শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

২০০২ : রোনাল্ডোর সামনে ভেঙে গেল কানের প্রাচীর

নাভিদ হাসান : | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

 ফ্রান্সের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে বাজে পারফরম্যান্সের পর, ২০০২ সালের কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ক্লাব পর্যায়ে মাত্র ৫২টা ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন রোনাল্ডো নাজারিও। এই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ক্লাব ইন্টার মিলানের হয়ে এই ৪ বছরে গোল করেন মাত্র ২৫টি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের গোটা পথেই ছিলেন অনুপস্থিত। তাছাড়া ফ্রান্সের বিপক্ষে আগের বিশ্ব আসরের ফাইনালে নিজের ছায়া হয়ে থাকার চাপতো ছিলোই। সবকিছুর মাঝে ইয়কোহামাতে জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালের আগে এই স্ট্রাইকার করে ফেলেছিলেন ৬ গোল। আর গোলশূন্য ফাইনাল যখন অতিরিক্ত সময়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগাচ্ছিল, তখন আসরের চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়ানো অলিভার কানের দেয়াল দুইবার ভেঙ্গে ব্রাজিলকে করলেন পঞ্চমবারের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
ইন্টার মিলানে বছরের পর বছর ধরে লিগামেন্টের চোটের কারণে রোনাল্ডোর জীবন নরকে পরিণত হয়েছিল। রোনাল্ডো ২০০২ সালে ইন্টারের হয়ে মাত্র ৪০০ মিনিট মাঠে থাকতে পেরেছিলেন বিশ্বকাপের স্বপ্নীল মঞ্চে যাওয়ার আগে। ব্রাজিল গ্রæপ পর্বে তুরস্ক, চীন ও কোস্টারিকাকে হারায়। আর এই ৩ ম্যাচে রোনাল্ডো পান ৪ গোল ও ১ এসিস্ট। সেকেন্ড রাউন্ড ও সেমিতে বেলজিয়াম ও তুরস্কের বিপক্ষে পান ১টি করে গোল। তার এই বিধ্বংসী ফর্মের কারণে সেলেসাওরা টানা তৃতীয় বিশ্বকাপ ফাইনালে জায়গা করে নেয়। যেখানে ইয়োকোহামার আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে জার্মানি অপেক্ষায় ছিল আগে থেকেই। ফাইনালে ব্রাজিলের খেলা সব সময়ই উত্তেজনায় প‚র্ণ থাকে। জাপানের সেই ফাইনালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
সেই ফাইনাল দেখে মনে হয়েছিল রোনাল্ডোর নিজেরই এক ব্যক্তিগত মিশন আছে। ম্যাচের ৬৭তম মিনিটে জার্মান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ডিয়েটমার হ্যামানের ভুলটি রিভালদো ও রোনাল্ডো জুটি বেছে নেন। এই সময় ডি-বক্সের বেশ বাহির থেকে রিভালদো শট নেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আসরের সেরা খেলোয়াড় কান সেই শটটি গ্রিপে নিতে ব্যর্থ হন। বলে এমন কোন জোর ছিল না যে জার্মান গোলরক্ষক তা আয়ত্বে নিতে ব্যর্থ হবেন বা রিফেক্ট করতে হবে। তবে জাত স্ট্রাইকারদের ধর্ম হলো তারা অফ দ্য বলেও দারুন খেলেন। সতীর্থ শট নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোনাল্ডো সামনে দৌঁড় দেন, আর জার্মান কিপারের হাত ফসকালেই, রোনাল্ডোর নিশানা জালে জড়ায়।
সেই গোলের পর জার্মানদের লড়াইয়ের সব শক্তিই যেন থেমে যায়। ঠিক দশ মিনিটের মধ্যে, ক্লেবারসন ডানদিকে একটি লো ক্রস করেন। রিভালদোকে উদ্দেশ্য করেই সেই শট ছিল। তবে রিভালদো বলটি রোনাল্ডোর কাছে যাওয়ার জন্য ডামি করেছিলেন। এবার ডিবক্সের ঠিক সামনে থেকে রোনাল্ডো নিলেন মাটি কামড়ানো বাঁকানো শট। কান যে পাশ দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই পার্শে¦র বার দিয়েই বল ঢুকে যায় জালে। রোনাল্ডো পরবর্তীতে বলেন, ‘এই শিরোপাটা অভিভুত করেছিল আমাকে। আমি প্রতিটি গোলের কথা যখন স্মরণ করি, তখন মনে হয় এটা গতকাল ছিল।’
সেই বিশ্বকাপে তিনি ৮ গোল করেন। যা জার্ড মুলারের ১৯৭০ সালে মেক্সিকোতে করা দশের গোলের পর সবচেয়ে বেশি। তারপর এই পর্যন্ত কেউ আর সেটি অতিক্রম করতে পারেনি। সেই বিশ্বকাপের গোল্ডেন শু পুরস্কার জেতেন রোনাল্ডো। বিশ্বকাপ আবারও এশিয়ায় ফিরেছে। এবার কি কেউ পারবেন, এই শতাব্দীতে রোনাল্ডোর গড়া সেই ৮ গোলের মেইলফলক ছুঁতে?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন