রাশিয়ার বেসরকারী সামরিক গোষ্ঠী ওয়াগনার গ্রুপ ইউক্রেনের দখলকৃত শহর সোলেডারে যুদ্ধে নিহত ইউক্রেনীয় সৈন্যদের মৃতদেহ দেশটির রাজধানী কিয়েভে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে, গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের সাথে যুক্ত একটি ওয়েবসাইট শনিবার জানিয়েছে।
ওয়াগনার ১১ জানুয়ারী বলেছিলেন যে, তারা সোলেদার মুক্ত করেছে এবং ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় যোগ দেয়া ডোনেৎস্ক অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ এ সপ্তাহের শুরুতে বলেছিল যে, তারা লবণ-খনির শহরটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যেখানে তীব্র লড়াই হয়েছে। রিয়া ফ্যান ওয়েবসাইট, যেটি প্রিগোজিনের মিডিয়া হোল্ডিংয়ের অংশ - একজন ওয়াগনার কমান্ডারকে উদ্ধৃত করে বলেছে যে, ওয়াগনার গ্রæপ সোলেডার থেকে মৃতদেহগুলোকে প্রায় ২০টি ট্রাকে চার বা পাঁচটি কনভয়ে করে ইউক্রেনীয়-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পাঠাবে।
শনিবারের প্রতিবেদনে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের কাছে কত লাশ ফেরত দেয়া হবে তা বলা হয়নি, তবে ইউক্রেনের বাহিনী সোলেডারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রিগোজিন স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে, সৈন্যদের মৃতদেহ একটি ‘মর্যাদাপূর্ণ’ উপায়ে ইউক্রেনে ফেরত দেয়া উচিত, তবে পরিকল্পিত অপারেশন সম্পর্কে আর কোনও বিবরণ দেননি। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ সোলেডারের জন্য লড়াইয়ের সময় বলেছিল যে, রাশিয়ান বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। প্রিগোজিন, যিনি পূর্বে সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলতেন এবং ওয়াগনারের সাথে সংযোগ অস্বীকার করেছিলেন, সেপ্টেম্বরে স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি ভাড়াটে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেটি সংঘর্ষে প্রধান ভ‚মিকা পালন করেছে। তিনি ওয়াগনারকে তার নিজস্ব বিমান, ট্যাংক, রকেট এবং আর্টিলারি সহ সম্পূর্ণ স্বাধীন বাহিনী হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়া ৬ষ্ঠ মার্কিন সেনার মৃত্যু : এ সপ্তাহে ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়া আরেক মার্কিন সেনা নিহত হয়েছেন। তিনি ছিলেন সাবেক ইউএস নেভি সিল সদস্য যিনি ২০১৯ সালে বাহিনী থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আমেরিকান কর্মকর্তারা শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন। নিহত ওই সেনার নাম ড্যানিয়েল ডবিøউ সুইফট, তিনি একজন ফার্স্ট ক্লাস পেটি অফিসার ছিলেন। তিনি ডিনিপ্রোতে রুশ সেনার সাথে যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন এবং তার ক্ষতের কারণে মারা গিয়েছিলেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেছেন।
সুইফটের লাশ ইউক্রেন থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিনা তা সহ অন্য কোন বিবরণ পাওয়া যায়নি। মার্কিন নৌবাহিনী বলেছে যে, তিনি ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোতে তার পোস্ট ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ‘আমরা অনুমান করতে পারি না কেন প্রাক্তন নাবিক ইউক্রেনে ছিলেন,’ নৌবাহিনী বলেছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতি এবং স্বতন্ত্র পরিবারের প্রতিবেদন অনুসারে ইউক্রেনে যুদ্ধে এ নিয়ে অন্তত ছয়জন আমেরিকান মারা গেছে বলে জানা গেছে।
মার্কিন সরকার আমেরিকানদের ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ করতে যেতে নিরুৎসাহিত করেছে, উদ্বেগ উল্লেখ করে যে, তারা রাশিয়ান বাহিনীর হাতে বন্দী হতে পারে এবং জিম্মি হতে পারে। যুদ্ধের শুরুর সপ্তাহগুলিতে কমপক্ষে ৬ হাজার মানুষ ইউক্রেনের পক্ষে স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার বিষয়ে তথ্য চেয়ে ওয়াশিংটনে ইউক্রেনীয় দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করেছিল। অর্ধেক সম্ভাব্য স্বেচ্ছাসেবককে সামরিক অভিজ্ঞতার অভাব, অপরাধমূলক রেকর্ড থাকার বা অন্যথায় সেবা করার উপযুক্ত না হওয়ার কারণে দ্রæত প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, ইউক্রেনের সামরিক অ্যাটাশে গত বছর বলেছিলেন।
কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ বিশ্বব্যাপী সংঘাতের জন্ম দিতে পারে : ইউক্রেনে চলমান পশ্চিমা সামরিক সহায়তা বিশ্বব্যাপী সংঘাতের সূত্রপাত ঘটাতে পারে, বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেভ শনিবার ডারিক রেডিওর সাথে এক সাক্ষাৎকারে কিয়েভে অস্ত্র না পাঠানোর আহŸান জানিয়ে বলেছেন। ‘চ‚ড়ান্ত মূল্য হল শান্তি এবং মানব জীবন। (কিয়েভে) অস্ত্র সরবরাহ করার অর্থ হল আমরা পেট্রোল দিয়ে আগুন নিভিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি, মানে স্বীকার করা যে, আরও অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটবে,’ রাদেভ তার প্রেস সার্ভিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন।
বুলগেরিয়ান প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেছেন যে, কিয়েভকে সামরিক সহায়তার অর্থ সংঘাতে ‘একটি পক্ষ সম্পূর্ণরূপে পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করা উচিত’ এমন ‘অবস্থানের সাথে চুক্তি’ করা, যা অনিবার্যভাবে এবং ধীরে ধীরে দেশটিকে ‘একটি বৈশ্বিক সংঘাত এবং পারমাণবিক আত্ম-ধ্বংসের আশঙ্কার দিকে নিয়ে যায়।’ রাদেভ জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, তার দেশের ‘এই সংঘাতে ইন্ধন দিতে অস্ত্র পাঠানো উচিত নয়’। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার দায়িত্ব হল চিন্তা করা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বুলগেরিয়ানদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা।’
‘এখন আমাদের কাছে অস্ত্রের অভাব, কিন্তু একদিন যদি আমাদের কাছে মানুষের অভাব হয়, তখন আমাদের কী করা উচিত?’ রাদেভ জিজ্ঞাসা করেন। সামরিক সংঘাত ক্রমবর্ধমান সহিংস হয়ে উঠছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর পরিধি প্রসারিত করছে এবং এটি একটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সহায়তা দিতে দিতে ইউরোপীয়রা ইতিমধ্যে ক্লান্তি অনুভব করছে।
কিয়েভের জন্য নতুন অস্ত্র বিশ্বকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে : রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র রোববার বলেছেন যে, কিয়েভকে আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহ করা হলে সেটি রাশিয়ার অঞ্চলগুলোকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং তা বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়ের দিকে পরিচালিত করবে ও গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে।
রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডুমার স্পিকার ব্যাচেসøাভ ভোলোদিন সতর্ক করেছেন যে, ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর সমর্থন বিশ্বকে একটি ‘ভয়াবহ যুদ্ধের’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ‘যদি ওয়াশিংটন এবং ন্যাটো দেশগুলো অস্ত্র সরবরাহ করে যা বেসামরিক শহরগুলোতে আক্রমণ করতে এবং আমাদের অঞ্চলগুলো দখল করার চেষ্টা করার জন্য ব্যবহার করা হবে, যেমন তারা হুমকি দেয়, এটি আরও শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে,’ ভোলোডিন টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘পরমাণু শক্তিগুলো আগে স্থানীয় সংঘাতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করেনি এমন যুক্তি অকার্যকর। কারণ এ রাজ্যগুলি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি যেখানে তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং দেশের আঞ্চলিক অখÐতার জন্য হুমকি ছিল।’
জাপোরোজিয়ের আঞ্চলিক রাজধানীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে রুশ সেনা : মস্কোর বাহিনী ইউক্রেনের জাপোরোজিয়ে অঞ্চলের রাজধানীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তারা ইতিমধ্যে ওই অঞ্চলের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে।
শহরদুটির মধ্যে একটি হচ্ছে ওরিখিভ, যা ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রিত আঞ্চলিক রাজধানী জাপোরোজিয়ে থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩০ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত এবং অপরটি হচ্ছে আরও পূর্বে অবস্থিত শহর হুলিয়াইপোল।
এদিকে, যুক্তরাজ্য বলেছে যে তারা এখনও ইউক্রেনকে জার্মান-তৈরি ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি চায়। কারণ কিয়েভ বলেছে যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তাদের এটির প্রয়োজন কিন্তু যার স্থানান্তরের জন্য বার্লিনের সম্মতি প্রয়োজন। অন্যদিকে, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া এবং লিথুয়ানিয়া একটি যৌথ আহŸান জানিয়েছে জার্মানির নেতৃত্ব বাড়াতে এবং ইউক্রেনে তার প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্ক পাঠাতে। সূত্র : তাস, আল-জাজিরা, রয়টার্স, এপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন