শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

১০ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ

পটুয়াখালীর সাথে তিনটি উপজেলার সংযোগে ৫৭৬ মিটার সেতু

মো. জাকির হোসেন, পটুয়াখালী থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

৫৭৬ মিটার দৈর্ঘ্য একটি সেতু। ১০ বছরেও নির্মাণ শেষ না হওয়ায় ঝুলে আছে পটুয়াখালী জেলা শহরের সাথে তিনটি উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। পটুয়াখালী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া লোহালিয়া নদীর ওপর ২০১২ সালে শুরু হয়েছিল লোহালিয়া সেতুর নির্মাণ কাজ। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও ৫৭৬.২৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭.৩২ মিটার প্রস্থের এ সেতুর কাজ দীর্ঘ সূত্রীতার কারণে সেতু নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে জনদুর্ভোগও। সেতুটির মাঝ বরাবর ১০৭ মিটার স্টিল স্ট্রাকচার নির্মাণের জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা নৌপথটি তিন মাসের জন্য বন্ধ করে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
পটুয়াখালী এলজিইডি সূত্র জানায়, এলজিইডি ২০১২ সালে পটুয়াখালী-বাউফল সড়কের লোহালিয়া নদীর ওপর একটি গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তখন সেতুর হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স ছিল ৩৫ মিটার এবং ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ৭.৩ মিটার এবং নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়ল ৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেতুর ৫৪ শতাংশ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ সেতু নির্মাণ কাজে আপত্তি জানায়। এতে ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
তবে কয়েক বছর কাজ বন্ধ থাকার পর আবার সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০১৯ সালের আগস্টে সেতুর হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স বাড়িয়ে ৭০ মিটার এবং ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ১৩ দশমিক ৫০ মিটার করে এবং ব্রিজটির মাঝ বরাবর ১০৭ মিটার কংক্রিকেটর পরিবর্তে স্টিল স্ট্রাকচার নির্মাণের জন্য একটি নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে অসমাপ্ত কাজ শুরু করা হয়। যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন কারণে কয়েক দফা সেতুটির নির্মাণকাজের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি খরচও বাড়ানো হয় ৭ কোটি ৯ হাজার টাকা। সর্বশেষ সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার তারিখ ছিল চলতি বছরের ৩০ জুন। কিন্তু এ সময়ে সেতুর ১০৭ মিটার স্ট্রিল স্ট্রাকচার ছাড়া বাকি অংশের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। স্ট্রিল স্ট্রাকচারের কাজ শেষ করে আগামী বছর জুন মাস নাগাদ এটি চালু করতে চায় এলজিইডি।
সেতুর দু’পাশে কংক্রিটের কাঠামো থাকলেও নদীর মাঝখানে স্ট্রিল স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজ পায় ‘চায়না হারজন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন লিমিটিড নামের একটি বিদেশি কোম্পানি। ব্যয় ধরা হয় ২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে স্টিলের স্ট্রাকচার স্থাপনের জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা নৌপথটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ২৭ জুন অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তানুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এ তিন মাস নৌপথটি বন্ধ রেখে স্টিল স্ট্রাকচার স্থাপনের কাজটি করা হবে।
সেতুটি চালু হলে জেলার গলাচিপা, বাউফল, দশমিনা উপজেলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং এ সেতু পার হয়ে বাউফলের কালাইয়া বাজার থেকে ভোলার লালমোহন উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ সুগম হবে। সেতুটির অভাবে ওইসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষকে এখন লোহালিয়া নদীতে খেয়া পারাপার হয়ে পটুয়াখালী জেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়। বাউফলের উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব হাওলাদার বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট তিনমাসের নৌপথ বন্ধ রাখার সময়ের মধ্য দিয়ে লোহালিয়া নির্মাণ কাজ শেষ করে জনভোগান্তী দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করবেন বলে আমরা আশা রাখি।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ লতিফ হোসেন বলেন, লোহালিয়া সেতুর কংক্রিটের অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। তবে নদীর মাঝ বরাবর স্টিল স্ট্রাকচার স্থাপানের কাজ বাকি আছে। এ অংশটুকু নির্মাণের জন্য আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্তানুযায়ী তিন মাস নৌ চলাচল বন্ধ থাকবে। এখন স্থানীয় প্রশাসনের সাথে বিষয়টি সমন্বয় করে কাজটি দ্রুত শুরু করা হবে এবং আগামী জুন নাগাদ সেতুটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন