ডান পায়ে এখনও প্লাস্টার। সেই ক্ষত দেখিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে নিজের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর সমাবেশে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দাবি করলেন, এ মাসের গোড়ায় তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি নিশ্চিত, এই হামলার পিছনে রয়েছে শাসক দল ও সেনা।
রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সদর দফতরগুলি রয়েছে। এই সেনা-শহরে গত কাল সমাবেশ করেছিল পিটিআই। ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। মঞ্চে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের সামনে গদিচ্যুত প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, ৩ নভেম্বর ওয়াজিরাবাদে একটি সমাবেশ চলাকালীন তিন বন্দুকবাজ তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল। ডান পায়ে এসে লাগে গুলি। তাদের দলীয় তদন্তে ইমরান জানতে পেরেছেন, দু’জন হামলাকারীর এক জন তাকে ও অন্য পিটিআই নেতাদের লক্ষ্য করে গুলি করেছিল। দ্বিতীয় জনের গুলি গিয়ে লেগেছিল সামনে রাখা কন্টেনারে। তৃতীয় বন্দুকবাজের কাজ ছিল প্রথম জনকে নিকেশ করা। প্রত্যেকেই ব্যর্থ হন। ইমরানের দাবি, তৃতীয় জন লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সমাবেশে উপস্থিত এক জনকে হত্যা করেছে।
তাকে যে গুলি করা হয়েছিল, হামলার পরের দিন লাহোরের শওকত খানুম হাসপাতাল থেকেই সে কথা জানিয়েছিলেন ইমরান। এ-ও জানান, তার ডান পায়ে চারটি গুলি করেছে দু’জন বন্দুকবাজ। সেই ঘটনার পরে কাল প্রথম দলীয় কর্মীদের নিয়ে সমাবেশ করলেন ইমরান। সে দিনের সেই জমায়েতের অন্যতম দাবি ছিল, অবিলম্বে অন্তর্বর্তী ভোট করাতে হবে। যদিও এই মুহূর্তে ভোট হওয়ার কথা নয় পাকিস্তানে। জাতীয় আইনসভার পূর্ণ মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের অগস্ট মাসে। হিসেব মতো তার পরে নির্বাচন হওয়া উচিত। কিন্তু ইমরান এখনই নির্বাচন চান। এপ্রিল মাসে আস্থা ভোটে হেরে গদিচ্যুত হয়েছিলেন তিনি। এর পিছনে আমেরিকার ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন সে সমে। তার দাবি ছিল, রাশিয়া, চীন ও আফগানিস্তান বিষয়ে তার স্বাধীন সিদ্ধান্তে আমেরিকা যারপরনাই অখুশি ছিল। সেই কারণেই তাকে নিশানা করা হয়েছিল। আমেরিকা অবশ্য ইমরানের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিল।
গত কাল মঞ্চ থেকে ৭০ বছর বয়সি প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘যে তিন অপরাধী সে দিন আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল, তারা আবার আমায় নিশানা করবে। অপেক্ষায় রয়েছে তারা।’ ইমরানের আরও দাবি, তার উপর হামলার ঘটনার আড়ালে রয়েছে বর্তমান সরকার। সরাসরি নাম উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রানা সানাউল্লা এবং ‘আইএসআই কাউন্টার ইনটেলিজেন্স উইং’-এর প্রধান মেজর জেনারেল ফয়জল নাসির এই হামলার মূল চক্রান্তকারী। ইমরান বলেন, ‘সমস্ত আইনসভা থেকে ইস্তফা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। এই দুর্নীতিগ্রস্ত পরিচালন ব্যবস্থায় আমরা থাকব না।’ ইমরানের দলের সরকার রয়েছে পঞ্জাব, খাইবার-পাখতুনখোয়া, আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বাল্টিস্তানে। সিন্ধ ও বালোচিস্তানের আইনসভাতেও পিটিআইয়ের প্রতিনিধি রয়েছে। ইতিমধ্যেই জাতীয় আইনসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন পিটিআই-এর বেশ কয়েক জন আইনপ্রণেতা। কিন্তু অনেকের পদত্যাগপত্রই গ্রহণ করা হয়নি। ইমরান অবশ্য জানিয়েছেন, তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন। তারা নির্বাচন চান। ইমরান বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভোট প্রয়োজন। আমরা নির্বাচন চাই। আর কোনও কিছু শোনা হবে না।’ সূত্র: ট্রিবিউন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন