শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

চরম দুর্ভোগে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা

দেড়শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী ফেনীর লস্করহাট বাজারের বেহাল দশা

মো. ওমর ফারুক, ফেনী থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী লস্করহাট বাজারটির বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দেড়শ’ বছর আগের এই প্রাচীন বাজারটিতে এখনো কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সংস্কারের অভাবে দিনের পর দিন কেবল জর্জরিত হচ্ছে বাজার।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী লস্কারহাটটি বৃহৎ গ্রামীণ বাজার। সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার এই দু’দিন হাট বসে। সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ কেনাকাটা করতে এ বাজারে আসেন। গ্রামীণ বড় বাজার হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রয়ের উদ্দ্যেশে বাজারে নিয়ে আসেন। বাইরের জেলার বড় পাইকার-ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসা করতে আসেন। ক্রেতা সাধারণও স্বাচ্ছ্যন্দে কেনাকাটা করেন। সরকার প্রতিবছর এ বাজার থেকে মোটা অংকের রাজস্ব পায়। কিন্তু বাজারটি প্রতিবছর ইজারা দেয়া হলেও বাজারের কোন সংস্কার বা উন্নয়ন নেই। বর্ষা মৌসুমে দেখা দেয় পানিবদ্ধতা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই খারাপ, বাজারের আসার সংযোগ সড়কগুলো খুবই সংকীর্ণ ও খানাখন্দ এবং গর্তে বেহাল অবস্থা। বাজারের পাশে যত্রতত্র ময়লা ও বর্জ্য ফেলায় দুর্গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ। বাজারে বেশিরভাগ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খোলা মাঠে বসে ব্যবসা করেন। বসার নির্ধারিত স্থান না থাকায় যে যার ইচ্ছে মতো বসে ব্যবসা করছে। প্রতিনিয়ত বাজারে বসা নিয়ে চলছে ঝগড়া ও দ্বন্দ্ব। বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদের কোন ফিস শেড নেই, গরু জবাইয়ের নির্দিষ্ট কোন সøাটার বা কসাইখানা নেই। এসব নানান সমস্যার কারণে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। উপজেলার সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী লস্করহাট বাজার থেকে সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব পেলেও বাজারের কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়ায় ক্রেতা ব্যবসায়ী ও জনসাধারণের মনে ক্ষোভের যেন শেষ নেই।
এ বিষয়ে মোটবী ইউপি চেয়ারম্যান হারুন উর রশীদ বলেন, শত বছরের প্রাচীন ফেনী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রামীণ বাজার এটি। এ বাজার থেকে ১০ লাখ টাকার ওপরে রাজস্ব আদায় হয়। এখানে ৬টি ইউনিয়নের মোহনা। এখানে ৫টি ব্যাংক রয়েছে। এ বাজারে ৭/৮শ’ ব্যবসায়ী রয়েছে। এদের অনেকে এখানে স্থায়ীভাবে বাণিজ্য করছেন। সাপ্তাহিক দুই হাটবারে ২ থেকে ৩ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীকে এ ব্যাপারে অবগত করেছি। ইতোমধ্যে এমপির একটি ডিওলেটারসহ প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। আমি সরকার এবং উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাই “গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন” প্রকল্পের অধীনে এ বাজারটিতে একটি ৪ তলা বিশিষ্ট একটি মার্কেট নির্মাণ করা হলে এ জনপদের হাজার হাজার মানুষ ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে।
বাজারের ক্রেতা নুরুল করীম, জামাল ও রহিমা বলেন- লস্করহাট বাজারটি অনেক পুরাতন বাজার। আমরা ছোটবেলা থেকে কেনাকাটা করতে এখানে আসি। বাজারটি খোলা মাঠে হওয়ায় রোদে পুড়ে বৃষ্টির দিনে বাজার করতে সমস্যা হয়। তারা বলেন, অনেক ব্যবসায়ীকে খোলামাঠে বসে রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে ব্যবসা করতে হয়। তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। বাজারের চারপাশের পরিবেশ খুব খারাপ। এসব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসা উচিত।
বাজার ব্যবসায়ী আবুল কালাম, উত্তম, মহিউদ্দিন, মো. ইদ্রিছ, ছারওয়ার বলেন, ঐতিহ্যবাহী লস্করহাট বাজারটি ফেনীর পূর্বাঞ্চলের জন্য বিখ্যাত বাজার। এ বাজারে ফেনীর ৬টি উপজেলাসহ বাহিরের জেলার ব্যবসায়ীরা এখানে এসে ব্যবসা পরিচালনা করেন। আমরা অনেক বছর এ বাজারে ব্যবসা করছি, আমাদের বাপ-দাদারাও এখানে ব্যবসা করে গেছেন। কিন্তু বাজারের কোন উন্নতি হয়না। তারা বলেন, বাজারটি দীর্ঘদিন অবহেলিত। আমরা রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনেক কষ্ট করে ব্যবসা করছি। এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ফেনী সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী দীপ্ত দাশ গুপ্ত বলেন, গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ফেনীতেও মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সদর উপজেলার লস্করহাট বাজারটি আমরা পরিদর্শন করেছি। ফেনী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রোথ সেন্টার এটি। এখানে একটি আধুনিক মার্কেট নির্মাণ করা হলে ব্যবসার উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর ডিওলেটারসহ একটি প্রস্তাবনা হেড অফিসে পাঠিয়েছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন