সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দেশে প্রতিনিয়ত কাগজের দাম বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ সভাপতি শ্যামল পাল। তিনি বলেন, ‘কাগজ উৎপাদনের মূল উপাদান পাল্প। বর্তমানে বিদেশ থেকে প্রতি টন পাল্প আমদানিতে ৮০০ থেকে ৮৫০ ডলার খরচ পড়ে। আর প্রতি টন পাল্প থেকে এক হাজার ১৫০ কেজি পর্যন্ত কাগজ উৎপাদন হয়। সে হিসেবে প্রতি টন হোয়াইট প্রিন্ট কাগজের উৎপাদন মূল্য ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু তা এখন আমাদের দেশে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি টন নিউজপ্রিন্টের উৎপাদন খরচ হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু তা এখন বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা।’
শ্যামল পাল আরো বলেন, ‘আমরা চাই দেশীয় শিল্প উজ্জ¦ীবিত হোক। কিন্তু এই অজুহাতে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে তা আমরা চাই না। ডলার সংকটের কারণে কাগজের মিল মালিকরা পাল্প আমদানি করতে পারছেন না, এটা ঠিক। কিন্তু যতটুকু আমদানি হচ্ছে, সেটার দাম এতো বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে কেন? আসলে কাগজ নিয়ে এখন সিন্ডিকেট আর মজুদদারের জন্ম হয়েছে। সরকার যদি অল্প সময়ের জন্য হলেও নির্দিষ্ট কিছু কাগজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে তাহলে মিল মালিকরাও কাগজের দাম কমাতে বাধ্য হবেন।’
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও কাগজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। সেখানেই এসব তথ্য তুলে ধরেন সমিতির সহ সভাপতি শ্যামল পাল। মূল বক্তব্যে সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে এখন মুদ্রণ এবং লেখার কাগজের যে সংকট চলছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশে অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে ভয়াবহ। যার প্রভাব আগামী শিক্ষাবর্ষের কোটি কোটি শিক্ষার্থী ও ২০২৩-এর অমর একুশে বইমেলায় পড়বে। পাল্পের দাম, পরিবহন ব্যয়সহ নানা খাতে খরচ বাড়ায় কাগজের উৎপাদন ব্যয়ও অনেক বেড়েছে। কিন্তু এজন্য যে মাত্রাসায় দাম বাড়ানোর কথা ছিল তারচেয়ে অস্বাভাবিক মাত্রায় দাম বাড়ানো হয়েছে। শুধু গত বছরের তুলনায় সব ধরনের কাগজের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির পক্ষ থেকে পাঁচ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-কাগজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ চিহ্নিত করতে সরকার, মিল মালিক, পুস্তক সমিতি ও কাগজ ব্যবসায়ীদের সমন্বয়কে তদন্ত কমিটি গঠন করা, বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি শুল্কমুক্ত ঘোষণা করা, ব্যবহৃত কাগজকে রিসাইকেলিং কাজে ব্যবহার করার ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক রাখা, কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর গুদামজাতকৃত কাগজ (যদি থাকে) স্বাভাবিক মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা এবং প্রকাশকদের সরকারের পক্ষ থেকে অন্য কোনো ভর্তুকি বা প্রণাদনা দেওয়া যায় কীনা তা ভেবে দেখা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ওসমান গনি, সাবেক সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন, সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন