রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এক সময়ের ঐতিহ্য বাঁশের কুয়া। এক সময় ছিল যখন মাটির কুয়া থেকে বাঁশের সাহায্যে রশি টেনে বালতি দিয়ে পানি উঠিয়ে রান্না গোসল এমনকি খাবার পানি হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। কালের আবর্তে নলকুপের প্রচলন বৃদ্ধিতে মাটির কুয়ার ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি আবাদের কাজে জমিতে এক সময় সেচ দেয়া হতো এই মাটির কুয়া থেকে কষ্ট করে পানি উঠিয়ে।
বিজ্ঞানের আশীর্বাদে সেই স্থান দখল করে নিয়েছে সেচ পাম্প ও স্যালো মেশিন। তাই ইরি বোরো ধানের জমিতে পানি সেচের জন্য মাটির কুয়ার ব্যবহার একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের অধিকাংশরাই এই কুয়া থেকে বাঁশ দিয়ে পানি উঠানোর পদ্ধতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। বর্তমান ও আগামীর প্রজন্ম বই ও ইতিহাসের পাতায় শুধু খুঁজে পাবে মাটির কুয়া। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রদর্শনের জন্য হলেও এই কুয়া সংরক্ষন করে টিকে রাখা দরকার। যাতে করে তারা এই শিক্ষা নিতে পারে যে, পূর্বের প্রজন্ম কি পরিমান কষ্ট করে জমিতে সেচ দিতো। অবশ্য এখনো কোন কোন এলাকায় মাটির কুয়ার পানি ব্যাবহার চোখে পড়ে। কিন্তু তা গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে মাত্র ২/১টি। প্রত্যন্ত এলাকায় কদাচিত কৃষি কাজে ব্যবহার হচ্ছে এই মাটির কুয়া। তাও আবার শুধুমাত্র ধানের বীজ তলাগুলোতে পনি সেচের জন্য। অনেকেই অনেকটা উপায়হীন হয়েই সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মাটি খনন করে তা থেকে পানি উত্তোলন ও বীজতলায় সেচ নিশ্চিত করছে। আশির দশকের পানি সেচের এই বিকল্প ব্যবস্থা এখন দখল করে নিয়েছে বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প এবং স্যালোমেশিন।
উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের তারা মিয়া বলেন, কুয়া থেকে বাঁশ দিয়ে পানি তোলার ব্যবস্থা হারিয়ে গেছে। পেছনের দিনগুলোতে এক সময় তারা এভাবেই বোরো ধানের জমিতে পানি সেচ দিয়েছে। ১৯৮০ সালে গ্রামের কৃষি আবাদি জমির পানি সেচের এটাই একমাত্র উপায় ছিল। সেই সময় অধিকাংশ কৃষকদের বোরো ধানের জমিতে মাটির কুয়া থেকে জমিতে পানি সেচ দেয়া হতো। একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, বীজতলায় প্রতিদিন হালকাপাতলা পানির প্রয়োজন হয়। প্রতিদিন বাড়ি থেকে স্যালো মেশিন আনা নেয়া অনেক কষ্টের। যে কারণে ছোট ছোট জমিতে বীজ বপন করে মাটির কুয়া থেকে পানি সেচ দেয়া হয়। এতে সুবিধে অনেক। কারন যখনই প্রয়োজন তখনই জমিতে পানি সেচ দেয়া সম্ভব হয়।
এলাকার প্রবীণদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, এক সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কুয়া ছিল, কুয়া থেকে আশপাশের বাড়ির লোকজনও পানি নিয়ে যেত লাইন ধরে। নারীরা কোমরে মাটির কলসি নিয়ে পানি নিতে আসত। মাটির হাড়ি বা টিনের তৈরি বালতিতে রশি লাগিয়ে বাঁশের মধ্যে বেঁধে কুয়ার ভেতরে ফেলে পানি উঠানো হতোসনাতনী পদ্ধতীতে। আর এসব পানি পান করাসহ এবং রান্না গোসল ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো হতো। মোট কথা এক সময় ছিল যখন গ্রামাঞ্চলের মানুষ মাটির কুয়ার উপরই নির্ভরশীল ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন