শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

নিষিদ্ধ রিংজালে বিলুপ্তির পথে দেশীয় মাছ

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কুমিল্লার খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় থেকে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ দেশিয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট ছোট মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ও একশ্রেণির মানুষের কারণে ছোট জাতীয় অনেক মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জলাভূমির সঙ্গে সংযোগ খাল ভরাট, জলাশয়ে বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকা এবং প্রজনন মৌসুমে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া।
আরেকটি কারণের মধ্যে রয়েছে- একশ্রেণির মানুষ অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজনন সক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, নিষিদ্ধ কারেন্ট বা রিংজালের ব্যবহার করে মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করায় দেশিয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-ছোট মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তির শঙ্কায় থাকা এসব মাছের মধ্যে রয়েছে- চ্যাপিলা, বইচা, আইড়, পুঁটি, সরপুঁটি, বাইলা, মেনি, শিং, মাগুর, শোল, কই, টাকি ইত্যাদি
খাল, বিল, জলাশয়ে একসময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বাজারগুলোও ভরে যেত দেশিয় মাছে। বর্তমানে চায়না প্রযুক্তির কারেন্ট জালের পর রিংজাল ব্যবহার করায় ওই জাতীয় ছোট মাছের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। ফলে বাজারে ছোট প্রজাতির মাছের সরবরাহ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।
কুমিল্লার মুরাদনগর, দাউদকান্দি, দেবিদ্বার ও লাকসামে খাল, বিল, জলায়শের ছোট মাছ ধরার জন্য রিংজালের ব্যবহারে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে একশ্রেণির মৎস্য শিকারিদের মধ্যে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওইসব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চায়না রিংজাল নদ-নদী, খাল-বিল জুড়ে ফাঁদ পেতে রাখা হচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক সবধরনের দেশিয় মাছ ধরা পড়ছে চায়না প্রযুক্তির রিংজালে।
বিশেষ করে মুরাদনগরে রিংজালের ব্যবহার অত্যধিকহারে বেড়েছে। এ উপজেলার রামচন্দ্রপুর ও কোম্পানিগঞ্জসহ বিভিন্ন বাজার থেকে রিংজাল কিনে খাল-বিলের মাঝে অবাধে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে লোকজন। প্রতিদিনই মাছ ধরার এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। কেউ কেউ খাল বা বিলের পাড়ে টং ঘর বানিয়ে একেবারে জেঁকে বসেছেন। সন্ধ্যা রাতে রিংজালের ফাঁদ পেতে রাখে খাল, বিল, জলাশয়ে। পরদিন খুব ভোরে রিংজাল উঠিয়ে দেশিয় প্রজাতির মাছ ধরে নিচ্ছেন তারা।
মুরাদনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান বলেন, সকল প্রকার নিষিদ্ধ ‘কারেন্ট জাল ও চায়না রিংজাল দিয়ে মাছ শিকার করা বেআইনি কাজ। মাছ শিকারে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার না করার জন্য প্রচার প্রচারণা চলমান রয়েছে। আমরা দ্রুত সকল প্রকার নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো।
কুমিল্লা ময়নামতি মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আকারে ছোট হলেও এসব দেশিয় মাছ পুষ্টিগুণে সেরা। তাই এসব মাছ বিলুপ্তির কারণে পুষ্টির বড় উৎস্য হারিয়ে যাচ্ছে। খাল, বিল, জলাশয়ে মূলত ছোট মাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকে। জমিতে রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে এবং কারেন্ট জাল বা রিংজাল ব্যবহার করায় প্রোটিন ছাড়াও ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন ও ভিটামিনযুক্ত এসব মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কারেন্টজাল বা রিংজালের ব্যবহার বন্ধ এবং জমিতে কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে দেশিয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করা সম্ভব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন