শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রফতানির সম্ভাবনা

সাতক্ষীরায় তৈরি সার্জিক্যাল গজ-ব্যান্ডেজ

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৫৬ এএম

সাতক্ষীরার নলতায় প্রতি মাসে উৎপাদন হচ্ছে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার উন্নতমানের সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ। আর এই উৎপাদিত পণ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। তবে, সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আবারো রফতানি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তাঁতিরা।
সরেজমিনে জানা যায়, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তাঁতপল্লী নামে খ্যাত নলতা গ্রামে গড়ে উঠেছে ছোট বড় মিলে প্রায় দুই হাজার বিদ্যুৎ চালিত পাওয়ারলুম। যেখানে দিনে রাতে উৎপাদিত হচ্ছে উন্নতমানের সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ। এই পেশার সাথে জড়িয়ে থাকা ১০ হাজারের অধিক মানুষের সরাসরি জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ তাঁতবোর্ড নলতা কালিগঞ্জ, সাতক্ষীরা অফিসের লিয়াজো অফিসার মো. জিলান উদ্দিন জানান, সর্বশেষ সরকারি হিসাব অনুযায়ী নলতা গ্রামে এক হাজার ৭৬৩টি উৎপাদিত বা সচল পাওয়ারলুম এবং ৪৩টি হাতে টানা তাঁত রয়েছে। যেখানে উৎপাদিত হচ্ছে উন্নতমানের সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ। এখানকার উৎপাদিত সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ দেশের সর্বত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। এটি যাতে আরো মানসম্মত ও আধুনিক করা যায় সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ সুবিধাও দেয়া হচ্ছে তাঁতিদের। ২০২১-২২ চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ১ কোটি টাকার উপরে ঋণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে গত অর্থবছরে ৯০ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং চলতি অর্থবছরে ১২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁতিদের জন্য আর্থসামাজিক অবস্থার চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন প্রকল্পের অধিনে এসব ঋণ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় উৎপাদিত সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ আগামীতে বিদেশে রফতানির জন্য খুবই সম্ভাবনাময়।
সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নলতার ড্যাফোডিলস ইন্ডাস্ট্রিয়ালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. টুটুল হোসেন জানান, ৪০টি বিদ্যুৎ চালিত তাঁতে বহু শ্রমিক গজ ব্যান্ডেজ উৎপাদন করছেন। উৎপাদিত পন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এর আগে ইউরোপ আমেরিকায়ও রফতানি করা হয়েছে। এখানে উৎপাদিত গজ ব্যান্ডেজ সর্বশেষ রফতানি করা হয় ২০১২ সালে। পরবর্তীতে দেশের অস্থিশীল পরিস্থিতির কারণে বন্ধ হয়ে যায় রফতানি। এরপর ধারবাহিকভাবে সুতা ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেশি হওয়ার কারণও রফতানিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, ৬৮ টাকা পাউন্ডের সুতা এখন কিনতে হচ্ছে ১৫২ টাকা প্রতি পাউন্ড। তাছাড়া, অন্যান্য কাঁচামালের দামও অনেক বেশি। তারপরও এটি রফতানি করা সম্ভব যদি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায়। এ জন্য উদ্যোক্তাদের চাহিদা মাফিক ঋণ সুবিধা দিতে হবে। তিনি বলেন, তাঁতবোর্ডের অধিনে ক্ষুদ্র তাঁতিদের জন্য এক থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়। আসলে এই পরিমান অর্থ দিয়ে কিছুই করা যায় না। বড়ো পরিসরে ঋণ সুবিধা পেলে আরো ভালো উৎপাদন ও রফতানি করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
নলতার গজ ব্যান্ডেজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বগুড়ার মেসার্স এফ এম ট্রের্ডাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল হাকিম কাজল জানান, নলতার সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজের ব্যাপক চাহিদা দেশজুড়ে। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করছে তার প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, এটি শীঘ্রই দেশের বাইরে রফতানি করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ঢাকার মোহাম্মাদপুর এলাকার বি এস সার্জিক্যালের স্বত্তাধিকারী আদিত্য নন্দি জানান, গত তিন থেকে চার বছর ধরে নলতার গজ ব্যান্ডেজ সরবরাহ করেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। তার মতো আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরার নলতা থেকে গজ ব্যান্ডেজ এনে ঢাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে থাকে। নলতা থেকে প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকার গজ ব্যান্ডেজ সরবররাহ হয় ঢাকাতে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির জানান, নলতা গ্রামে উৎপাদিত সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। যা এই জেলার জন্য খুবই সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। আগামীতে এই গজ ব্যান্ডেজ যাতে দেশের বাইরে রফতানি করা যায় সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন সবধরনের ব্যবস্থা করবেন। তিনি বলেন, তাঁতশিল্প আমাদের দেশের অনেক ঐতিহ্যবহন করে। নলতা গ্রামের তাঁতিরা আরো আধুনিক উপায়ে ও বিশ্বমানের গজ ব্যান্ডেজ উৎপাদন করতে পারেন, সে দিকেও প্রশাসনের সহযোগিতা থাকবে বলে জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন