খুলনার কয়রায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জরুরি বাঁধ সংস্কার নামে টেন্ডার (দরপত্র) ছাড়াই ১৮টি প্রকল্পে ৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা ব্যয়ে বাঁধ মেরামত কাজ চলছে। এসকল কাজে এস্কেভেটর দিয়ে মূল বাঁধের ঢালের মাটি কেটে বাঁধ উঁচু করার চেষ্টা করছেন ঠিকাদার। এতে বাঁধের ওই স্থান আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। খরচ বাঁচিয়ে বেশি লাভের আশায় ঠিকাদার এমনটি করছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্ষা মৌসুমে এসব স্থানে বাঁধ ধসে গিয়ে বড় ক্ষতির আশঙ্কার পাশাপাশি ঠিকাদারদের বেশী লাভের ঘটনায় কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের জন্য পাউবোর দু’টি পোল্ডারের ৯টি স্থানে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার কাজ চলছে। এর চালকরা বাঁধের দুই পাশের ঢালের মাটি কেটে ওপরে তুলছেন। সেই মাটি আবার কোদাল দিয়ে সরিয়ে শীর্ণকায় বাঁধ উঁচু ও প্রশস্ত করার চেষ্টা করছেন শ্রমিকরা। সেখানে পাউবো’র কোন দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। এস্কেভেটর চালকরা জানান- ঠিকাদারের লোকজনের কথা মতো তারা এভাবে মাটি কাটছেন। নিয়ম অনুযায়ি মূল বাঁধের ৩০ মিটার দূর থেকে শ্রমিক দিয়ে মাটি আনার কথা। কিন্তু ঠিকাদার খরচ ও সময় বাঁচাতে এস্কেভেটর ব্যবহার করেছেন। এতে বাঁধের দুই পাশে বড় গর্তের সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। বাকি কাজগুলোতে একইভাবে কাজ চলছে বলে জানা গেছে। মঠবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আল আমীন বলেন, ঠিকাদার বাঁধের একেবারে পাশ থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে সংস্কার কাজ করেছেন। কিছু স্থানে মূল রাস্তা কোদাল দিয়ে ছেটে ভরাট করেছেন। কিছু স্থানে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি তুলে ছোট গর্ত ভরাট করে দিয়েছেন। এতে কাজের মান ভালো না হওয়ায় আমরা গ্রামের লোকজন কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। পরবর্তিতে তারা সেখানে একইভাবে কাজ করেছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম) পদ্ধতির মাধ্যমে কয়রা উপজেলার ১৩-১৪/২ এবং ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের গোবরা এলাকায় দুই স্থানে ১ হাজার ৮০০ মিটার, হরিনখোলা এলাকায় ১৩০ মিটার, সুতির অফিস এলাকায় দুই স্থানে ৩৬৫ মিটার, হরিহরপুর এলাকায় দুই স্থানে ৪২০ মিটার, গাতিরঘেরি এলাকায় দুই স্থানে ২৮০ মিটার, পদ্মপুকুর এলাকায় ১৮০ মিটার, চোরামুখা এলকায় চার স্থানে ১ হাজার ২০ মিটার, পাতাখালি এলকায় ২৭০ মিটার, শাকবাড়িয়া এলাকায় দুই স্থানে ৩০০ মিটার, মেদেরচর এলাকায় দুই স্থানে ৪০০ মিটার, ঘোপের খাল এলাকায় ৪০০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে। প্রাক্বলন অনুযায়ি ওই কাজে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগীতায় দরপত্র ছাড়া ওইসব কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন স্থানীয় ও বহিরাগত কয়েক ব্যাক্তি।
গোবরা এলাকায় ৯০০ মিটার বাঁধ মেরামতের দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম শেখ। তিনি দুটি এস্কেভেটর দিয়ে বাঁধের পাশ থেকে মাটি কেটে তুলছেন। এ অবস্থায় কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গতকাল সরেজমিন গিয়ে ওই কাজ বন্ধ করে দেন।
জানতে চাইলে আবুল কালাম শেখ বলেন, পাউবো কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমি এ কাজটি দেখাশুনা করছি। যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে তাতে বাঁধের কোন ক্ষতি হবে বলে মনে করি না।
গোবরা গ্রামের বাসিন্দা মুস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে বাঁধ মেরামত না হওয়ায় প্রতি বছর ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে। সেই সাথে অপচয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। পাউবোর সেকশান কর্মকর্তা (এসও) মো. লিয়াকত আলী বলেন, বাঁধের ঢাল থেকে যাতে মাটি না কাটে সে জন্য ঠিকাদারের লোকজনকে বলা হয়েছে। একই সাথে বাঁধ মেরামত কাজ যাতে ভালো হয় সে জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস, এম শফিকুল ইসলাম বলেন, বাঁধের পাশ থেকে মাটি কাটা হলে সেখানে ঝুঁকি আরও বাড়বে। বর্ষা মৌসুমে এসব স্থানে মাটি সরে গিয়ে মূল বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে ঠিকাদারের লোকজনকে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন