আফতাব চৌধুরী : মিয়ানমারে মুসলিম নিধন চলছে। শিশু-কিশোর, গর্ভবতী মহিলা, আবালবৃদ্ধবণিতা আজ হায়েনাদের আক্রমণে খুন হচ্ছে। সে দেশের বর্বর সেনারা সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিমদের পিতৃপুরুষের ভিটাবাড়ি থেকে শুধু বের করে দিচ্ছে না, বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। কী তাদের অপরাধ? তারা মুসলমান এটাই তো? নির্মম হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের এটাই মূল কারণ। বৌদ্ধদের ধর্মের মূলমন্ত্র অহিংসা পরম ধর্ম আজ এটাই যেন সে দেশের সরকার ও জনগণ ভুলেই গেছে। তা না হলে কোন নিরীহ জনগোষ্ঠীকে এভাবে খুন করে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা আমাদের মনে হয় মিয়ানমারেই প্রথম। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অতি সম্প্রতি জানিয়েছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। সর্বশেষ স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি বলেছে, ছবি বিশ্লেষণ করে তারা দেখতে পেয়েছে ওয়া পেইক গ্রামটি যখন জ্বলছিল তখন আশেপাশে সেনাবাহিনীর ট্রাক যাতায়াত করছিল। ছবিতে প্রমাণিত হয়েছে, আগুন দেয়ার সময় সেনাবাহিনী সেখানেই ছিল। সংস্থার এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, সেনা সদস্যদের চোখের সামনে ওয়া পেইকের ৩০০ বাড়ি এক মাস ধরে জঙ্গিদের আগুনে পুড়েছে, আর তারা তা বসে বসে দেখেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববাসী আজ নীরব কেন? এ নির্মম হত্যা ও উচ্ছেদ বন্ধে কেন জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে?
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ শুরু থেকেই মিয়ানমারে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিধনে সে দেশের সরকারের আচরণে ক্ষুব্ধ। সরকারের নীরব এবং পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকায় দেশের শান্তিপ্রিয় নিরপরাধ ১০ লাখের ওপর রোহিঙ্গা মুসলমানদের জীবন সম্পদ হুমকির মুখে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর প্রশ্ন : দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসরত একটি বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি সরকারের এ বিদ্বেষমূলক আচরণের কী কারণ থাকতে পারে?
এর আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরাকানের জাতিগত সংঘাতে লিপ্ত উভয় পক্ষের শতাধিক লোকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তারা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই সংঘাতে বহু লোক নিহত হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, মিয়ানমার সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর অনুমোদন ও মৌনতার সুযোগ নিয়ে এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে। জাতিগত নির্মূলকরণের এই প্রচারণায় মিয়ানমারের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তারা এখন খোলা আকাশের নিচে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে যে, দেশের ১৩টি এলাকার মধ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের ৪,৮৬২টি অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। বলা বাহুল্য, এখানকার সব অধিবাসীই মুসলমান। ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর ইয়াহ থেকেই গ্রামে সংঘটিত ওই সহিংসতা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ ও নারকীয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছে, কীভাবে নিরাপত্তা বাহিনী ক্রোধান্ধ জনগোষ্ঠীকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর লেলিয়ে দেয়। রোহিঙ্গাদের ছিল আদিমতম প্রতিরক্ষামূলক কিছু অস্ত্রশস্ত্র। সেই অস্ত্র তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা বিরোধীদের কীভাবে সাহায্য করেছে সে কথাও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। ওই আক্রমণে অন্তত ৭০ জন রোহিঙ্গার জীবনাবসান ঘটে, যার মধ্যে ২৮ জন ছিল শিশু। আর ২৮ জনের মধ্যে ১৩ জনের বয়স ছিল ৫ বছরেরও কম। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ওই আক্রমণের জন্য স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং দুই বছর বয়সী রাখাইন ন্যাশনালিস্ট ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে অভিযুক্ত করেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল বছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উগ্রপন্থি জাতীয়তাবাদী গ্রুপ প্রচারণা যেমন চালায়, তেমনই বিবৃতিও প্রচার করে। এই প্রচারণার লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ব্যাংকক অফিসের কর্মকর্তা ম্যাথু স্মিথ বলেছেন, জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালিত সহিংসতার সময় রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযান তুুঙ্গে ওঠে। আরাকান রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের সমূলে উৎখাত করার জন্য এ সময় জনগণকে সংগঠিত করা হয়। ভিক্ষু সমিতিসমূহ, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে রোহিঙ্গা নির্মূলে বিবৃতি দেওয়া হয়। ফলে অস্থিরতা ও সহিংসতা দুই-ই ব্যাপকভাবে বিস্তার ও বৃদ্ধি পায়। উল্লেখ্য, এটা ছিল রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত দ্বিতীয় দফার দুর্বার আক্রমণ। বিস্ময়কর ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি বরং উসকানি দিয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা কিংবা আরেক দফার সহিংসতা বন্ধে সরকার তার করণীয় সম্পর্কে ছিল নির্বিকার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ম্যাথু স্মিথ আরও উল্লেখ করেন যে, এই সংকটকালে সরকারের ভূমিকা যেমন ছিল একপেশে, তেমনি হাজার হাজার রোহিঙ্গা এ সময় প্রয়োজনীয় মানবিক সহযোগিতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বৈষম্যমূলক বার্মার নাগরিকত্ব আইনের কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে। এদিকে পালাতে ব্যর্থ রোহিঙ্গারা নিরুপায় হয়ে মিয়ানমার সরকারের মর্জিমাফিক দিন কাটাতে যেমন বাধ্য হচ্ছে, তেমনি এই বলে সরকারের দয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে যে, একদিন তাদের দাবি হয়তো পূরণ হবে। তাদের কারো কারো মনে এই প্রত্যয় যে, সরকার তাদের জন্য বাড়ি বানিয়ে দেবে। কেননা, সরকারি তরফ থেকে এমন প্রতিশ্রুতি একাধিকবার দেওয়াও হয়েছিল।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আলান স্টার্টহার্ন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার কিছু অংশে বৌদ্ধ বিশ্বাস শিক্ষাদানের পাশাপাশি সহিংস আচরণের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি হতবুদ্ধি করে দেবার মতো। কেননা, উল্লিখিত দুই দেশের কারো কাছেই রোহিঙ্গাদের মতো একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ইসলামী জঙ্গি হিসেবে বিপজ্জনক বিবেচিত হতে পারে না। মিয়ানমারে ৯৬৯ নামের গ্রুপের নেতা হলেন আশিন উইরাথু নামের এক ভিক্ষু। ধর্মে ধর্মে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে ২০০৩ সালে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। ২০১২ সালে তিনি ছাড়া পান। জানা গেছে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর মিশনে তিনি এখনও নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে, বৌদ্ধ ধর্মের অহিংস নীতির সাথে ঘৃণা ছড়ানো বিষয়টি কি মেলানো যায়?
মিয়ানমারে ২০০৭ সালে যে স্যাকর্ন রেভলিউশন হয় তার নেতৃত্ব দেন ভিক্ষুরা। তারা তাদের নৈতিক শক্তি নিয়ে সামরিক জান্তাকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন পরিচালনা করেন। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানো ছিল তাদের প্রধান অস্ত্র। বেশ কিছু ভিক্ষু ওই সময় প্রাণও হারান। কিন্তু বর্তমানে কতিপয় ভিক্ষুর লক্ষ্যপথ পরিবর্তিত হয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা মুসলমান-বিদ্বেষী বার্তা ছড়াচ্ছেন। জানা গেছে, মুসলমান রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা বিধান, দেশের গণতন্ত্রে উত্তরণে সংস্কার সাধন অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে আরও এক বছরের জন্য অবরোধ আরোপ করেছে। ওবামা প্রশাসন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের ওয়াশিংটন সফর উপলক্ষে ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে ঔদার্য দেখিয়েছিল। উল্লেখ্য, প্রাক্তন সামরিক শাসনামলে ভিসার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কড়াকড়ি আরোপ করেছিল। আরও উল্লেখ্য, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিয়েন সেইনের সফর ছিল ১৯৬৬ সালের পর কোনো মিয়ানমার সরকার প্রধানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের সাথে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে অব্যাহত সহিংসতার বিষয়টি ওবামা ও মিয়ানমার প্রেসেডিন্টের বৈঠককালে আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
সম্প্রতি জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের ঘটনা গত ৩৬ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ঘটেছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে মিয়ানমারে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যেই জাপানি প্রধানমন্ত্রীর এই সফর। এক্ষেত্রে জাপান এ সুযোগটি কাজে লাগাতে পারে তা হলো, মিয়ানমারের নেতাদের সে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য পরামর্শ প্রদান। জাপান, মিয়ানমারকে এও বুঝাতে পারে যে, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর দেশে মানবাধিকারের উন্নয়ন কতটা অপরিহার্য। মিয়ানমারকে এ মুহূর্তে অবশ্যই গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্রকে সংহত করা ও গণতন্ত্রের মূল নীতিসমূহ বাস্তবায়নে এ উদ্যোগ অবশ্যই সহায়ক হবে। আর মিয়ানমার তো এ লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়েছেও। তবে মুসলমান রোহিঙ্গাদের জন্মহার হ্রাস করতে আইন করার চেষ্টা সংকট নিরসনে কোনো কাজে আসবে না। অং সান সুচিসহ রাজনৈতিক বন্দিদের বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিয়ে একটা রমরমা অবস্থার মধ্যে রয়েছে মিয়ানমার সরকার। শ্রমিক সংঘ ও মিডিয়ার ওপর আরোপিত কঠোর আইনও মিয়ানমার তুলে নিয়েছে। কিন্তু এসব সাফল্যই ধূসর হয়ে যাবে যদি ভবিষ্যতে সত্যিকার অর্থে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না যায়। এদিকে মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হয়ে আসছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা। সেখানে বসবাসরত ১৩৫টি স্বীকৃত জাতিগত গোষ্ঠীকে মিয়ানমার সরকার নাগরিক অধিকার দিলেও রোহিঙ্গারা তা থেকে বঞ্চিত।
বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভাষ্য হলো, আরাকানি বৌদ্ধদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। তারা মাঠে চাষ করতে পারে, চা স্টলে আড্ডা জমাতে পারে, ধর্মশালায় যেতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু এর ঠিক বিপরীত আচরণ পেয়ে থাকে রোহিঙ্গা মুসলমানরা। রোহিঙ্গা মুসলমানদের যা নিত্যসঙ্গী তা হলো, নিরাপত্তা বাহিনীর অবহেলা ও আক্রমণ নীরবে সহ্য করা, সরকার নির্ধারিত বিচ্ছিন্ন করে রাখার নীতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা এবং সরকারি ক্যাম্পে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা। বিভিন্ন টিভি মিডিয়ায় এ সমস্ত রিপোর্টে অর্গানাইজেশন অব দ্য ইসলামিক কনফারেন্স বা ওআইসি সচিবালয় উদ্বিগ্ন। ওআইসি এ ব্যাপারে একটি বিশেষ সেশন আহ্বানের কথা ভাবছে। উদ্বেগাকুল ওআইসি বিষয়টির একটি সুষ্ঠু সমাধানে এখন তৎপর।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মিয়ানমার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালুর লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা অবশ্য বহাল রয়েছে। এদিকে ইইউ-র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক একজন পদস্থ কর্মকর্তা ক্যাথেরিন এ্যাশটন বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, নিরাপত্তা বাহিনী গোত্রগত সহিংসতা নিরসনের মতো দুরূহ কাজটি সূচারুরূপে সম্পন্ন করবে।
ব্যাংককে সুশীল সমাজ মিয়ানমারের ঘনাপঞ্জি মনিটর করে চলেছে। ইইউ-র সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে তারা দ্বিধান্বিত। তাদের ভাষ্য, মিয়ানমারের বাস্তবতা ভিন্নতর। সুশীল সমাজের ভাষ্য হলো, হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে মানবিক সাহায্য প্রদান করা হচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের গতিবিধিও নিয়ন্ত্রিত। এমনকি, রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িতে পর্যন্ত ফিরতে পারছে না। সুশীল সমাজের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ জীবন এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ কথা অনস্বীকার্য, সকলেই মনে করেন যে, নাগরিকত্ব নিয়ে সংকটই সমস্যার মূল কারণ। অসম আইনের শিকার হয়ে এই রোহিঙ্গারা ১৯৮২ সাল থেকে নাগরিকত্ব পাচ্ছে না। যদিও রোহিঙ্গারা যুগ যুগ ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে।
এদিকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান রাখাইন রাজ্যে বিভিন্ন ক্যাম্পে ও রাস্তা থেকে আকাশের নিচে অবস্থান করছে। মিয়ানমার সরকার তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে বলে তারা আশাবাদী। কিন্তু সুড়ঙ্গের অপর প্রান্তে কোনো আলোই দেখা যাচ্ছে না। এই দুর্ভাগ্যজনক প্রেক্ষাপটে বহু বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বা পড়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নে নৌকাযোগে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া অথবা অন্য দেশে চলে যাচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। অনেকে আবার ছেলেমেয়ে নিয়ে পানিতে ডুবে মারাও যাচ্ছে। কিন্তু জনভারে জর্জরিত এসব দেশ কি তাদের দেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে পারবে? জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল সে দেশের সরকারকে রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে মেনে নিয়ে তাদের পুনর্বাসনের আহ্বান জানিয়েছেন। মানবিক কারণে বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনার জন্য সকল শান্তিপ্রিয় নাগরিক ও দেশের উচিত মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা আর তা না হলে বিশ্বের দেশে দেশে এভাবে সংখ্যালঘুরা মার খেতেই থাকবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন