ফেনীতে ব্যবসায়ীক পার্টনারের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন এক ব্যবসায়ী। পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় মামলা দিয়ে হয়রানিসহ বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন। বর্তমানে তিনি প্রাণভয়ে পরিবারসহ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ভুক্তভোগি নুরুল আবছার গতকাল জানান, মেসার্স নুরুল আবছার কনস্ট্রাকশন ফার্ম ১৯৮৪ সাল থেকে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। ২০১০ সালে তার জেঠাতো ভাই আবু তাহেরকে পার্টনার হিসেবে নেয়। চুক্তি মোতাবেক নুরুল আবছারের ভৌত কাঠামো ও ব্যবসায়ীক সুনাম এবং আবু তাহের ক্যাশ পুঁজি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিতে এবং ভাগিনা শহিদুল ইসলাম আগে থেকে কোম্পানিতে ছিলেন, তাকে ওয়ার্কিং পার্টনার হিসেবে নিয়ে ২০১০ সালে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। যেহেতু তাহেরের কাছে কোম্পানির ক্যাশ হিসাব ছিল এবং খাতাপত্র তার কাছে থাকার সুবাদে পরবর্তীতে তার খাতাপত্রের অর্পিত হিসাব মতে দেখা যায় যে ২০১০ সালে ১০ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেন এবং দু’মাসের মধ্যে বিনিযোগ তুলে নেন।
তাহের এভাবে টাকা আত্মসাৎ করার পরও ২০১০-২০১৯ সাল পর্যন্ত কোম্পানি থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগের বিনিময়ে সম্মানী হিসেবে নেন ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। লভ্যাংশ নেন ৩২ লাখ ৩২ হাজার ৩৪৬ টাকা। সিসি লোনের সুদ নেন ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৮৭ হাজার ৪৫০ টাকা। অথচ তাহেরের উত্তরা ব্যাংক শাখার সিসি লোনের হিসাবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সর্বমোট সুদ আসে ৩৮ লাখ ১ হাজার ৪২৯ টাকা।
আবছার জানান, তাহের এতেও ক্ষান্ত হননি। কাউন্সিলর কোহিনুরের মাধ্যমে নুরুল আবছারের নিকট হতে ব্যাংক সুদ বাবদ আরো ১ কোটি ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৪ টাকা পাবেন বলে দাবি করে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে তাহের ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আবু তাহেরের কাছে কোম্পানির ক্যাশ থাকায় হিসাব করে দেখা যায় তার নিকট নুরুল আবছার আরো ৪৫ লাখ ২৬ হাজার ১৪৮ টাকা পাওনা আছে। এদিকে নুরুল আবছার ২০২১ সালের ৩ মার্চ তাহেরের কাছে উক্ত টাকা পাওনা দাবি করে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাল্টা সিআর ১৮৪/২১ইং মামলা করেন। আদালত মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য ফেনী মেয়রকে নির্দেশ দেন। মেয়র বিষয়টি তদন্ত করার জন্য প্যানেল মেয়র জয়নাল আবেদীন লিটনকে দায়িত্ব দেন। তারা এ বিষয়ে একাধিকবার শালিশ বৈঠক করেও কোনো সমাধান করতে পারেননি। পরে মামলার বাদী আবছারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন। এদিকে চৌতুর তাহের অবৈধ পন্থায় আরো টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য পৌর কাউন্সিলর কোহিনুর আলম রানার সহযোগিতা নেন। আপোষ মিমাংসা শর্তে তাহের গত ২৬ আগস্ট কাউন্সিলরের মাধ্যমে আবছারকে ডেকে এনে তিনটি ১০০ টাকার অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। এবিষয়ে সন্দেহ হওয়ায় তিনি ফেনী মডেল থানায় জিডি করেন। কোহিনুর আলম ক্ষিপ্ত হয়ে সাদা কাগজে মনগড়া টাকার অঙ্ক লিখে তা পরিশোধ করার জন্য নুরুল আবছার ভূঁইয়াকে চাপ দেন। পরে তাহের কাউন্সিলরকে দিয়ে আফছারের অফিসে ও বাড়িতে লোক পাঠিয়ে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। এই কাউন্সিলরের ভয়ে এখন এলাকা ছাড়া নুরুল আবছার ও তার পরিবার।
এ প্রসঙ্গে আবু তাহের বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়া, তার কাছে ডকুমেন্ট আছে। পরে তিনি কোন ডকুমেন্ট দেখাতে পারেননি।
কাউন্সিলর কোহিনুর আলম বলেন, আবছারকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে তিনি বাড়িতে কিভাবে রয়েছেন। তার এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি এমপি মহোদয়ের নির্দেশে শালিশ বৈঠক করেছি এবং দু’পক্ষের উকিলের প্রতিবেদনের আলোকে রায় দিয়েছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন