সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকারের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত থাকবে Ñমর্মে আদেশে বলা হয়েছে।
গতকাল রোববার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আপিলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিনউদ্দিন। রিটের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকারের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। সেইসঙ্গে এই সময়ের মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে বলা হয়।
গত ২৫ আগস্ট সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকারের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান বাতিল করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১(১) ধারা বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থি ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন।
পরে এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস।
আদেশের বিষয়ে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালত রায়ে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর ৪১(১) ধারা বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থি, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি বলে ঘোষণা করেছেন। আদালত বলেছেন যে, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। তারপরও ৪১(১) ধারা করে সেখানে সরকারি কর্মচারীদের আলাদাভাবে একটি সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। তা কোনোভাবেই সংবিধান সম্মত নয়, এ আইনি অসদুদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষা দিতে এ আইনের ৪১(১) ধারা সংযোজন করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ রায়ের ফলে তাদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই। আমরা আদালতকে দেখিয়েছি এই আইন করার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য, সেটি হচ্ছে, সরকারি কর্মচারীদের সাধারণ নাগরিক থেকে একটু আলাদা করে তাদের একটি বিশেষ শ্রেণি হিসেবে দেখিয়ে অনেক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। অপরাধ করলেও যেন তারা অপরাধী হিসেবে শাস্তি না পায়। বিশেষ করে এই আইনের মাধ্যমে দুদকের যে স্বাধীনতা সেটা খর্ব করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহিত হওয়ার আগে, তাকে গ্রেফতার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন