সুনামগঞ্জের ছাতকে সোনালী চেলা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে সুনামগঞ্জের ছাতকের সাথে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। দুই উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্য আরও প্রসারিত হবে। ঘুচবে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার উত্তর সীমান্তে রয়েছে ভারত। ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষে সোনালী চেলা ও মরা চেলাসহ অন্যান্য নদী এসে যুক্ত হয়েছে সুরমা নদীতে। মূলত নদী কেন্দ্রিক এখানে গড়ে ওঠে পাথর, চুনাপাথর, বালুসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য। এসব ব্যবসা-বাণিজ্য প্রাচীন যুগ থেকে চলে আসছে। যে কারণে এখানে গড়ে উঠেছে একাধিক শিল্প কারখানা। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সোনালী চেলা নদী। ওই নদী পথে নৌকা দিয়ে পরিবহন হয় বালু পাথর। নদীর ওপারে রয়েছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নসহ অন্যান্য এলাকা। ছাতকের ইসলামপুর ও কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল দুই ইউনিয়নকে বিভক্তি করে রেখেছিল সোনালী চেলা নদী। হেমন্ত ও বর্ষায় মানুষ খেয়া নৌকায় পারাপারের ছিল একমাত্র ভরসা। সে হিসেবে এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় আ.লীগ সরকার।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে গোয়ালগাঁও ও আমবাড়ি গ্রামের মধ্যস্থলে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। ২০২০ সাল থেকে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। দুই উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে স্বপ্ন এখন পূরণ হতে চলছে। সেতু ও এ্যাপ্রোচের কাজ শেষ হলে কোম্পানীগঞ্জ থেকে সরাসরি ছাতকের গনেষপুর গ্রাম সংলগ্ন সুরমা নদীর খেয়াঘাট পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর শুরু হবে সেতুর দুই পাশের ১ হাজার মিটার এ্যাপ্রোচের কাজ। ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এ সেতুটির নির্মাণ কাজ করছে মেসার্স নরারুন নামের ঢাকার এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ কোটি টাকা।
ছাতক উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, সোনালী চেলা নদীর ওপর নির্মিত গোয়ালগাঁও সেতু নির্মাণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ কোটি টাকা। সেতুর কাজ প্রায় ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ওই সেতুর ছাতক অংশে ২শ’ মিটার ও কোম্পানীগঞ্জ অংশে ৮শ’ মিটার এ্যাপ্রোচের কাজ বাকি রয়েছে। এটি ছাতকের বৃহত্তম সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪৭০ মিটার। ১৩ জোড়ার ২৬টি পাকা পিলারের কাজ শেষ হয়ে গ্রার্ডার স্থাপনের কাজ চলছে। ছাতক অংশে গ্রার্ডার স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগে। চলছে কোম্পানীগঞ্জ অংশের গ্রার্ডার স্থাপনের কাজ। এছাড়া এলজিইডির অধীনে উপজেলার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে বটেরখাল নদীতে বিনন্দপুর-খলাগাঁও এলাকায় ১২ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯৯ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুর কাজ। সাড়ে ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ছনবাড়ি বাজার এলাকায় ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ব্রিজ, সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চানপুর বাজার এলাকায় ৫২ মিটার দৈর্ঘ্য ব্রিজ, ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৮ মিটার দৈর্ঘ্য কুপিয়া ব্রিজ, আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে কালারুকাণ্ডতাজপুর সাড়ে ৭ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজ, সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গোবিন্দগঞ্জ-বসন্তপুর সড়কের ৫ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ, ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মঈনপুর-কাঠাশলা এক কিলোমিটার আরসিসি রাস্তার কাজ শুরু হবে, ৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নোয়ারাই-বালিউড়া রাস্তার ৪৮ মিটার দৈর্ঘ্য মাগুড়া ব্রিজ, প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে চরমহল্লা চানপুন রাস্তায় দুটি ব্রিজ, ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাতগাঁও-মড়লপুর ২কিলোমিটার আরসিসি রাস্তাসহ ধারণ-আমেরতল ২কিলোমিটার আরসিসি রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আফছার আহমেদ জানান, ২০২৩ সালের মধ্যে সোনালী চেলা নদীর ওপর নির্মিত গোয়ালগাঁও সেতুর কাজ শেষ হবে। সেই হিসেবে দ্রুত গতিতে নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত সেতুর ৬০ ভাগ কাজ হয়েছে। নিয়মিত তদারকি করছে উপজেলা এলজিইডি অফিস। সেতুর ছাতক অংশে ২শ’ মিটার ও কোম্পানীগঞ্জ অংশে ৮শ’ মিটার এ্যাপ্রোচের কাজ হবে। ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এ সেতুটি ছাতকের বৃহত্তম সেতু। ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ কোটি টাকা। তিনি বলেন, মরা চেলা নদীতে আরেকটি ব্রিজ হবে। পাশে আরও একটি কালভার্ট নির্মাণ করে নোয়ারাই সড়কের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে।
গত ১৩ ডিসেম্বর সোনালী চেলা নদীর ওপর নির্মানাধীন সেতুটির কাজ পরিদর্শন করেছেন সাবেক চিফ ইঞ্জিনিয়ার খলিলুর রহমান, সিলেটের এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস, সুনামগঞ্জের এক্সইএন মাহবুব আলমসহ উর্ধতন কর্মকর্তাগন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন