প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চট্টগ্রাম হবে টুইন সিটি। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুুুজিবুর রহমান টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম কক্সবাজারসহ ওই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। চট্টগ্রাম শহরের মতো আনোয়ারাতেও নতুন শহর গড়ে উঠবে। এতে দেশের অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে। শনিবার টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। তবে একটি টিউবে কিছু কারিগরি কাজ বাকি রয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে স্বপ্নের এই টানেল চালু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে অনুষ্ঠানস্থল পতেঙ্গায় সংযুক্ত হয়ে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। চট্টগ্রামের প্রতি আমার গভীর আন্তরিকতা রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই আমরা চট্টগ্রাম কক্সবাজার বেড়াতে যেতাম।
চট্টগ্রাম অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন থেকে ছয় লেনে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেন করা হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কাজ চলছে। আমাদের সরকারের সময়েই চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করা হয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকেও বিশ্বমানে উন্নিত করা হচ্ছে। মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ঢাকার পর চট্টগ্রামেও মেট্রো রেলের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কর্ণফুলী নদীতে টানেলে চালু হলে চট্টগ্রামের মতো আনোয়ারাতেও আধুনিক শহর গড়ে উঠবে। এটা হবে টুইন সিটি। সেখানে নতুন নতুন বিনিয়োগ হবে। আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর বিশ্বের বিনিয়োগকারীদে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি সেখানে ৫০টি শিল্প কারখানা চালু হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসছে।
বিগত ১৪ বছরে তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আমরা উন্নয়ন করতে পারছি। কিন্তু অনেকে এই উন্নয়ন চোখে দেখে না। তাদের চোখের সমস্যা থাকলে ডাক্তার দেখাতে পারেন। আমরা চক্ষ ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। আর চোখ থাকতেও অন্ধ তারা কোন কিছুই চোখে দেখেন না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। ভার্চুয়াল ট্যুরের মাধ্যমে টানেলের একটি টিউবের চিত্র দেখানো হয়।
উল্লেখ এই অঞ্চলের মানুষের সেই দাবির প্রেক্ষিতে লালদীঘি ময়দানে ২০০৮ সালে এক নির্বাচনী জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর বিগত ২০১০ সালে প্রস্তাবটি প্রকল্প আকারে উপস্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে মোট চারটি লেন রয়েছে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। আর আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ একটি ফ্লাইওভার। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩৬ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চীনের চায়না কমিউনিকেশনস, কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসিএল) লিমিটেড। মেয়াদের শেষ মুহূর্তে এসে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করা হচ্ছে। সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৬৩ কোটি টাকা। মূলত ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণে প্রকল্প সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। টানেল চালু হলে বছরে প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলবে। চালুর তিন বছর পর ওই সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৬ লাখে। চলাচল করা গাড়ির প্রায় ৫১ শতাংশ হবে কনটেইনারবাহী ট্রেইলর, বিভিন্ন ধরনের ট্রাক ও কার্ভাডভ্যান। বাকি ৪৯ শতাংশ গণপরিবহন ও ছোট যানবাহন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন