আবুল কাশেম আবাদি : বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলটি একটি স্বতন্ত্র ধরনের নিচু এলাকা বা জলা ভূমি। আকারের দিক থেকে কম-বেশি গোলাকার ও নিচু ভূমি, এই গেলাকার নিচু ভূমি আবার নদী দ্বারা চারিদিকে ঘেরা। হাওরের নি¤œতম অংশে এক বা একাধিক বিলও আছে। বিলগুলো খালের মাধ্যমে নদীর সাথে যুক্ত। দেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনায় রয়েছে ছোট-বড় অনেক হাওর। বর্ষার পানি জমে গিয়ে হাওরগুলো অনেকটা সাগরের রূপ ধারণ করে। তখন হাওরের পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণের শত শত বর্গমাইল এলাকা পানিতে একাকার হয়ে যায়। এ সময় হাওর, নদী, আর বিলের আলাদা কোনো অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে না, শুধু পানি আর পানি দেখা যায় যতদূর চোখ যায়। একদিকে পানির বিস্তৃতি আরেক দিকে ঢেউয়ের বিশাল আকার বর্ষাকালে সত্যিই এই অঞ্চলকে সাগরে পরিণত করে।
সম্ভবত সে কারণেই ভাষা বিজ্ঞানীরা মনে করেন ‘সাগর’ শব্দটি থেকে ‘হাওর’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। যাহোক, সম্প্রতি হাওরে আগাম বন্যায় বোরো ফসলের ক্ষতি হওয়ায় কৃষককুল দিশেহারা। প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এ নিয়ে প্রচুর আলোচনা ও প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তা উঠে এসেছে। কিন্তু হাওর অঞ্চল যেহেতু দুর্গম তাই প্রশাসনের কোনো কর্মকতাকে সেখানে খুঁজে পাওয়া যায় না। আজকাল তাদের অনুসরণ করে হাওরের সচ্চল কৃষকরাও শহরে বাস করছেন। পরে রয়েছে প্রন্তিক কৃষকরা। যত দুঃখ সবই যেন তাদের পোহাতে হচ্ছে।
হাওরে বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী প্রায় দু’কোটি। তাদের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। আর এ অঞ্চলের প্রধান ফসল ইরি বা বোরো ধান, তারপর রয়েছে মাছ। যদি বোরো ধান একবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তাদের দশা কী হয় তা সহজেই অনুমান করা যায়। যা এবার হয়েছে। আবার ঐ বিশাল হাওরে কোনো না কোনো এলাকায় প্রতি মৌসুমেই শিলাবৃষ্টি, ঝড় ইত্যাদি কারণে ফসলের ক্ষতি হয়। পরিবেশসহ নানাবিধ বিপর্যয়ের কারণে হাওরগুলো এখন আর আগের অবস্থায় নেই। যেসব খাল হাওরের বিলগুলোকে নদীর সাথে যুক্ত করতো, বাঁধের কারণে সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। আবার খালের মুখে অনেক ক্ষেত্রেই স্লুইচ গেইট নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র ও লালন ভূমিগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। হাওরের বিলগুলোর বেশিরভাগই শীতকালে শুকিয়ে যায়। এতে হাওরের জলজ প্রাণি বৈচিত্র্যও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। নির্বিচারে সৎস্য নিধন, বিল শুকিয়ে মাছ ধরার কারণেও হাওরের পরিবেশতাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে দুঃখ বেড়েছে হাওরবাসীর।
পানির সঙ্গে মিতালী করেই কাটে হাওরবাসীর জীবন। তাই তাদের মনও পানির মতো সরল-সহজ। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর চাহিদাও খুব বেশি না। কিন্তু দুঃখজনক হলো, তাদের সে স্বল্প চাহিদা পূরণেও নেই যথাযথ উদ্যোগ।
ষ লেখক : প্রাবন্ধিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন