ইউরোপ সমুদ্রপথে রেকর্ড পরিমাণে রাশিয়ান গ্যাস আমদানি করছে, যা প্রতিফলিত করে যে, এমনকি পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাসের প্রবাহ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও এই অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানির জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীলতা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। রাশিয়ান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি এই বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। ব্রাসেসের চেষ্টা সত্ত্বেও মস্কো থেকে গ্যাস আমদানি বন্ধে ইউরোপের অসুবিধাকে তুলে ধরেছে।
রিফিনিটিভ বলছে যে, রাশিয়া এই বছর ইউরোপের জ¦ালানীর দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং রেকর্ড আমদানি উৎস হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞার কারণে এর রপ্তানী ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে এবং ইউরোপ আরও মার্কিন এলএনজি কিনেছে। তবে, ব্রুগেলের জর্জ জ্যাচম্যান জাচম্যান বলেছেন, ‹ইউরোপীয় সংহতি ইতিমধ্যেই স্পেন এবং গ্রিসের মতো দেশগুলির মধ্যে গ্যাসের দামের সীমা নির্ধারণের পক্ষে একটি ফাটলের মধ্যে আটকে গেছে। অন্যদিকে জার্মানি, ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ডস এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে সন্দিহান রয়ে গেছে। এদিকে, হাঙ্গেরি আগস্টে গ্যাজপ্রমের সাথে একটি নতুন গ্যাস চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যদি সংহতিটি ভেঙ্গে যায়, তবে আমরা ঝুঁকিটিকে প্রলম্বিত করে বলতে পারি যে, হাঙ্গেরির চেয়ে আরও বেশি দেশ রাশিয়ান গ্যাস সহজে গ্রহণ করতে খুব ইচ্ছুক হবে এবং এতে একটি বড় সমস্যা হবে।›
রাশিয়ান এলএনজি এই সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় সমুদ্রবাহিত আমদানির ১৬ শতাংশ জায়গা করে নিয়েছে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল এনার্জি পলিসি সেন্টারের অ্যান-সোফি কোরবেউ বলেন, ‹একদিন পুতিন ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারেন এবং বলতে পারেন যে আমরা ইউরোপে এলএনজি পাঠানো বন্ধ করে দেব, যাতে এই অঞ্চল আরও বেশি ব্যয়বহুল বাজার থেকে কিনতে বাধ্য হয়। তিনি আরও বলেন, ‹রাশিয়া রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এবং ইউরোপীয়দের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো এলএনজি-অনুকূল দেশগুলিতে গ্যাসের কার্গোগুলি সুলভ মূল্যে পাঠিয়ে দিতে পারে। এটা মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে অনেক দেশই ভুগছে, কারণ তারা এলএনজি কিনতে সক্ষম নয়।’
থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ব্রুগেলের তথ্য অনুসারে রাশিয়া থেকে পাইপলাইনে গ্যাসের সরবাহ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮০ শতাংশ কম। ঘাটতি পূরণের জন্য ইউরোপ, যা গত বছর এলএনজি সহ ১শ’ ৫৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার (বিসিএম) রাশিয়ান প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করেছিল, আন্তর্জাতিক এলএনজি বাজারের দিকে ঝুঁকছে। এটি জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী রেকর্ড ১ শ’ ১১ বিসিএম মূল্যের এলএনজি আমদানি করেছে, রিফিনিটিভের তথ্য দেখিয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বছরের এলএনজি আমদানির প্রায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে রাশিয়া থেকে ইউরোপের আমদানির পরিমাণ ছিল ১৭.৮ বিসিএম, যা ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেড়েছে। এবং এর প্রায় সমস্ত সমস্তটাই ফ্রান্স, বেলজিয়াম, স্পেন এবং নেদারল্যান্ডসে গেছে।
বেশিরভাগ রাশিয়ান এলএনজি ইয়ামাল এলএনজির সাথে যৌথ উদ্যোগ থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে, যার বেশিরভাগ রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান নোভাতেকের মালিকানাধীন। ফ্রান্সের টোটাল, চীনের সিএনপিসি এবং চীনা রাষ্ট্রীয় তহবিল এর অন্যান্য অংশীদার হিসেবে রয়েছে। উপগ্রহের তথ্য বিশ্লেষক সংস্থা কোয়ান্টকিউব অনুসারে, ফিনল্যান্ডের সাথে রাশিয়ার দক্ষিণ সীমান্তের পোর্তোভাইয়া বন্দর থেকে এলএনজি বহনকারী একটি বড় জাহাজ গত মাসে গ্রিসে পৌঁছেছে। এটি এই বছরের শুরুতে সক্রিয় হওয়া পোর্তোভাইয়া প্রকল্পের প্রথম চালান, যা রাশিয়ার সাথে ইউরোপের সম্পর্কের আরেকটি চিহ্ন। ২০১৭ সাল থেকে দেশটি ইউরোপের জন্য জ¦ালানী শীর্ষ-তিনটি উৎসে পরিণত হয়েছে, যা গত তিন বছরে ইউরোপের মোট আমদানির প্রায় ২০ শতাংশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন