শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সোলেদারের মুক্তি সম্পন্ন করেছে রাশিয়ান সৈন্যরা

রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ভুল পদক্ষেপ : হাঙ্গেরি অভিজাত ইউক্রেনীয় সৈন্যরা শহরটি পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ চারশ’রও বেশি বিদেশি ভাড়াটে সৈন্য পালিয়ে যায়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

রাশিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে হাঙ্গেরি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বলেছেন, এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ একটি ভুল এবং এর অবসান হওয়া উচিত। হাঙ্গেরির রাষ্ট্রীয় রেডিওর সঙ্গে আলাপকালে ভিক্টর অরবান বলেন, রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে জ্বালানির দাম ও মুদ্রাস্ফীতি অর্ধেকে নেমে আসবে। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবশ্যই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তার ভাষায়, ‘এটা নিশ্চিত যে, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জিতেছে আর ইউরোপ হেরেছে। রাশিয়া জিতেছে নাকি হেরেছে সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে আমরা যদি অর্থের দিক থেকে বলি, তাহলে রাশিয়া খুব বেশি হারেনি; এমনটা বলার সুযোগ নেই।’ ভিক্টর অরবান বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা থামানোর ক্ষমতা হাঙ্গেরির নেই। তবে ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশগুলোর এমন সুযোগ রয়েছে।

সোলেদারের মুক্তি সম্পন্ন করেছে রাশিয়ান বাহিনী : ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানকালে ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাশিয়ান সৈন্যরা ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে সোলেদারের মুক্তি সম্পন্ন করেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ গত শুক্রবার একথা জানিয়েছেন।

জেনারেল বলেন, ‘দোনেতস্ক এলাকায় সফল আক্রমণাত্মক অপারেশন অব্যাহত রাখার জন্য অত্যাবশ্যক সোলেদার শহরের মুক্তি ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সম্পন্ন হয়েছে’। শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের বাহিনী বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সোলেদারের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। এটি বলেছে, ‘সোলেদারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ফলে আমরা (বাখমুত) ইউক্রেনীয় বাহিনীর সরবরাহ পথ বন্ধ করে দিতে পারি এবং তারপর অবরোধ করে বাকি দলগুলোকে কোণঠাসা করে ফেলতে পারি’। প্রায় ১০ হাজার লোকের বসতিপূর্ণ সোলেদার ইউক্রেনের বৃহত্তর বাখমুত শহরের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। সোলেদার রাশিয়ান বাহিনীর দখলে চলে যাওয়ার ফলে ইউক্রেনের জন্য নিকটবর্তী শহর বখমুতকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। উভয় পক্ষের জন্য বাখমুত প্রতীকী গুরুত্ব বহন করে এবং ভয়ঙ্কর সম্মুখ যুদ্ধের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। গত গ্রীষ্মের পর বখমুত বিজয় মস্কোর জন্য প্রথম অর্থপূর্ণ সামরিক সাফল্য প্রদান করবে।

কোনাশেনকভ রিপোর্ট করেছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর অবস্থানে ক্রমাগত বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং কামান হামলার মাধ্যমে রাশিয়ান সৈন্যরা সোলেদারকে আটকে রেখেছিল।
মুখপাত্র বলেন, ‘আক্রমণ এবং আর্মি এভিয়েশন এয়ারক্রাফ্ট, মিসাইল ট্রুপস এবং রাশিয়ান গ্রুপ অফ ট্রুপস (ফোর্স)-এর আর্টিলারি দিয়ে শত্রুর ওপর ক্রমাগত হামলার জন্য সোলেদারকে অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। তারা ক্রমাগত শত্রুকে রিজার্ভ, গোলাবারুদ সরবরাহ এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক লাইনে পশ্চাদপসরণ করার প্রয়াসের সুযোগ না দিয়ে শহরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর অবস্থানগুলিতে ঘনীভূত হামলা চালায়’।

কোনাশেনকভ বলেছেন, সোলেদারে গত তিন দিনের যুদ্ধে রাশিয়ান বাহিনী ৭শ’ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা এবং ৩শ’রও বেশি অস্ত্র ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। কোনাশেনকভ জানিয়েছেন, রাশিয়ান প্যারাট্রুপাররা কমান্ডিং উচ্চতা অর্জন এবং উত্তর ও দক্ষিণ থেকে শহরটিকে অবরুদ্ধ করার পরে সোলেদারের মুক্তিতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর অবস্থানগুলো নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।

‘সোলেদারের মুক্তির জন্য অপারেশন চলাকালে এয়ারবর্ন ফোর্স ইউনিটগুলো অন্যদিক থেকে একটি স্টিলথ কৌশল চালায় এবং সফলভাবে মার্চ থেকে ইউক্রেনীয় সেনা অবস্থানগুলোতে আক্রমণ করে, কমান্ডিং উচ্চতা অর্জন করে এবং শহরটিকে উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে অবরুদ্ধ করে’। মুখপাত্র ড. কোনাশেনকভ জানিয়েছেন, রাশিয়ান যুদ্ধবিমান সোলেদারের মুক্তিতে তিনটি ইউক্রেনীয় যুদ্ধবিমান এবং একটি হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে’।
মুখপাত্র বলেন, ‘শহরের মুক্তির জন্য তাদের অভিযানে রাশিয়ান মহাকাশ বাহিনীর যুদ্ধবিমান তিনটি বিমান এবং ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে যা ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য বিমান সহায়তা প্রদান করেছিল’।

জেনারেল সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন, রাশিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মার্কিন তৈরি হিমারস মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেমের নয়টি রকেট গুলি করে, ওলখা এবং উরাগান রকেট লঞ্চার ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী সোলেদার এলাকায় রাশিয়ান সৈন্যদের দ্বারা নেওয়া শক্ত ঘাঁটির বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করেছে।
রাশিয়ান ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (ইডব্লিউ) বাহিনী এবং ক্ষমতা সোলেদারের মুক্তিতে শত্রুর কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণকে ছিটকে দিয়েছে এবং ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা ব্যর্থ করেছে, -কোনাশেনকভ রিপোর্ট করেছেন।
মুখপাত্র বলেন, ‘সেই অঞ্চলে জড়ো হওয়া রাশিয়ান বাহিনীর ইলেকট্রনিক যুদ্ধবাহিনী এবং ক্ষমতা শত্রুর কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণকে অক্ষম করে এবং ইউক্রেনীয় ইউএভির আক্রমণকে ব্যর্থ করে দেয়’।

সোলেদার থেকে ৪শ’রও বেশি বিদেশি ভাড়াটে সৈন্য পালিয়ে যায় : প্রায় চাশ’ বিদেশি ভাড়াটে এবং ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদী ব্যাটালিয়নের সদস্য সম্প্রতি মুক্ত শহর সোলেদার থেকে পালিয়ে গেছে এবং এখন ডিপিআর শহর সেভারস্কে রয়েছে। লুগানস্ক পিপলস রিপাবলিকের সামরিক বিশ্লেষক কর্নেল ভিটালি কিসেলিভ গত শুক্রবার তাসকে একথা বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয়রা সেভারস্ক শহরে ইংরেজি এবং পোলিশ-ভাষী সামরিক বাহিনীকে দেখেছে বলে জানিয়েছে। বর্তমানে সেখানে কতজন ভাড়াটে সৈন্য রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই, সম্ভবত ৩০০-৪০০ জন। এটা সম্ভব যে, সেই ভাড়াটেরা সোলেদার থেকে পালিয়ে গেছে। এছাড়াও, ক্রাকেন [ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদী ব্যাটালিয়ন] এবং ডান সেক্টর [ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদী সংগঠন, রাশিয়ায় নিষিদ্ধ] এর সদস্যদের সেভারস্কে দেখা গেছে’।

কিসেলিভ বলেন যে, জাতীয়তাবাদী ইউনিটগুলো সম্ভবত পশ্চাদপসরণবিরোধী শক্তি হিসাবে সোলেদারে অবস্থান করেছিল।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার ঘোষণা করেছে যে, রাশিয়ান সৈন্যরা সোলেদার শহর মুক্ত করেছে, যেখানে গত কয়েকদিনে প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে। এলপিআর-এর পিপলস কাউন্সিলের সাথে আন্তঃ-সংসদীয় সম্পর্কের সমন্বয়কারী সিআইএসবিষয়ক স্টেট ডুমার কমিটির প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান, ইউরেশিয়ান ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড রিলেশনস উইথ প্যাট্রিয়টস, ভিক্টর ভোদোলাটস্কি পরে তাসকে বলেন যে, প্রায় অর্ধেক ইউক্রেনের পক্ষে লড়াই করছে। সোলেদারের কাছে ন্যাটো দেশগুলোর বিদেশি ভাড়াটে এবং সামরিক কর্মী ছিল।

অভিজাত ইউক্রেনীয় সৈন্যরা সোলেদারকে পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে : লুগানস্ক পিপলস রিপাবলিকের সামরিক বিশ্লেষক কর্নেল ভিটালি কিসেলিভ শুক্রবার তাসকে বলেছেন যে, ইউক্রেনের যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত অভিজাত ইউনিট রাশিয়ান বাহিনীর কাছ থেকে সোলেদারকে ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘হালকা সাঁজোয়া যানে প্রায় ৩০০-৪০০ জন লোক, পিকআপে সোলেদারে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমাদের ইউনিটগুলোকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা ছিল ৪৬তম এবং ৭৭তম [আক্রমণ] ব্রিগেডের অবশিষ্টাংশ যা অভিজাত ইউক্রেনীয় ইউনিট হিসাবে বিবেচিত। [ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির] জেলেনস্কি এ ইউকে-প্রশিক্ষিত ইউনিটগুলোর ওপর বড় আশান্বিত ছিলেন’।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ গত শুক্রবার বলেছেন যে, রুশ সৈন্যরা ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সোলেদারকে সম্পূর্ণ মুক্ত করেছে। তিনি বলেন যে, সোলেদারের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের ফলে ইউক্রেনের আর্টিওমভস্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সরবরাহ রুট বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়েছে, যা ইউক্রেনের বাখমুত নামে পরিচিত। সূত্র : তাস ও আল-জাজিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Sohidul Islam ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:১৬ এএম says : 0
খুব ভালো লাগছে
Total Reply(0)
Halim Khan ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:১৬ এএম says : 0
রাশিয়া খুব দ্রুত হেরে যাবে
Total Reply(0)
Obuj Mon ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:১৬ এএম says : 0
পরাজয় মেনে নাও ইউকে
Total Reply(0)
মোঃ জসিম মোল্লা গলাচিপা ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:১৭ এএম says : 0
জয় হবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জয় হবে রাশিয়ার জনগণের ইনশাআল্লাহ
Total Reply(0)
Subash Chowdhury ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:১৭ এএম says : 0
শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার জয়ী হবে ৷
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন