বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল কমিটিগুলো দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী এক বছরের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এই কমিটিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে মেধাবী ও তরুণরাই বেশি পদ পেয়েছে। তবে এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হলে হত্যা চেষ্টার আসামি, মাদক ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক হামলার সাথে জড়িতরাও রয়েছে। এতে করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমলোচনার ঝড় বইছে।
সম্মেলনের দিন ও পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ চার নেতা বারবার বলেছেন, কমিটিতে অভিযুক্তদের কোন স্থান দেয়া হবে না। তারপরও নতুন কমিটি ঘোষণার পর দেখা যায়, হল কমিটিতে স্থান পেয়েছেন অনেক অভিযুক্তই এর মাঝে। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, আমাদের জানামতে কমিটিতে কোন অভিযুক্ত স্থান পায়নি। জাকির হোসাইন আরো বলেন, আমরা ৫ জানুয়ারির পূর্বে যারা সঙ্কট সময়ে দলের সাথে ছিল তাদের কে মূল্যায়ন করেছি। এর কারণে বিতর্কিত কেউ আসার সুযোগ নেই।
কমিটিতে স্থান পাওয়া অভিযুক্তদের মাঝে আছেন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান ও মাস্টারদা সূর্যসেন হলের সভাপতি মো: গোলাম সরোয়ার এদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। ২০১৬ সালের ৭ই জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটির উপ গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক সাগর হোসাইন সোহাগকে নীলক্ষেতে মারধর করে সোহান ও গোলাম সরওয়ারের নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মী। এ ঘটনায় সোহাগ বাদী হয়ে ৯ই জানুয়ারি নিউমার্কেট থানায় হত্যাচেষ্টা ধারায় মামলা করে। মামলায় দুইজনকে আসামী করা হয়। এক নম্বর আসামী সোহান ও অপরজন মো. গোলাম সরওয়ার। মামলা নং-৩। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্বে সোহান ছাত্রদল নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের সঙ্গে তাদের অভ্যন্তরীণ কর্মসূচীগুলোতে অংশ নিতো বলে জানা যায়, গোলাম সরোয়ার এর বিরুদ্ধে হল থেকে বৈধ ছাত্রদের বের করে সেখানে নিজ গ্রæপের কর্মীদের সিট দেয়ার ও অভিযোগ আছে।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস ২০১৩ সালের ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যের সামনে চাঁদাবাজী করতে গেলে বাঁধা দেয় সাংবাদিকরা। এসময় পাঁচ সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। স্যার এফ রহমান হলের সভাপতি হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে উদ্যানে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারামারির ও হলে জুয়ার আসর পরিচালনা করার অভিযোগ আছে, এছাড়াও ৫ জানুয়ারীর পূর্বে সে নিয়মিত সূর্যসেন হলের ছাত্রদলের যুগ্ম আহŸায়ক রাজুর সাথে বরিশাল গ্রæপে ছাত্রদলের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার অভিযোগও রয়েছে।
জগন্নাথ হলের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাস গত ১৪ই ফেব্রæয়ারি জগন্নাথ হলের নর্থ ভবনে ক্যান্টিনের কর্মচারিদের মারধর করেন তার নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী। বাধা দিতে গেলে হামলা চালিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের দুই নেতাকে গুরুতর আহত করে তার কর্মীরা।
এদিকে অন্য হল গুলোতে পেয়েছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি বরিকুল ইসলাম বাঁধন ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান; মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সভাপতি ইউসুফ উদ্দীন খান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ; বিজয় একাত্তর হলে সভাপতি ফকির রাসেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদার; মাস্টারদা সূর্য সেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম সরোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন; হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে সভাপতি জহিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান সানী; শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হলের সভাপতি সোহানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদার; স্যার এ এফ রহমান হলের সভাপতি হাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান; পল্লীকবি জসীমউদ্দীন হলে সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান; সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সভাপতি তাহসান আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান তাপস; জগন্নাথ হলের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাস; ফজলুল হক মুসলিম হলের সভাপতি শাহারিয়ার সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান; শহীদুল্লাহ হলের সভাপতি সাকিব হাসান ও সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন এবং অমর একুশে হলের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক এহসান উল্লাহ।
পাঁচটি ছাত্রী হলের মধ্যে বেগম রোকেয়া হলের সভাপতি লিপি আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী ইসলাম; শামসুন নাহার হলের সভাপতি নিপু ইসলাম (তন্বী) ও সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা; বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সভাপতি বেনজির হোসেন (নিশি) ও সাধারণ সম্পাদক রনক জাহান (রাইন); বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের সভাপতি ফরিদা পারভীন ও সাধারণ সম্পাদক শ্রাবন্তী শায়লা এবং বেগম সুফিয়া কামাল হলের সভাপতি ইফফাত জাহান (এশা) ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সারজিয়া শারমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন