকর্ডিং করে পরবর্তীতে ব্লাকমেইল করে অর্থ আত্মসাৎ করার কৌশল শেখানো হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন ১টি, সীমকার্ড ২টি এবং ভূয়া এনআইডি কার্ড ১টি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানায়, আসামী সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের অন্যতম মূলহোতা। সে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে উচ্চ বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি দেয়ার নাম করে ভিকটিম এবং তাদের অভিভাবকদের প্রলুব্ধ করে।
লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তার দালালদের মাধ্যমে শিক্ষিত, কম্পিউটার বিষয়ে পারদর্শী বেকার যুবক যুবতীদের প্রলুব্ধ করে থাকে। কম্বোডিয়ায় পাঠানোর খরচ হিসেবে প্রাথমিকভাবে তারা ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে থাকে। তারপর তাদেরকে বিমানে করে কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, কম্বোডিয়ায় যাওয়ার পর হারুন মিয়া ও তার সহযোগী কম্বোডিয়া প্রবাসীদের সহায়তায় প্রথমে ভিকটিমদের কম্বোডিয়ার একটি হোটেলে নিয়ে যায় এবং তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়া হয়। উক্ত হোটেলে কিছুদিন থাকার পর তাদেরকে কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য একটি বিদেশী ট্রেনিং সংস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়।
অধিনায়ক জানান, সেখানে বিদেশী প্রশিক্ষকরা ভিকটিমদের গুগল ট্রান্সলেটর এর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছদ্মনামে একাউন্ট পরিচালনা করে অন্যদের কিভাবে প্রতারণা করা যায়, ভুয়া ক্লোন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা আত্মসাৎ করার কৌশল, ভুয়া নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে বা চ্যাটিং করে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার নাম করে কৌশলে ডিপোজিট হাতিয়ে নেয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয়েস কল ও ভিডিও কল রেকর্ডিং করে পরবর্তীতে ব্লাকমেইল করে অর্থ আত্মসাৎ করার কৌশল শেখানো হয়। মানবপাচারকারীদের ভাষায় সাইবার প্রতারণার বিষয়টি স্ক্যামার হিসেবে পরিচিত। এভাবে তাদের ব্যবহার করে উক্ত মানবপাচারকারী চক্রটি সাইবার অপরাধের কার্যক্রম চালায়।
তিনি আরও জানান, উক্ত সাইবার প্রতারণার কাজে বাংলাদেশীদের ব্যবহার করার কারন হচ্ছে কোন বাংলাদেশী কম্বোডিয়া যাওয়ার পর তার পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিলে সে পালিয়ে যেতে পারবে না বা স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করতে সক্ষম হবেনা।
লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশী ভুক্তভোগীরা উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভনে পড়ে তার পরিচিতজনদের মাধ্যমেই দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা দেশে ফিরে বাংলাদেশী দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হলেও, কম্বোডিয়া প্রবাসী দালালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।
তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন