বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হয়রানির শিকার হচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষ

রূপগঞ্জে বিরাজ করছে সোর্স আতঙ্ক

| প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খলিল শিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : রূপগঞ্জ থানা পুলিশের কতিপয় দারোগার বেপরোয়া গ্রেফতার বাণিজ্যে অতিষ্ঠ সাধারণ ও নিরীহ লোকজন। নগদ টাকার মালিক আর পূর্বের সাধারণ যে কোন অভিযোগ হোক তা মীমাংসিত। আবার  বয়সে তরুণ ধূমপায়ী, জমি-জমা, ব্যবসায়ীক কিংবা রাজনৈতিক বিরোধের জেরে অভিযুক্ত পরিবারের সদস্যদের মাদক দিয়ে ফাঁসানোর মতো নানা অভিযোগ রয়েছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের কতিপয় দারোগার বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক জনৈক (এএসআই) দীর্ঘদিন যাবৎ রূপগঞ্জ থানায় অবস্থান করায় স্থানীয় সোর্স ও মাদক স্পটের সাথে রয়েছে গোপন আঁতাত। ফলে তাদের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে মাসোহারা ও হপ্তা নামের মোটা অংকের টাকা। অন্যদিকে নিরীহদের আটক করে সোর্সদের কমিশন দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তার কাজকর্ম। প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের আড়াল করে যারা মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাদের মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা আদায় করে বলে রয়েছে অভিযোগ। দাপুটে দারোগা হিসেবে রয়েছে তার খ্যাতি। সূত্র জানায়, ছনি এলাকার পুলিশ সোর্স পরিচয়ে আহমাদ আলীর ছেলে মাদক ব্যবসায়ী ফারুক ওরফে হোন্ডা ফারুকের বেপরোয়া কর্মকা-ে অতিষ্ঠ স্থানীয় লোকজন। তার কমিশনের লোভে দেয়া ভুল তথ্যে ইছাপুরা বাজার এলাকার কাঁচা তরকারি বিক্রেতা আরমান মিয়াকে এএসআই আলআমিন মিয়াজী দিন দুপুরে তার দোকান থেকে আটক করে। পরে চোখ বেঁধে লাঠিপেটা করে শারীরিক নির্যাতন চালায়। এ সময় এএসআই মিয়াজীর পকেট থেকে ইয়াবা টেবলেট আরমানের পকেটে জোরপূর্বক প্রবেশ করায়। তাকে এর দায় স্বীকার করার জন্য চালায় শারীরিক নির্যাতন। স্বীকার না করলেও তাকে প্রস্তাব দেয়া হয় এক লাখ টাকা দিলে থানায় নিবে না। এ সময়ে তার পরিবারের লোকজন টাকার ব্যবস্থা  না করায় বাগবের বাজার এলাকায় একটি দোকান ঘরে ৩ ঘণ্টা আটকে রাখে। পরে  নানা অযুহাতে পুলিশ সোর্স ফারুকের মাধ্যমেই নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে যায় আরমান মিয়াকে। সূত্র আরো জানায়, ফারুকের অপর সহযোগী আশিকুল ইসলাম আশির মাধ্যমে ঐ এএসআই নিয়মিত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করছে মাসোহারা নামের চাঁদা। সে গুতিয়াব এলাকার মাদক ব্যবসায়ী আওলাদ, টেকনোয়াদ্দার ডেয়ারিং সুমন, গোয়ালপাড়ার সুমর, বাগের আগার নজরুল ইসলাম, ছনি এলাকার মমিন ও রবিন, ভোলানের আখতার, ভক্তবাড়ির মজিবুরসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর আস্তানায় নিয়মিত যাতায়াত করে। তবে তাদের মাদক ব্যবসা বন্ধ না হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে মিয়াজীর ঘুষ ও চাঁদা আদায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তবে তার বিরুদ্ধে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না। পুলিশের বিরুদ্ধে মুখ খুললে হত্যা মামলার আসামি হতে হয় এই ভয়ে মুখ খুলেন না বলে জানান তারা। সূত্র আরো জানায়, রূপগঞ্জ থানার দারোগা মনির স্থানীয় সাধারণ লোকজনকে হয়রানি করার অভিযোগে অত্র থানা থেকে বদলি হয়। তবে রহস্যজনক আবার পোস্টিং পায় এ থানায়। ফের আতঙ্কে কাটছে পূর্বে দারোগা মনিরের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হওয়া নিরীহ লোকজনের। ইছাপুরা বাজার এলাকার সিএনজি চালক রবিন মিয়া জানান, পুলিশ সোর্স ফারুকের দেয়া ভুল তথ্যে ছনি এলাকার মাছ ব্যবসায়ী সুমন মিয়াকে দারোগা মনির  প্রকাশ্যে মারধর করে। এ সময় তার কাছে কোন প্রকার অবৈধ মাল না পেয়েও আটক করে থানায় নিয়ে যায়।  পরে পরিবারের লোকজন থানায় গিয়ে আড়াই লাখ টাকার চুক্তিতে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। সে সময় নগদ ২ লাখ বিশ হাজার টাকা দিলেও বকেয়া ৩০ হাজার টাকা না দেয়ায় ফের তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের হুমকি দিচ্ছে দারোগা মনির ও তার সঙ্গীয় সোর্সরা। এবার মাদকের বড় চালানের সাথে জড়ানোর হুমকি দেয় তারা। এ ঘটনায় মাছ ব্যবসায়ী সুমন পুলিশের ভয়ে এলাকা ছেড়ে রাত্রি যাপন করেন বলে জানায় স্থানীয়রা। সূত্র আরো জানায়, পুলিশ সোর্স পরিচয়ে ছনি এলাকার ফারুক ও আশি, ভক্তবাড়ির নিজামদ্দিন ও রাসেল, জাঙ্গীর এলাকার মহসিন, মুশুরীর জয়, পুলিশের সাথে গোপন আঁতাত করে স্থানীয় জমি বিক্রেতা, সচ্ছল ব্যবসায়ী, নিরীহ পরিবারের লোকজন তথা যাদের উপর থেকে তদবির থাকে না, চেহারায় জীর্ণতা তবে ধূমপায়ীদের সনাক্ত করে পুলিশের কতিপয় সদস্যদের নির্ধারিত হারে কমিশন পাওয়ার শর্তে তথ্য দেয়। এসব তথ্যের ভিত্তিতে সুযোগ বুঝে হানা দেয় অসাধু দারোগা ও তার ফোর্স। সাদা পোশাকে কখনো ইউনিফর্ম ধারণ করে এসব অভিযানের সময় গাড়িতে অবস্থা নেয় সোর্সরা। ফলে অনেকটা প্রকাশ্যেই সোর্সরা চালায় তাদের অসাধুু বাণিজ্য। সূত্র আরো জানায়, দারোগা মনির, সহকারী দারোগা আলআমিন মিয়াজী গত তিন মাসে রূপগঞ্জ ইউনিয়নের  বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১৫ মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে মোটা অংকের টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়। এদিকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য দারোগা মনির ও সহকারী দারোগা আলআমিন মিয়াজী তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো মিথ্যে বলে দাবি করেন। ফারুক ও আশি পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন বলে জানায় তারা। এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, পুলিশ সোর্স মাধ্যমে কতিপয় পুলিশ সদস্য কোন অপরাধে জড়িয়ে নিরীহদের হয়রানি করে থাকলে অবশ্যই বিভাগীয় শাস্তি পাবেন তারা। এ সময় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে থানা হাজত থেকে কোন আসামি ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন