এককালের প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের চররনবলিয়া গ্রামের নুর মোহাম্মদ (৬৫)। প্রতিদিন সকাল বিকাল দুই বেলা এসে চায়ের দোকানে বসে চা পান করেন, আর বসে বসে চোখ দিয়ে তাকিয়ে থাকনে নির্মাণাধীন ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতুর দিকে। তাকিয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করতেই বললেন, নিজেদের জমি দিয়েছি এই সেতুর জন্য। সেতু হলে দুই পাড়ের মানুষের জন্য ভাল হবে এই ভেবে। কিন্তু বছরের পর বছর যাচ্ছে, সেতুর কাজ শেষ হয় না। মরার আগে দেখতে পারবো কিন না জানি না।
ওপার চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছোটসুন্দর গ্রামের বাসিন্দা মাধব দাস (৪৫) তিনিও ক্ষুব্ধ একই কারণে। আশপাশের দোকানিসহ এলাকাবাসীর কথা সেতুর কাজ শেষ হবে কবে। নদীর ওপর মূল সেতুর কাজ দুই বছর পূর্বে সম্পন্ন হলেও সেতুর সংযোগ অংশ ও এপ্রোচসড়ক নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায়, ‘হইয়াও হইল না শেষ’ এই অবস্থা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সরকার প্রবাহমান নদীর ওপর একের পর এক সেতু নির্মাণ করছে। ফলে শুধু দুই পাড়ের নয়, সেতু সংযোগকারী সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীরা উপকৃত হয়। উন্নয়ন হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার অর্থনৈতিক গতিধারা। কিন্তু নির্মাণ কাজে ধীরগতির কারণে সুফলের পরিবর্তে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দুই পাড়ের মানুষ। যেমনটি হয়েছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতুর ক্ষেত্রে। গত ৫ বছরেরও সেতুটির সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। সাধারণ মানুষের অভিযোগ ঠিকাদারের অবহেলার কারণে নির্মাণ কাজে ধীরগতি।
এককালের প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদীর ওপর ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের চর রনবলিয়া গ্রাম ও চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছোটসুন্দর গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বগার গুদাড়ায় এলাকায় দিয়ে ২৭৭ মিটার দীর্ঘ ভাষাবীর এম এম ওয়াদুদ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যে দিয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দুই সংসদীয় আসনের এমপি ডা. দীপু মনি ও ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া যৌথভাবে সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার নবারণ টেড্রার্স লি. সেতুটির মূলকাজ নদীর ওপরের কাজটি সম্পন্ন করে। পরে ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্য ২৮ কোটি ৯৫ লাখ ৮২ হাজার ৮৫৪ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশন ও ইউনুছ আল মামুন (জেবি) যৌথভাবে কাজ শুরু করে। নির্মাণ কাজের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২১ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করে তা জুন ২০২৩ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
সরেজমিনে সেতু এলাকায় দেখা যায়, ফরিদগঞ্জ অংশে ৮/১০ জন শ্রমিক সেতুর ডায়াফাক্টের কাজ করছে। অপর পাড়ের পিয়ারের ক্যাপের কাজ শেষে একটি ডায়াফাক্টের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইট প্রকৌশলী নাঈমুর রহমান।
তিনি জানান, সেতুর সংযোগ অংশের জন্য দুই পাড়েই নির্মাণ কাজ চলছে। চাঁদপুর সদর অংশের কাজ অনেকখানি শেষ হয়েছে। এখন ফরিদগঞ্জ অংশের কাজ চলছে। আশা করছি আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে সেতুর সংযোগ অংশ ও সড়কের কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হবে। প্রতিদিন রাতে দিনে গড়ে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করছে। গত দুই মাস ধরে কাজে গতি এসেছে বলে জানান।
এদিকে বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের বাসিন্দা রিপন (৩০), মনির হোসেন (৩৮), আলাউদ্দিন (৩৪), মিজান (৬০), শফিকুর রহমান (৭০)সহ বেশ কয়েকজন জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির কাজের ধীরগতি ও শ্রমিক কম দিয়ে কাজ করানোর কারণে ডায়াফাক্টের পিয়ারের ক্যাপের রডে মরিচা ধরছে। ঠিকমত এখানে নির্মাণ সামগ্রীও আনা হয় না।
বালিথুবা পুর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ধীরলয়ে কাজ করছে। কবে যে শেষ হবে বুঝতে পারছি না।
এ ব্যাপারে এলজিইডি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুস হোসেন বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতুর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ ডিসেম্বর ২০২১ সালে মেয়াদ শেষ হয়। পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করে জুন ২৩ পর্যান্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর আগেই পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার আশা করছি। প্রসঙ্গত, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির পিতা ভাষাসৈনিক মরহুম এম. এ. ওয়াদুদের নামানুসারে ব্রিজটির নামকরণ করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন