শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

অন্তহীন ভোগান্তিতে রোগীরা

ভবন ও চিকিৎসক সঙ্কটে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ৫ বছর পূর্বে নির্মিত আড়াইশ’ শয্যার নতুন ভবনটি চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ

জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা, বরগুনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রায় ১২ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল। অথচ সেই হাসপাতাল ধুঁকছে চিকিৎসক সঙ্কটে। ৫ বছর পূর্বে নির্মিত আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালটি চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে পুরোনো ভবনে শয্যা সঙ্কটের কারণে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ৪৩ জন চিকিৎসকের মাত্র ৬ জন কর্মস্থলে থাকায় চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলার প্রধান এই হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৪৩টি। এর অনুকূলে আছেন মাত্র ৬ জন। বাকি ৩৭টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এর মধ্যে ২১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদের ১৮টিই শূন্য। আর চিকিৎসা কর্মকর্তার ১৯টি পদের মধ্যে ১৬টি পদ শূন্য। জ্যৈষ্ঠ ও কনিষ্ঠ ২১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে নাক, কান, গলা, শিশু, গাইনি, প্যাথলজিস্ট, মেডিসিন, চক্ষু, কার্ডিওলোজিস্ট, অ্যানেসথেটিস্ট, অর্থোপেডিকস, রেডিওলজিস্ট ও সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকের পদ শূন্য। বর্তমানে যে ৬ জন চিকিৎসক রয়েছেন তারা হলেন- হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), একজন হোমিও চিকিৎসক, একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞ।
সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও শয্যা আর খাবার ছাড়া কিছু বাড়েনি। এর মধ্যেই ২০১০ সালের মে মাসে হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালে নতুন ভবনটি উদ্বোধন হওয়ার পর বর্তমানে সেখানে করোনা ইউনিট করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই হাসপাতালে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ রোগী ভর্তি থাকেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়। এরপর প্রশাসনিক কাজ, ময়নাতদন্ত, ধর্ষণের পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কাজকর্ম এই ছয়জনকেই সামলাতে হয়। ফলে এতো রোগীর চিকিৎসাসেবা দেয়া অসাধ্য হয়ে পড়েছে।
পুরোনো ভবনে বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ সারি দৈনন্দিন চিত্র। সকাল ৯টায় লাইনে দাঁড়িয়ে বেলা তিনটায়ও ডাক্তারের নাগাল পাননা অধিকাংশ রোগীরা।
সপ্তাহের সিংহভাগ সময়ই ডাক্তার রাউন্ড ভিজিট করতে পারছেন না। হাসপাতালের বাথরুম ও গোসলখানা বছরের পর বছর নোংরা ময়লাযুক্ত থাকে। এ রকম অনেক অনেক অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীদের।
২০১৮ সালে বরগুনা সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যার নতুন ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনটি চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, জনবল সঙ্কট ও অবকাঠামোর অভাবে চালু করা যাচ্ছে না নতুন ভবন। ফলে পুরোনো ভবনে শয্যা সঙ্কটের কারণে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপকূলের মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল দশা দেখে ২০১০ সালে হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৩ সালে গণপূর্ত বিভাগ ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৭ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আ. খালেক এন্টারপ্রাইজকে নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেয়। এরপর এখানে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বরগুনার ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। পা ফেলার মতো জায়গা নেই। পুরুষ-মহিলা ওয়ার্ডেও রয়েছে শয্যা সঙ্কট। শয্যা না থাকায় হাসপাতালের মেঝেতে জায়গা করে নিয়েছেন রোগীরা। এমনকি ভেতরে জায়গা না থাকায় চলার পথে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
বরগুনা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহারফ হোসেন বলেন, ‘ছয়জন চিকিৎসকের পক্ষে ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের সামাল দেয়া দুরূহ। আমরা কীভাবে দিচ্ছি, সেটা বলে বোঝাতে পারব না। তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালে নতুন ভবন উদ্বোধন হওয়ার পর গত বছর জুনে গৃহায়ণ ও গণপূত অধিদপ্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ভবন হস্তান্তর করেন। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা চালুর জন্য দরকার ৫৫ জন চিকিৎসক, ১০১ জন নার্সসহ মোট ২৩৩ জনের জনবল। এরমধ্যে ১০৩ জনের পদ শূন্য। এ ব্যাপারে বার বার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি, তবুও কোনো কাজই হচ্ছে না।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাাতালের ভবনটি প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো এবং চিকিৎসা যন্ত্র, বেড, অবকাঠামো না থাকার কারণে চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। আমরা প্রতি মাসে রেজুলেশন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দিচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন