সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে বন্য হাতির তাণ্ডব বেড়ে গেছে। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের তাওয়াকুচা টিলাপাড়া গ্রামে বন্য হাতির পায়ে পৃষ্ট হয়ে রবি জল (৫৫) নামে ১ কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত কৃষক ওই গ্রামের সামু শেখের ছেলে। অপর দিকে দিনমজুর আবদুল মোতালেবের বসতবাড়িতে তাণ্ডব চালিয়ে তছনছ করেছে বন্যহাতির পাল। গত শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গুরুচরণ দুধনই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আবদুল মোতালেব মৃত জানলি শেখের ছেলে। গত ৫ নভেম্বর দিনগত রাত ৯টায় রবিজল হাতির আক্রমণে মারা যায়।
জানা যায়, গত শনিবার সন্ধ্যার আগ থেকেই একপাল বন্যহাতি আধা পাঁকা ধান খাওয়ার জন্য বালিঝুড়ির সীমান্তবর্তী গ্রামের লোকালয়ে নেমে আসে। দিশেহারা কৃষকরা কষ্টার্জিত ধান ক্ষেত রক্ষায় মশাল জ¦ালিয়ে, লাঠিসোটাসহ হাতির পালকে তাড়া করে। হতির পালও মানুষকে তাড়া করে। শুরু হয় মানুষ-হাতির যুদ্ধ। যুদ্ধে রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টার দিকে কৃষকদের বাঁধা উপেক্ষা করে ধান ক্ষেতে নেমে আসে বন্যহাতির পাল। পাকা ধান খেয়ে সাবাড় করতে থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষকরা হাতি তাড়াতে নেমে পড়ে। মানুষ ও হাতির দৌড়াদৌড়ির যুদ্ধের এক পর্যায়ে হাতির পায়ে পৃষ্ট হয়ে কৃষক রবিজল মারাত্মকভাবে আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে কাংশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রবিজলের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত, ভারাকান্ত ও মর্মাহত।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ ও থানার ওসি মো. মনিরুল আলম ভূঁইয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ মৃত কৃষক পরিবারের খোঁজ-খবর নেন এবং মৃতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। অপরদিকে একপাল বন্যহাতির তাণ্ডবে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে দিনমজুর আবদুল মোতালেবের বসতবাড়ি তছনছ হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গুরুচরণ দুধনই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ক্ষতিগ্রস্ত আবদুল মোতালেব জানান, রাত আড়াইটার দিকে বন্যহাতির পাল বাড়িতে প্রবেশ করে বসত ঘরের সিমেন্টের খুঁটি, বেড়া, রান্না ঘর ভেঙে তছনছ করে। বসত ঘরে থাকা আলনা, ফ্রিজ, হাঁড়িুপাতিল, জামা-কাপড়সহ আসবাবপত্র পা দিয়ে পিষে নষ্ট করে। ঘরবাড়ি ফেলে জীবন বাঁচাতে পালিয়েছেন তারা। ঘণ্টাব্যপী তাণ্ডব চালায় বন্যহাতির পাল। শুধু তাই নয় ঘরে রাখা চাল ও ধান নষ্ট করেছে ক্ষুধার্ত হাতির পালটি। তার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রহমত আলী বলেন, গত ক’দিন ধরে গারো পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় খাবারের সন্ধানে বন্যহাতির পাল হানা দিচ্ছে। বন্যহাতির পাল লোকালয়ে প্রবেশ করে কাঁচা ধান, সবজি, গাছ-পালাসহ মানুষের ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সহকারী বন সংরক্ষক (প্রবি) ও রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম, গারো পাহাড়ে প্রতি বছরই বন্যহাতি খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে এসে জানমালের ক্ষতি করে যাচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের বন বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়। বন বিভাগের আইন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে সহযোগিতা করা হবে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িটি পরিদর্শন করেছি। তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত যথাসম্ভব সহযোগিতা করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন