রেললাইনের দুইপাশে বসে ওষুধি জরি বটি থেকে শুরু করে কসমেটিক্স পণ্য, হরেক রকম পুরাতন কাপড়, জুতা-স্যান্ডেল থেকে শুরু করে ফলমূল, কি না পাওয়া যায় এই রেললাইনে। অথচ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই মক্কা হোটেল পাশের জায়গা। সৈয়দপুরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা।
নীলফামারীর সৈয়দপুর-পার্বতীপুর রেলপথের সৈয়দপুর অংশে এভাবে বড় রেল ঘুন্টি থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বসছে নিয়মিত নানা সওদার বাজার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই পুরাতন কাপড়ের বাজারে ভিড় করছে শত শত নারী-পুরুষ। এতে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বহুবার এ মার্কেট উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অজানা কারণে কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার তা আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
গত এক যুগ ধরে এ অবস্থা চলে আসছে সৈয়দপুরে। সব মিলিয়ে শহরের ১নং রেল ঘুমটি থেকে ২নং রেল ঘুমটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
সকাল থেকে রাত অবধি চলছে এসব দোকানপাট। এ পথে প্রতিদিনই আন্তঃনগর নীলসাগর ট্রেনসহ ১২টির মতো ট্রেন চলাচল করে থাকে। সৈয়দপুরে গেল এক বছরে ১০/১২ জন ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে এই উল্লিখিত স্থানে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। মাঝে মধ্যে রেললাইনের দু’পাড়ে লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান চলে। পরে আবার সেটি আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
গতকাল রোববার সরেজমিনে রেলপথের ওপরে ত্রিপাল কাপড় বিছিয়ে আবার কেউ স্ট্যান্ডে কাপড় ঝুলিয়ে হকারদের বিক্রি করতে দেখা গেছে। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ট্রেন আসার সময় আমাদের জানা আছে। তাই আসার আগেই সতর্ক হয়ে যাই। সব নিয়ে লাইনের সাইডে দাঁড়াই। এখানে বসা সব দোকানদারদের একই কথা। কথা হয় পুরনো কাপড় বিক্রেতা সিরাজের সঙ্গে। তিনি বলেন, দোকান ভাড়া নেয়ার সামর্থ্য নেই। তাই এখানে সকাল-বিকেল বসি। এর জন্যও তাঁকে চাঁদা দিতে হয় বলে জানান তিনি।
পুরাতন কাপড় বিক্রেতা জনি বলেন, রেললাইনের ওপর দোকান বসানো ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরও অনেকে দোকান করছেন। তাই আমিও করেছি। তিনি জানান, মূল বাজারে একটি দোকানের মাসের ভাড়া ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর এখানে দৈনিক ৫০ টাকা করে চাঁদা দিলে নিরাপদে ব্যবসা করা যায়। তবে কাদের চাঁদা দিতে হয় তা জানাননি তিনি।
ঝুঁকির কথা জানিয়ে এক ট্রেনচালক বাবু বলেন, বড় রেলঘুন্টির মক্কা হোটেলে পাশে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ট্রেন এখানে এলেই আমাদের সতর্ক হতে হয়। প্রচন্ড ভিড়ের কারণে বাধ্য হয়ে ট্রেনের গতি কমাতে হয়। এতে সময় নষ্ট হয়। রেলওয়ে আইনে রেলপথের দুইপাশে অন্তত ২০ ফুট করে জায়গা ফাঁকা রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু রেলের শহর সৈয়দপুরে এই নিয়ম মানতে নারাজ।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শওকত আলী বলেন, রেললাইনের অবৈধ বাজার উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়া হলেও, নানা জটিলতায় তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। বাজার উচ্ছেদ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বাজার থেকে চাঁদা তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি এর সঙ্গে জড়িত নন। কেউ চাঁদা তুলে থাকলে সেটা তার জানা নেই।
সৈয়দপুর রেলওয়ের পুলিশ সুপার সিদ্দিকী তাঞ্জিলুর রহমান জানান, খুব শিগগিরই ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাসহ রেলরাইনের দুইপাশের অবৈধ স্থাপনা আবারও উচ্ছেদ করা হবে। সৈয়দপুর রেলকেন্দ্রীক শহর তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। কারণ এই পথে নির্ধারিত ট্রেনের বাইরেও রেলওয়ে কারখানায় মেরামতের জন্য কোচ আনা-নেয়া করা হয়ে থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন