শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

খুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

এস এম সোহেল বিল্লাহ, পিরোজপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিগত কয়েক বছর ধরেই স্কুল ভবনের পলেস্তারা খুলে খুলে পড়ছে। বাঁকা হয়ে গেছে স্কুলের দরজা-জানালা খুলেও গেছে কয়েকটা। সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলত। শিশুদের কথা চিন্তা করেই সম্প্রতি ভবনের পাশেই নির্মাণ করা হয় একটি অস্থায়ী টিনের ঘর। সেখানে পড়ালেখা করতে হচ্ছে পিরোজপুর সদর উপজেলার ৮১ নম্বর খুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। তবে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে থাকলেও তারা আছেন আতঙ্কে। নতুন ভবন না হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে না বলে জানান তারা। তাই দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি তাদের।
১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠা হয় খুমুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ১৯৭২ সালে স্কুলটি সরকারিকরণ করা হয়। ১৯৯৫ সালে নির্মাণ করা হয় বর্তমান ভবনটি। সম্প্রতি সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে ১৩৫ শিক্ষার্থী খুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। এখানকার ফলাফল ভালো হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পাঠদানের জন্য নিয়ে আসেন। তবে বাড়ি থেকে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে অভিভাবকরা থাকেন আতঙ্কে। কখন যে কী হয়ে যায়!
শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হয় ১৯৯৫ সালে। তবে ২০১৫ সাল থেকেই ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা যেতে শুরু করে। তখন থেকেই খুলে পড়তে থাকে পলেস্তারা। বর্ষাকালে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার হার ৫৮ দশমিক ০৫ শতাংশ। জেলায় ৯৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে জেলায় শতাধিক বিদ্যালয়ই ঝুঁকিপূর্ণ। মহাপরিচালক অফিসে তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে এই ভবনগুলো নতুনভাবে আসবে। কোনো কোনো স্থানে নতুন ভবনের কাজ শুরুর তথ্যও পাওয়া গেছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়েম জানায়, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের ভবনটি অনেক পুরোনো, যা মাঝে মাঝেই ধসে যায়। তাই আমাদের শিক্ষকরা আমাদের টিনের একটি ঘরে নিয়ে ক্লাস নেন।
আরেক শিক্ষার্থী ইয়াসিন জানায়, কিছুদিন আগে আমাদের ক্লাস চলার সময় পলেস্তরা খসে পড়েছিল। এমনকি আমাদের ক্লাসের ফ্যানও খুলে পড়েছিল, যা থেকে আমরা অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছি।
অভিভাবক ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘বিদ্যালয়টি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের সন্তানরা বিদ্যালয়ে এসে অনেক ভয়ে ভয়ে থাকে। মাঝে মাঝে পলেস্তরা খসে পড়ে। আমরা তাদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকি। তারা বাসায় গিয়েও বলে বিদ্যালয়ের ভবন পুরোনো, এটি নতুনভাবে করা দরকার।’
আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক খাদিজা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেকে এই বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য পাঠাই। বহুবছর ধরে এই বিদ্যালয় ভবনটি সংস্কার বা নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে না। ওদের এখানে পাঠানোর পর ছাত্ররা যেমন অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে, তেমনি আমরাও বাড়িতে আতঙ্কে থাকি। কখন কোন ঘটনা ঘটে বা তারা আহত হয়। তাই আমাদের দাবি শিক্ষার্থীদের নিরাপদে পাঠদানের স্বার্থে যাতে বিদ্যালয় ভবনটি দ্রুত সময়ে নতুনভাবে তৈরি করে দেওয়া হয়।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বনানী রাণী পাল বলেন, ‘আমি এ বিদ্যালটিতে ২০১৬ সাল থেকে শিক্ষকতা করছি। এখানে আসার পর থেকেই এই জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস নিচ্ছি। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় কখন কী হয়। একবার সিলিং ফ্যান একবার পলেস্তরা খুলে পড়েছে। আমরা মনোযোগ সহকারে এখানে থাকতে পারি না। বিদ্যালয়ের নতুন একটা ভবন হলে সবার চিন্তা একবারে শেষ হয়।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঞ্জু রাণী কর্মকার বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর এখানে বড় ধরনের কোনো মেরামত হয়নি। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে একটি টিনশেডে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২টি বড় দূর্ঘটনা থেকে বাচ্চারা অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। এখন এ জন্য অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের পাশের অন্যান্য স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের নামের তালিকা উপজেলা অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মহাপরিচালকের অফিসে পাঠানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পাশে জরুরি তহবিল থেকে পাঠদানের সুবিধার্থে টিনশেড তৈরি করছি। পাঠদান কার্যক্রম কোনোভাবেই ব্যাহত হচ্ছে না। আশা করছি, আগামী ১-২ বছরের মধ্যেই আমরা নতুন ভবন পেয়ে যাব। সেইসঙ্গে নতুন আসবাবপত্র সরবরাহের মাধ্যমে আবারও সম্পূর্ণরূপে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারব।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন