গঙ্গাচড়া (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : রংপুর জেলার ১০ বছরে কৃষকদের মাঝে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় চার গুণ। আর এ কারণে প্রতিনিয়ন উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত চারবছরে শুরু রংপুর অঞ্চলেই ব্যবহার করা হয়েছে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার। কৃষিবিদদের মতে কৃষকদের অজ্ঞতা, বিভিন্ন ফসল এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সমন্বয়হীনতার কারণেই প্রতিনিয়ত বাড়ছে রাসায়নিক সারের ব্যবহার। ফলে কমছে জমির উর্বরতা শক্তি ও গুণগত মান। যার প্রভাব পড়ছে মাটি, উৎপাদিত ফসল এবং জীব বৈচিত্র্যের উপর। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের দাবি, মাটির গুণাগুণ ঠিক রাখতে এবং কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। তপোধন এলাকার কৃষক যোসেফ মিয়া ৩০ বছর ধরে কৃষি কাজ আসছেন। তিনি ফসল উৎপাদনে নির্ভরশীল রাসায়নিক সারের উপর। যোসেফ মিয়ার মতো আরো অসংখ্য কৃষক একইভাবে কৃষিকাজে ব্যবহার করে থাকেন রাসায়নিক সার। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে দেশে রাসায়নিক সার ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৩৭ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন। ২০১১-১২ অর্থ বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টনে। আর ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে তার পরিমাণ ছিল ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রংপুর অঞ্চলে রাসায়নিক সারের চাহিদা ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ১শ’ মেট্রিক টন আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গিয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টনে। শুধু তিন বছরে জমিতে ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন। কৃষি গবেষক রোকনুজ্জামান জানান, বর্তমান রংপুর অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষি জমির উর্বরতা স্বাভাবিকের থেকে অনেক কম। চাষযোগ্য প্রায় সব জমিতেই পরিমিত পরিমাণে নেই জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন, জিংক, সালফার, বোরন এবং পটাসিয়াম। আর উচ্চ থেকে অতি উচ্চমাত্রায় রয়েছে ফসফরাস, যা উদ্ভিদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আদর্শ মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমিত মাত্রা ৫ শতাংশ। বেশিরভাগ জমিতে রয়েছে ১-১ দশমিক ৭ শতাংশ, অল্প কিছু জমিতে রয়েছে ১ দশমিক ৭-৩ দশমিক ৪ শতাংশ। নাইট্রোজেনের পরিমিত মাত্রা ০ দশমিক ০৯, অতি নিম্ন মাত্রায়। জিংকের পরিমিত মাত্রা রয়েছে ১ দশমিক ৩৫১-১ দশমিক ৮ মাইক্রো পার গ্রাম মাটিতে। কিছু মাটিতে রয়েছে ০ দশমিক ৪৫১ থেকে ০ দশমিক ৯ মাইক্রো পার গ্রাম মাটি। আর কিছু মাটিতে ০ দশমিক ০৯১ থেকে ১ দশমিক ৩৫ মাইক্রো পার গ্রাম। সালফারের পরিমিত মাত্রা ২২ দশমিক ৫১ থেকে ৩০ মাইক্রো পার গ্রাম মাটিতে। যা রয়েছে নিম্ন মাত্রায়। মাটির উর্বরা শক্তি হারানোর কারণ হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি জমির অপরিকল্পিত বহুমুখী ব্যবহার এবং কৃষকদের সাথে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন