শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার হাজার হাজার একর জমি ইরি-বোরো মৌসুমে সেচ সংকটে কৃষকের হাহাকার পড়ে যায়। প্রতি বছর সেমেশ^রী নদীর উজানে বাঁধ দেয়ায় ভাটি অঞ্চলের হাজার হাজার একর ফসলি জমি পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে যায়। পাশের শ্রীবরদী উপজেলার ৫-৬শ’ একর জমিতে সেচের ওজুহাতে ফি-বছর দেয়া হচ্ছে বাঁধ। অথচ ভাটি অঞ্চলের ঝিনাইগাতীর হাজার হাজার একর জমি ওই পানির ওপরই নির্ভরশীল। সেমেশ্বরী নদীতে রাবারড্যাম নিার্মাণ হলে ওই হাজার হাজার একর ফসলি জমি বোর চাষের আওতায় আসবে। সোমেশ্বরীতে রাবারড্যাম নির্মাণের দাবি কৃষকদের দীর্ঘ দিনের। পাহাড়ি প্রান্তিক চাষিরা বোরো আবাদে রাবারড্যামের দাবি করে আসছেন। বাস্তবায়িত না হওয়ায় পানি সংকটে হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি থাকে। অথচ রাবারড্যাম নির্মাণে উভয় উপজেলারই কৃষকরা সেচ সুবিধা পাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সোমেশ্বরীতে রাবারড্যাম নির্মাণের দাবি ২ উপজেলার কৃষকদের প্রাণের দাবি। বহু আশ্বাস মেলেছে। বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে বোরো মৌসুমে সেচ সংকটে ঝিনাইগাতীর কালিনগর, সারি কালিনগর, তাওয়াকুচা, গুরুচরনদুধনই, পানবর, জুকাকুড়া, আয়নাপুর, দুপুরিয়া, কারাগাঁও, বাগেরভিটা, দাড়িয়ারপাড়, ধলী, গজারমারী, কান্দুলী, জড়াকুড়া, ইত্যাদি ১৫-২০ গ্রামের কৃষক পানি সংকটে হাহুতাশ করেন। সোমেশ্বরী নদী শ্রীবরদী উপজেলার খাড়ামুড়া ও বালিজুড়ী হয়ে ঝিনাইগাতীতে প্রবেশ করেছে। প্রবেশপথ শ্রীবরদীতে হলেও পুরো নদীটি বিস্তৃত ঝিনাইগাতী উপজেলায়। কৃষকরা জানান, নদীর পানি সেচে ইরি-বোরো আবাদে ঝিনাইগাতীর ৫-৬ হাজার কৃষক। দুই-আড়াই হাজার হেক্টর জমি আবাদ করে। ওই নদীর পানিতে শ্রীবরদীর ৫-৬শ’ একর জমি আবাদ হয়। ৫-৬শ’ একর জমির আবাদ করতেই শুস্ক মৌসুমে সোমেশ্বরীর উজানে বালিজুরিতে বাঁধ দেয়। ফলে সেচ সংকটে ভাটি ঝিনাইগাতীর ১৫-২০ গ্রামের কৃষকের প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমি পানির অভাবে চাষির হাহাকার সৃষ্টি হয়। এলাকার প্রবীন কৃষক ডা. আব্দুল বারী, আলহাজ রেজায়ুর রহমান, আলহাজ শরীফ উদ্দিন সরকার ও সরোয়ার্দী দুদু মন্ডল জানান, সোমেশ্বরীতে রাবারড্যাম নির্মাণ হলে দুই উপজেলার সেচ সংকট সমাধান হবে। স্বল্পখরচে রাবার ড্যামের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে দুই উপজেলায়ই বোরো আবাদ করতে পারবে।
ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, সোমেশ্বরী নদীতে রাবারড্যাম নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। আশ্বাসও মেলে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। রাবারড্যাম হলে দুই উপজেলারই সেচ সংকট দূর এবং ৩ হাজার হেক্টর জমি বোরো চাষের আওতায় আসবে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, ২ উপজেলার সেচ সংকট মোকাবেলায় রাবারড্যাম নির্মিত হলে কৃষকরা খুবই উপকৃত হবে।
এ প্রসঙ্গে শেরপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষকদের দাবিতে ২০১৫ সালে সোমেশ্বরীতে রাবারড্যাম নির্মাণে প্রকল্প প্রণয়নে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলেই রাবারড্যাম নির্মাণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন