বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রংপুরের বিভাগীয় জনসমাবেশে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হাসিনার অধিনে আর কোন নির্বাচন নয়।
এই সংসদে বিএনপির যে এমপিরা রয়েছেন নির্দেশ পেলেই তারা পদত্যাগের জন্য প্রস্তত রয়েছে। এসময় তিনি সভামঞ্চে উপস্থিত সংসদ
সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ( ঠাকুর গাঁও) এবং
চাঁপাই নবাবগঞ্জের হারুনুর রশীদের নাম উল্লেখ
করেন।
মীর্জা ফখরুল শনিবার বিকেলে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে বিএনপির রংপুর
বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধাণ অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
লক্ষাধিক মানুষের এই বিশাল সমাবেশ সফল
করার জন্য রংপুর বিভাগের নেতা কর্মি ও সাধারণ মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, এই সমাবেশের একটাই
দাবি এই সরকারের পদত্যাগ চাই।
কারন গত ১৫ বছরে এই আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের যত অর্জন সব শেষ করে দিয়েছে। চারিদিকে শুধু চুরি আর চুরি। বিধবা ভাতা,বয়ষ্ক ভাতা,ব্রীজ,কালভার্ট,আশ্রায়ন প্রকল্প
সব জায়গায় শুধু লুট আর চুরি।
এরা যেন মুনতাসীর ফ্যান্টাসী চরিত্রের মতই সর্বভুক সরকারে পরিণত হয়েছে।
এরা মিথ্যা মামলা দিয়ে জননন্দীত নেত্রী বেগম
খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দী করে রেখেছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও মামলা দিয়ে তাকে দেশে আসতে দিচ্ছেনা।
সারাদেশে বিএনপি নেতা কর্মিদের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ মামলা দিয়েছে। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম সহ ৬ শত নেতা কর্মি সাধারণ মানুষকে গুম করেছে। আলেম ওলামাদেরও ছাড়েনি।
এরপরও এদের ক্ষমতায় রাখা যায় বলে প্রশ্ন করেন তিনি।
ব্যর্থ সরকার প্রধান যখন নিজেই আসন্ন দুর্ভিক্ষের কথা বলেন তখন মানুষ কোথায় যাবে ?
পরিষ্কার বলতে চাই দুর্ভিক্ষ হলে তার দায় নিতে হবে প্রধান মন্ত্রীকেই। তিনি বলেন দুর্ভিক্ষ তার বাবার আমলেও হয়েছিল। সেদিন লজ্জা নিবারনের জন্য চিলমারীর বাসন্তীকে জাল পরতে হয়েছিল। মৃত মানুষের জন্য কাফনের
কাপড়ও পাওয়া যায়নি।
মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের পতন অবশম্ভাবী বলে উল্লেখ করে বলেন,
সেটা বুঝতে পেরে সরকার নতুন করে জঙ্গি নাটকের প্লট তৈরি করছে। তবে আমেরিকা সহ
পশ্চিমা বিশ্ব সরকারের এই চালাকি ধরে ফেলেছে তাই তাদের আর কোনভাবেই নিস্তার নেই।
এই জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান
সামু। রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মাহফুজুন্নবী ডন ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাতুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিশেষ অতিথি বেগম সেলিমা রহমান, সাবেক মন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মীর্জা ফখরুল আরো বলেন, রংপুরের মানুষ বলেন, রংপুর অঞ্চলেই
বৃটিশদের বিরুদ্ধে ফকির ও সন্যাসী বিদ্রোহ হয়েছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই অঞ্চলেই বেড়ে উঠেছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা
দের মধ্যে অন্যতম পুরোধা মশিউর রহমান যাদু
মিঞা রংপুরের এবং পাশের বগুড়া জেলায় শহীদ জিয়ার জন্মভূমি। তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভাবে বেড়ে ওঠা বগুড়া থেকেই।
শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে আমরা মুক্তি যুদ্ধ করেছি
হাসিনার অগণতান্ত্রিক শাসনের জন্য নয়। মুক্তিযুদ্ধ করেছি গনতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য।
জনসমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা রংপুরে আন্দোলনের কর্মসুচি দিয়েছিলাম। কিন্তু রংপুর
বাসী সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১ দিনের সমাবেশকে ৩ দিনের কর্মসুচিতে রুপান্তর করে
দিয়েছে। তারা আন্দোলন কর্মসুচিকে বিপ্লবে
পরিণত করেছে। তাই সরকারের আর নিস্তার নেই পতন তাদের অনিবার্য।
তিনি বলেন, আগে সরকারকে কাবু করতে বিরোধী দল হরতাল করতো। এখন বেসামাল হয়ে সরকারই বিরোধী দলের বিরুদ্ধে হরতাল
করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। জনগন নয় এরা এখন পেটোয়া লীগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংক ও শেয়ার বাজারের টাকা লুটপাট করে রিজার্ভ খালি করে প্রধাণমন্ত্রী এখন দুর্ভিক্ষের কথা বলে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে চাচ্ছে। কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হবেনা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেগম সেলিনা রহমান
বলেন, জনগণ যখন প্রতিবাদে সোচ্চার হয় জেগে ওঠে তখন তাদের আর দমিয়ে রাখা যায়না। রংপুরের মানুষ আজ সেটাই দেখিয়ে
দিয়েছে। প্রতিবাদী জনতাকে সাথে নিয়েই আমরা সরকারের পতন ঘটিয়ে নারায়নগঞ্জের শহীদ শাওন সহ সকল শহীদের রক্তের বদলা নেওয়া হবে।
গনসমাবেশের আরেক বিশেষ অতিথি বলেন,
আওয়ামী লীগের ইতিহাস লোক ঠকানোর ইতিহাস, তারা ৭১ এর ২৫ মার্চ পাক বাহিনীর আক্রমণে কেউ পালিয়েছে কেউ আত্মসমর্পণ করেছে। সেই সময় মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাতেই দিশাহারা জাতি দিশা খুঁজে পায়।
৭৪ এর দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি ছিলো আওয়ামী লীগের একনাশকত্ব ও লুটপাটের ফসল।
সেখানে থেকে শহীদ জিয়া দেশকে গনতন্ত্র ও
স্বনির্ভরতার দিকে নিয়ে যান। ৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতা পেলে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে সাথে নিয়ে কেয়ার টেকার সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে।
বেগম খালেদা জিয়া সেদিন সংসদে তত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করে ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সেই সাহস ও সততা কি শেখ হাসিনার আছে ?
রিজার্ভের বড়াই করা সরকার এখন আসন্ন দুর্ভিক্ষের কথা বলছে। আইএমএফের কাছে ঋন চাওয়ায় আইএমএফ প্রকৃত রিজার্ভ কত
জানতে চেয়েছে কারন সরকারকে কেউ আর বিশ্বাস করেনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দুর্ভিক্ষ হয়।
ওবায়দুল কাদেরের খেলা হবে প্রসঙ্গে তিনি বলেন,উনি বলেছেন খেলা হবে,খেলাতো আসলে শুরু হয়েছে ২২ সেপ্টেম্বর থেকেই।
তিনি বলেন, তিনদিন ধরে চিড়া,মুড়ি কলা খেয়ে
খোলা মাঠে রাস্তায় ঘুমিয়ে রংপুরবাসী যে ত্যাগে
দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তাতেই সরকারের ভিত নড়ে উঠেছে।
গনসমাবেশের সমন্বয়ক ও ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ জেত এম জাহিদ হাসান বলেন,
রংপুরে ৭৯ সালের মতো ফের বিএনপির উত্থান
হবে। নতুন করে ধানের শীষের চারা গজাবে ফের।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ এমপি, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিষ্টার নওশাদ জমির, বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল খালেক,গ্রাম বিষয়ক সম্পাদক আনিসুজ্জামান খান বাদল, ড্যাব মহাসচিব ডাক্তার আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, কেন্দ্রীয় যুবদল সভাপতি আব্দুল মোমেন মুন্না, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন, ওলামা দলের সভাপতি আলহাজ্ব নেছারুল হক, মৎসজীবীদলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহাতাব,তাতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ সহ জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে গঙ্গাচড়া ছাত্রদলের তুষার আহম্মেদ নামের এক ছাত্র দল নেতা বলেন, তিনি সহ ৬ জন পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন। একটা
চোখ নষ্ট হয়েছে।
তবে আমি এতে ভীত নই। শুধু চোখ কেন প্রয়োজনে জীবন দেব তবু আপোষ করবোনা পিছু হটবোনা।
এদিকে রংপুর কালেক্টরেট মাঠে আগের দিন ও
রাত থেকেই কয়েকহাজার বিএনপি কর্মি অবস্থান নিয়ে ছিলো।
শনিবার গনসমাবেশের নির্ধারিত সময়ের আগেই বেলা ১১ টায় মাঠ জনসমুদ্র হয়ে ওঠে।
জোহরের পরে রংপুর শহরের বেশিরভাগ রাস্তা
সমাবেশে আগত মানুষে সয়লাব হয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজনের মতে রংপুরের ইতিহাসে
এতবড় জনসমাগম নজির বিহীন।
সমাবেশে আগতদের মধ্যে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা থেকে মিজানুর রহমান নামের এক কর্মির মৃত্যু হয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন