বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

বিনা ছুটিতে এক বছরের বেশি বিদেশে থাকার পর ঢাবি শিক্ষকের পদত্যাগ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ৭:৫৯ পিএম

বিনা ছুটিতে এক বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশে থাকার সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা প্রশাসনের (আইবিএ) অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর ক্ষনিকা গোপ। ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ও সিঅ্যান্ডডি কমিটির একাধিক সদস্য ইনকিলাবকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিনা ছুটিতে এক বছরের বেশি সময় বিদেশে অবস্থান করা ও পদত্যাগ পত্র পাঠানোর বিষয়টি গত ১৮ অক্টোবর বিকেল তিনটায় অনুষ্ঠিত ইন্সটিটিউটের একাডেমিক কমিটির সভায় উত্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন। এর আগে বিদেশে অবস্থান করার বিষয়টি কেউ জানতো না বলে জানান একাডেমিক কমিটির এসব সদস্য।

এর আগে গত ১৬ অক্টোবর দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি জাতীয় পত্রিকায় বিনা ছুটিতে ওই শিক্ষকের বিদেশে অবস্থানের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদের কোনো প্রতিবাদ না করে দু'দিনের মধ্যেই পদত্যাগ করেন ওই শিক্ষক। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি পান তিনি।


তথ্য অনুযায়ী, ক্ষনিকা গোপ ২০২১ সালের ২০ মে থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত গত দেড় বছরে চারটি সফরে মোট ৩৫৫ দিন দুটি দেশে (ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র) অবস্থান করেছেন। কিন্তু এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি বা ছুটি নেননি। এ সময় ক্লাসসহ জরুরি একাডেমিক কাজ অনলাইনে সারতেন ক্ষনিকা গোপ। তবে বিদেশে থাকার বিষয়টি জানতেন না একাডেমিক ও সিঅ্যান্ডডি কমিটির সদস্যরা। একাধিক সিঅ্যান্ডডি কমিটির সদস্য জানায়, ক্ষণিকা গোপ দেশেই আছেন এবং অসুস্থতার কারণে ক্লাস নিচ্ছেন বলে পরিচালক স্যার আমাদের বিভিন্ন মিটিংয়ে জানিয়েছেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত বিদেশে ভ্রমণ করা শিক্ষকদের জন্য অনুমোদিত সরকারি আদেশের (জিও) সার্কুলারগুলোতেও ক্ষণিকা গোপের ওইসব সফরের জন্য ইস্যুকৃত কোনো জিও পাওয়া যায়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এসব বিষয় জানতে ক্ষনিকা গোপের দু'টো নাম্বারে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাডেমিক কমিটির একজন সদস্য জানায়, সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর আইবিএ পরিচালক বরাবর পদত্যাগ পত্র জমা দেন ওই শিক্ষিকা। পরে বিষয়টি পরিচালক স্যার একাডেমিক কমিটির সভায় উত্থাপন করলে আমরা বিষয়টি জানতে পারি। এর আগে আমরা কেউই ওনার বিদেশে থাকার বিষয়টি জানতাম না। বিগত এক বছরে ওনার সাথে দু'বার আমাদের দেখা হয়েছিল। তাও ছিল শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে। আমরা জানতে পেরেছি এই এক বছরে তিনি দু'বার দেশে এসেছেন এবং প্রায় ৪০ দিনের মতো দেশে অবস্থান করেছেন।

একাডেমিক কমিটির ওই সদস্য আরো বলেন, পুরো বছর জুড়ে আমাদের একটা ভাইভ দিয়ে আসছেন যে তিনি দেশেই আছেন এবং প্রেগন্যান্সির কারণে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। গত সেমিস্টার পর্যন্ত অনুমতি থাকলেও চলতি সেমিস্টারে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার অনুমতি ওনাকে দেয়া হয়নাই। তাও তিনি অনলাইনেই ক্লাস নিয়েছেন। পুরো বছর জুড়ে তিনি আমাদের একাডেমিক কমিটি, ইন্সটিটিউট এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রতারণা করেছেন।
একাডেমিক ও সিঅ্যান্ডডি কমিটির আরেক সদস্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে বিগত এক বছরের বেশি সময় তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এসময়টাতে বিনা অনুমতিতে অনলাইনে ক্লাসও নিয়েছেন। একাডেমিক কমিটির সাথে প্রতারণা করেছেন। সবশেষ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর স্বেচ্ছায় রিজাইন করেছেন। যেহেতু তিনি কোনোরকম প্রতিবাদ না করে রিজাইন করেছেন তাই আমরা বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব জানিয়েছিলাম একাডেমিক কমিটির সভায়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এ ধরনের প্রতারণা করে কেউ পার পেয়ে যাবে-এমনটা হলে তো বিষয়টা খুবই দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে আইবিএ পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনক একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সরাসরি কথা বলতে ওনার অফিসে গেলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরবর্তী সিঅ্যান্ডডি মিটিংয়ে ক্ষনিকা গোপের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট একটি প্রস্তাব দেয়া হতে পারে এবং সিন্ডিকেটের পরবর্তী সভায় এ সংক্রান্ত একটি এজেন্ডাও থাকার কথা জানা যায়। প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, এ বিষয়ে এখনো অফিশিয়াল কোনো অভিযোগ আসেনি। আসলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায় নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন