কলকারখানার দূষিত বর্জ্য ও বাজারে ময়লা-আর্বজনায় দূষিত হচ্ছে নরসিংদী হাড়িধোয়া নদী পানি। পৌরসভার অব্যবস্থাপনার কারনে এমন হচ্ছে বলে ধারণা এলাকাবাসীর। নরসিংদীর হাড়িধোয়া নদীতে এক সময় বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির মাছের বসবাস ছিল। নদীর পানি ব্যবহার হতো কৃষি কাজে। বর্তমানে কলকারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যে নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি। প্রতিনিয়তই বাড়ছে দূষণ। হাড়িধোয়ার স্বচ্ছ পানি এখন আলকাতরার মতো কালো রং ধারণ করেছে। কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ও বাজারের পরিত্যক্ত আবর্জনা ময়লা প্রতিনিয়ত মিশছে এই নদীতে। যার কারণে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে আছে এক সময়ের খরস্রোতা হাড়িধোয়া নদী। মানুষ অবাধে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষিত করছে নদী চারপাশের পরিবেশ। হাড়িধোয়া নদীর পুরাতন থানাঘাট থেকে হাজিপুর ব্রিজ, নরসিংদী বড় বাজার, বীরপুর, আর্শিনগর অংশের চারপাশ থেকে নদীতে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। ময়লা আবর্জনায় নদীর দু’পাশ পরিণত হয়েছে বিশাল বর্জ্যরে স্তূপে। ২০১৮ সালে নরসিংদীতে ছয়টি নদীর খনন প্রকল্পের কাজ শুরু করে। নদীগুলো হলো ১. আড়িয়াল খাঁ, ২. হাড়িধোয়া, ৩. পাহাড়িয়া, ৪. মেঘনা, ৫. ব্রহ্মপুত্র, ও ৬. পুরাতন ব্রহ্মপুত্র। কিন্তু এরপরও কমেনি নদীর দূষণ মাত্রা। স্থানীয় বাসিন্দা মিজান ও রুবেল মিয়া বলেন, ছোট বেলায় আমরা এই নদীতে মাছ শিকার ও গোসল করেছি। বর্তমানে এ নদীটি দূষণের ফলে সকল ঐতিহ্য হারিয়েছে। আশপাশের বিভিন্ন কলকারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য প্রতিদিনই নদীতে নামছে। পাশেই নরসিংদী বড়ো বাজার, এখানে প্রায় ১৫শ’র মতো দোকানপাট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব দোকানের আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। তাছাড়া নদী পাড়ের বসবাসরত মানুষরা নিজেদের ঘরের বাড়ির আবর্জনা ফেলে যাচ্ছে নদীতে। তারা আরও জানান, হাড়িধোয়া নদীর পানি থেকে এখন প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের জন্য নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে যেতে পারছেনা লোকজন।
আবু বকর মিয়া নামে এক জেলে বলেন, হাড়িধোয়া নদীটি এক সময় মিঠা পানির মাছের জন্য পুরো নরসিংদী জেলায় বিখ্যাত ছিল। এ নদীর মাছ ছিল খুব সুস্বাদু। রুই, কাতল, মৃগেল, পুঁটি, চিতল, বোয়াল, মলা, ঢেলা, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ এই নদীতে পাওয়া যেত। সবাই দল বেঁধে এসে মাছ ধরতাম। এক সময় নদীর পাড়ে বসে মানুষ আড্ডা দিতো। কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। তিনি আরও বলেন, ময়লা আর আবর্জনা নদীকে শেষ করে ফেলেছে। এখন নদীর দু’পাশে বড় বড় টিলার মতো আবর্জনা স্তূপ জমে রয়েছে। নরসিংদী বড় বাজার বণিক সমিতির সভাপতি বাবুল সরকার বলেন, নদীতে বাজারের নোংরা ময়লা ফেলা হচ্ছে, এটা ঠিক। কিন্তু আমরা ময়লা ফেলবো কোথায়? আমাদেরকে নির্ধারিত জায়গা দিতে হবে যে সেখানে আমরা ময়লা ফেলতে পারি।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের নরসিংদী জেলা শাখার আহ্বায়ক মিলন সরকার বলেন, হারিদোয়া নদী পানি নষ্ট করছেন কিছু ডাইং ফ্যাক্টরি। এসকল কারখানার ওয়েস্টিজ নদীতে ফেলে এবং তাদের ইটাভিবিহীন বিষাক্ত কেমিক্যাল যুক্ত পানি নদীতে মিশ্রিত হয়ে দূষণ করছে প্রচন্ডভাবে। ফ্যাক্টরিতে ইটিভি প্ল্যান আছে কিন্তু অনেকে ব্যবহার করছে না। যার প্রমাণও রয়েছে বিদ্যমান। নদীর পাশে রয়েছে নামে-বেনামে অবৈধ কিছু চানাচুরের কারখানার। এ সকল ফ্যাক্টরি পলিথিন ও ওয়েস্টেজ নদীতে ফেলে দূষণ মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। আল্লাহ চত্বর থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত মেইন রাস্তায় ময়লার বাগার, ময়লা দুর্গন্ধে ঐ এলাকা দিয়ে চলাফেরা করতে পারছে না সাধারণ জনগণ। আশপাশে রয়েছে চিনিশপুর ও হাজীপুর ইউনিয়নের জনবসতি এলাকা তাদের ময়লা ফেলানোর কোন জায়গা না থাকায় সকল বাসা বাড়ির ময়লা নদীতে ফেলানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে নরসিংদী পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু বলেন, প্রতিদিন ময়লার গাড়ি বাজারে যায়। তারপরও তারা কেন নদীতে ময়লা ফেলছে সেটা আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। নদীর আশপাশের কলকারখানাগুলোও নদী দূষণ করছে কিনা সেটাও আমি মনিটরিং করবো।
পরিবেশ সচেতন নাগরিকরা বলেন, এ ব্যপারে নরসিংদী মেয়রের বর্জ্য ব্যাপস্থাপনায় সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে নাই। বিশিষ্টজনরা মনে করেন, পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনই সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। নতুবা জনভোগান্তি আরো চরম আকার ধারণ করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন