‘মাছ, বাঁশ, সুপারি জকিগঞ্জের ব্যাটাগিরি।’ প্রবাদটি বহু পুরনো। সুপারির জন্য বিখ্যাত সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় এ রকম অনেক প্রবাদের আরেকটি হচ্ছে, ‘ইছামতির পুয়া (ছেলে) চাপঘাটের গুয়া (সুপারি)।’ মাছ এবং বাঁশের সাথে জকিগঞ্জের যে নিবিড় সম্পর্ক ছিল, বর্তমানে তা আর নেই। তবে সুপারি এখনো জকিগঞ্জের অর্থনীতির প্রধানতম অংশ। সিলেট শহর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে, যা বাংলাদেশের একেবারে পূর্বাঞ্চলে ভারত ঘেসা যার অবস্থান। প্রতি বছর জকিগঞ্জে প্রচুর পরিমানে সুপারির ফলন হয়। বেশি ফলন হওয়াতে উপজেলার কালিগঞ্জ বাজার, বাবুর বাজার, জকিগঞ্জ বাজারে বিরাট সুপারির হাট বসে। এ বাজারগুলোতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা আসে সুপারি কিনতে এবং জকিগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে (জকিগঞ্জের গোল্ড) সুপারি সরবরাহ করা হয়।
জকিগঞ্জের সুপারির খুবই কদর রয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বিশেষ করে প্রতি বছর রংপুর, দিনাজপুরে জকিগঞ্জ থেকে প্রচুর পরিমানে সুপারি যায়। এছাড়াও সিলেটের কাজির বাজারে রয়েছে সুপারির বিরাট আড়ৎ। এখানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা আসে সুপারি কিনতে। সিলেটের কাজির বাজারেও রয়েছে জকিগঞ্জের সুপারির বেশ চাহিদা। জকিগঞ্জের চাপঘাট এলাকায় সুপারির ফলন বেশি হয়। এছাড়াও জকিগঞ্জের প্রতিটি বাড়িতে কম বেশি কিছু না কিছু সুপারি গাছ দেখতে পাওয়া যায়, যা থেকে নিজের খাদ্যের চাহিদার পরও বিক্রি করা সম্ভব হয়। প্রতিটি বাড়ির পুকুর ধারে বা বাড়ির পাশে সাধা সিধে দাঁড় করা অবস্থায় গাছগুলো দেখতে খুবই সুন্দর লাগে এবং শোভা পায়। এমনকি জকিগঞ্জের প্রতিটি বাড়িতে মেহমানদারীর বেলায় ও আর কিছু থাক বা না থাক সুপারি থাকবে। কোন বাড়িতে মেহমান আসলে মেহমানদের আপ্যায়নের পর সুপারি না দিলে মনে হয় কোন একটা কিছু অপূর্ণ রয়ে গেল।
জকিগঞ্জের বৃহৎ বাজার কালিগঞ্জ বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী আবুল কালাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার সুপারির ফলন খুবই কম। ফলন কম হওয়াতে দামও চড়াও। বড় সাইজের সুপারির ভি ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা, মাঝারি সাইজের সুপারির ভি ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা, এবং ছোট সাইজের সুপারির ভি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা (১ভি=৪৪০টি)। চড়াও দামে কিনেও ব্যবসায়ীরা কম বেশি মুনাফা অর্জন করে থাকেন।
জকিগঞ্জের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হীরালাল বিশ্বাস জানান, সুপারি গাছ লাগানোতে ব্যয় কম, জায়গাও লাগে কম। গাছটির পরিচর্যাও তেমন একটা করতে হয় না। এ ছাড়া একেকটি গাছ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এজন্য জকিগঞ্জের মানুষ সুপারি উৎপাদনে অত্যধিক আগ্রহী।
তিনি আরো জানান, ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ সুপারি গাছে মুকুল ধরা শুরু করে এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ ফল পাকতে থাকে। গাছপ্রতি ৩-৪টি ছড়ি এবং ছড়িপ্রতি ৫০-৬টি সুপারি পাওয়া যায়।
উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন, সঠিক পরিচর্যা আর প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো গেলে জকিগঞ্জের সুপারির উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব। সরকারের সুদৃষ্টির মাধ্যমে এখানকার সুপারি বিদেশেও রফতানি করা যেতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন