শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

জরাজীর্ণ ভবন ছেড়ে গাছতলায় ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা

বিজয় সরকার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের ভগ্নদশা

| প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আতিয়ার রহমান, নড়াইল থেকে : কবিয়াল বিজয় সরকার প্রতিষ্ঠিত ‘টাবরা নবকৃষ্ণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়’-এর শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে গাছতলায়। প্রায় দুই বছর আগে একতলা ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় রোদ, বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের গাছতলায় ক্লাস করতে হচ্ছে। এতে করে পড়ালেখার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। চারণকবি বিজয় সরকার ১৯৪২ সালে নড়াইল সদর উপজেলার টাবরা গ্রামে তার বাবার (নবকৃষ্ণ) নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে বিদ্যালয়টি প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক টাবরা গ্রামের শান্তিরাম বিশ্বাস (৭৫) বলেন, কবিয়াল বিজয় সরকার শুধু গানের মানুষই ছিলেন না। একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। অনেক প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও তার অদম্য উৎসাহ ও প্রাণের টানে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা স্বনামধন্য চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। এখন অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এবং সরকারের সুদৃষ্টির অভাবে বিদ্যালয়টির ভগ্নদশা। টাবরা নবকৃষ্ণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তন্ময় বিশ্বাস জানান, ১৯৯৫ সালের জুনে ভবনটিতে ক্লাস শুরুর ১০ বছরের মধ্যে তা জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। অপর সহকারী শিক্ষক বরুন কুমার বলেন, ভবনটির ভগ্নদশার কারণে গাছতলায় ক্লাস করাতে হয়। কর্তৃপক্ষকে বার বার বলেও কোনো সাড়া মেলেনি। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী চৈতী, হ্যাপি ও মুক্তা জানান, শ্রেণীকক্ষ সংকটের কারণে গাদাগাদি করে কখনো টিনের ঘরে, কখনো গাছতলায় ক্লাস করতে হয়। এছাড়া রাস্তা কাঁচা থাকায় অনেক কষ্ট করে বিদ্যালয়ে তাদের যাতায়াত করতে হয়। ছয় মাসের বেশি সময় কাদা-পানিতে ডুবে থাকা রাস্তায় মাঝে-মধ্যে পড়ে পোশাকসহ বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়। বিদ্যালয় থেকে বিজয় সরকারের বাড়ি তিন কিলোমিটার দূরত্ব হলেও বছরের অর্ধেক সময় নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। এ কারণে বিজয় সরকারের বাড়িটি দেখারও সৌভাগ্য হয় না শিক্ষার্থীদের। ষষ্ঠ শ্রেণীর আরমান বলেন, রাস্তা পাকা হলে সহজে বিদ্যালয়ে আসতে পারব। এতে লেখাপড়ার মানও বাড়বে। স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ে অবকাঠামো দুর্বল থাকায় এবং যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় দিন দিন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, ২০১৪ সালের প্রথমদিকে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর পাঠদানে খুব সমস্যা হচ্ছে। সংস্কারের জন্য ওই বছরের (২০১৪) ডিসেম্বরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। বিষয়টি নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে দুটি টিনের ঘরে পাঁচটি শ্রেণীকক্ষ রয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬৮। জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, বিজয় সরকারের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। এছাড়া বিজয় সরকারের বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তা পাকাকরণসহ তার প্রতিকৃতি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। প্রসঙ্গত, বার্ধক্যজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতে পরলোকগমন করেন বিজয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়। একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন তিনি। অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিভৃতপল্লী ডুমদি গ্রামেই কেটেছে কবির বেশিরভাগ সময়। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধের গানসহ ১৮ হাজারের বেশি গান লিখেছেন। শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। বিজয় সরকার তার সুরের মূর্ছনায় আজো বেঁচে আছেন হাজারো মানুষের হৃদয়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন