শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

প্রথম প্রতিরোধ যোদ্ধা সাবেক পুলিশ সদস্য শেখ আকরামুজ্জামানের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেই

| প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যোদ্ধা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য শেখ আকরামুজ্জামানের (৬৯) মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র নেই। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান না। জাতির অকুতোভয় এ সূর্য সন্তান জীবন সায়াহ্নে এসে মুক্তিযুদ্ধের সনদপত্র ও ভাতা পেতে চাইছেন। ভাতা মিললে তিনি আরো স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করতে পারবেন। সনদপত্র পেলে ছোট ছেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি পাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত মোঃ শকির উদ্দিন শেখের ছেলে শেখ আকরামুজ্জামান। স্কুলের গÐি না পেরুতেই ১৯৪৮ সালে প্রভিশনাল রিজার্ভ ফোর্সে (পি.আর.এফ) যোগ দেন শেখ আকরামুজ্জামান। প্রথমে তিনি বরিশালে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি ঢাকা রাজারবাগ প্রভিশনাল রিজার্ভ ফোর্সে বদলি হয়ে আসেন। ২৫ মার্চ কালো রাতে পাক বাহিনী রাজারবাগ আক্রমণ চালায়। ঘুমন্ত নিরস্ত্র প্রভিশনাল রিজার্ভ ফোর্স সদস্যদের নির্বিচারে হত্যা করে। তখন শেখ আকরামুজ্জামান, বক্সি জাহাঙ্গীর, আব্দুস সালাম, জয়নাল, ট্রাফিক নূর উদ্দিন কাজী, জয়নাল, শাহেদ আলী ও বাবার আলীসহ বাঙালি প্রভিশনাল রিজার্ভ ফোর্স সদস্য পাক বাহিনীকে প্রতিরোধ করেন। পাকবাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের সাথে প্রতিরোধ যুদ্ধে টিকতে না পেরে তারা পিছু হটেন। রাজারবাগ থেকে পালিয়ে এসে আকরামুজ্জামান ভারতের পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে বর্ণপুরে ১শ’ যুবকের সাথে তিনি বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ পর্বে তিনি দেশে ফিরে এসে যশোর জেলার বেনাপোল সীমান্তের পেট্রাপোল, পুটখালী ও রঘুনাথপুরে পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি ফের পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে তিনি এস.এস.সি পাস করেন। পুলিশে এএসআই হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০০৭ সালে তিনি রাজবাড়ী জেলা পুলিশে কর্মরত অবস্থায় চাকরি থেকে অবসর নেন।
প্রথম প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে পুলিশ বাহিনী আকরামুজ্জামকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে ৪ লাখ টাকার অনুদান দেয়া হয়েছে। তিনি অবসর গ্রহণ করার পরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখনো পুলিশের রেশন পাচ্ছেন।
শেখ আকরামুজ্জামান বলেন, দেশ স্বাধীনের পর ঢাকা পুলিশের রিজার্ভ অফিসারে কাছে ভারতের ক্যাম্প থেকে পাওয়া সনদপত্র জমা দেই। সেখান থেকে আমার সনদ হারিয়ে যায়। তারপর চাকরিতে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বছাইয়ের সময়ে আমি সাতক্ষীরায় কর্মরত ছিলাম। আমার অজান্তেই এ কাজ সম্পন্ন হয়। তাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারিনি। এছাড়া কাশিয়ানী উপজেলার এক প্রভাবশালী মুক্তিযোদ্ধা আমাকে মুক্তিযোদ্ধা করে দিতে ৪ হাজার টাকা দাবি করে। আমি তখন টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা হতে অস্বীকৃতি জানাই। তারপর আর এ ব্যাপারে চেষ্টা করিনি। পুলিশ বিভাগ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যথেষ্ট মূল্যায়ন করেছে। আমার ৪ ছেলে ১ মেয়ে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। আমার মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র না থাকায় কোনো ছেলে সরকারি চাকরি পায়নি। সনদ পেলে ছোট ছেলে অন্তত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি করার সুযোগ পাবে। আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাই না। ভাতা পেলে পরিবার পরিজন নিয়ে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাতে পারতাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন