শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

গাড়ি উঠলেই কেঁপে ওঠে

ফেনী কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর নড়বড়ে বেইলিব্রিজ

মো. ওমর ফারুক, ফেনী থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ফেনীর কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর নির্মিত স্টিলের বেইলিব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ব্রিজের ওপর গাড়ি উঠলেই কেঁপে উঠে। চালক ও যাত্রীদের সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের পাশে নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড। ৩৪ বছর আগের এই পুরাতন স্টিল ব্রিজটি সংস্কারের অভাবে দিন দিন পাটাতনে জং ধরে খসে পড়ছে এবং জোড়ার মুখ ফাঁকা হয়ে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিদিন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গাড়ি চালক, যাত্রী সাধারণ, পথচারী, স্কুলের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিমে সদর উপজেলার ৯নং লেমুয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের লেমুয়া বাজার সংলগ্ন কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর বেইলি ব্রিজ অবস্থিত। ১৯৮৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্তাবধানে ৯০ মিটার বেইলি ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। তখনকার সময়ে ওই এলাকার বাসিন্দা তৎকালীন সচিব সৈয়দ হাসান আহম্মদ-এর সাহসী প্রচেষ্টায় এ ব্রিজটি নির্মিত হয়। তৎকালীন এরশাদ সরকারের আমলের যোগাযোগমন্ত্রী কর্ণেল অলি আহম্মদ এই ব্রিজটির উদ্বোধন করেছিলেন। তখন ব্রিজ নির্মাণের ফলে নদীর দু’পাশের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখা দেয়।
বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতিদিন বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে নদীর দুই পাড়ের প্রায় ৪ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। এ অঞ্চলে ১৫ থেকে ২০টি স্কুল ও মাদরাসা রয়েছে। প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে প্রায় ১০ হাজারের ওপরে ছাত্র-ছাত্রী আসা যাওয়া করে। এছাড়াও সিএনজি, ব্যাটারি চালিত রিকসা, বালু, রড, সিমেন্ট ও ইট বোঝাই বড় পিকআপ, ট্রাক প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। সপ্তাহে রবি ও বৃহস্পতিবার দুইদিন বাজারের তারিখে বাইরের কয়েকটি উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। তারা বলেন সরকার জরুরি ভিত্তিতে নদীর ওপরের ঝুঁকিপূর্ণ স্টিল ব্রিজটি ভেঙে বিকল্প নতুন আরেকটি ব্রিজ নির্মাণ করলে এ অঞ্চলের মানুষ কৃতজ্ঞ থাকবে।
সিএনজি চালক রিয়াদ, শরিফ বলেন, এই রোডে আমাদের প্রায় ৩শ’ গাড়ি প্রতিদিন চলাচল করে। মমতাজ মিয়ারহাট, ভোরবাজার, বালুয়া চৌমুহনী, বখতারমুন্সী, চাঁনপুর, নতুনবাজার, গোবিন্দপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গাড়িতে থাকা যাত্রীরা ভয়ে আতঙ্কে থাকেন। ব্রিজের মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় গাড়ির চাকা ডুকে টায়ার কেটে যায়, স্কেল ভেঙে যায়। এছাড়াও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মাসে অন্তত ৫ থেকে ৬ বার গাড়ি মেরামত করতে হয়।
২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, স্টিল ব্রিজটি অত্র ইউনিয়নের ব্যবসায়ী, জনসাধারণনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ব্রিজটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এই ব্রিজ দিয়ে ছোট-বড় অনেক গাড়ি চলাচল করে। প্রতিনিয়ত গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। মানুষ আহত হচ্ছে। এখানে বিকল্প ব্রিজ নির্মাণ করলে জনগণ তথা স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী ও স্কুল কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা উপকৃত হবে এবং নিরাপদে চলাচল করতে পারবে।
লেমুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ উদ্দিন নাছিম বলেন, সর্বসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পুরাতন বেইলিব্রিজের ঝুঁকিপূণ স্পটগুলো কয়েকবার মেরামত করে দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৮ লাখ টাকা। তিনি বলেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে এখানে একটি বিকল্প ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে ফেনী সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী দীপ্ত দাস গুপ্ত ইনকিলাবকে বলেন, লেমুয়ায় নদীর ওপর স্টিল বেইলিব্রিজের স্থলে বিকল্প আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের অনুমোধন হয়েছে। দ্রুত ডিজাইনের কাজ শেষ করে দরপত্র আহবান করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন