স্ত্রীর হাতে মেহেদীর আল্পনা। নতুন বিয়ের স্পষ্ট চিহ্ন এখনো বহমান। লাভ চিহ্ন দিয়ে তার মধ্যে লেখা ‘এম+আর’। এরপর লিখেছে ‘আমি মুক্তা+রুজিব, আমরা চলে যাচ্ছি, বাড়ির দোষে’। স্ত্রী ও স্বামীর শরীরে এভাবে ক্ষোভ ও অভিমানের কথা লিখে এক ওড়নায় আত্মহত্যা করেছে দুই তরুণ তরুণী দম্পত্তি। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের হাটবাকুয়া গ্রামের মাঠে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে হাটবাকুয়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি সাইফুল ইসলাম ধানের জমিতে পানি দিতে গিয়ে দেখেন ‘খ্যাড়ের দাইড়’ নামক স্থানে দুইটি লাশ। স্বামী রুজিব শেখের লাশ গাছে ঝুলছে ও স্ক্রী মুক্তা খাতুনের লাশ ওড়না ছিড়ে মাটিতে পড়ে আছে। পেশায় গ্যারেজ মিস্ত্রি রুজিব শেখ (১৯) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তালতলা হরিপুর গ্রামের তনু শেখের ছেলে। স্ত্রী মুক্তা খাতুন (১৭) হরিণাকুন্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের লক্ষিপুর গ্রামের গোলাম হোসেনের মেয়ে।
প্রতিবেশি স্থানীয় ইউপি সদস্য রিনা খাতুন জানান, দুই মাস আগে প্রেম করে বিয়ে করেন মুক্তা ও রুজিব শেখ। এই বিয়ে উভয় পরিবার মেনে নিলেও মুক্তা খাতুন বাপের বাড়ি গেলে আর স্বামীর বাড়িতে পাঠাতে চান না তার মা। ছেলেরা দরিদ্র ও ঘরবাড়ি জীর্নদশা বলে মেয়ের মা এমন কান্ড করেন বলে শুনেছি।
প্রতিবেশি রিমন হোসেন জানান, ভালোবেসে বিয়ে করে মুক্তা ও রুজিব শেখ আজীবন এক সঙ্গে থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু তার আর হলো না। তাদের ইস্পাত কঠিন ভালোবাসার মাঝে বাধা হয়ে দাড়ায় মেয়ের পরিবার। তাদেরকে আলাদা করতে চেয়েছিল বলেই আজ এই পরিণতি। রুজিব শেখের বড় ভাই রবিউল ইসলাম রুবেল জানান, বুধবার রাতে আমরা এক সঙ্গে খাবার খেয়ে অনেকক্ষন গল্প করেছি। তখন তারা যে এক সঙ্গে আত্মহত্যা করবে তা কিন্তু মনে হয়নি।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার মুক্তা খাতুন বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে হয়তো তারা এক সঙ্গে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সকালে শুনি একটি মেহগনি বাগানে তাদের লাশ ঝুলছে। স্বামী স্ত্রীর সহমরণের বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের নারিকেলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বিল্লাল হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তারা আত্মহত্যা করেছে। মেয়ে ও ছেলের শরীরে লেখা কথাগুলো ক্ষোভ ও অভিমানে লিখেছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন